প্রশ্নঃ “সে নিজের প্রাণের জন্যে ভীত নয়, অন্য মানুষের প্রাণের জন্য ভীত।”- কার সম্পর্কে এবং কেন এমন বলা হয়েছে?

অথবা, “আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে নিস্তার পাওয়ার প্রয়াসে সে কি আত্মহত্যা করতে বসেছে?” উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

অথবা, “জীবন কি সত্যিই মৃত্যুর চেয়ে অধিকতর মূল্যবান?”- যুবক শিক্ষকের মনে এমন এ প্রশ্নের উদয় হয়েছিল কেন? 

উত্তরঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসের নিহত যুবতী নারীটির প্রতি কাদেরের নির্মমতা ইন্দ্রিয় পরায়ণতা ও সহানুভূতিহীনতা আরেফকে তার কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে সচেতন করে তােলে। কিন্তু পরিণাম নিয়ে ভাবার অবসর দেয়নি। কর্তব্যটি যতই ভীতিকর হােক না কেন, সেটি এড়াবার আর কোন পথ যুবক শিক্ষক আরেফ আলীর সামনে খােলা ছিল না।

নিহত নারীটির প্রতি কাদেরের এই নির্মমতা ইন্দ্রিয় পরায়ণতা ও সহানুভূতিহীনতা আরেফকে তার কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে সচেতন করে তােলে। ইচ্ছে করলেও এ থেকে সে পালিয়ে যেতে পারে না। তার মতে, মানুষের জীবন এত মূল্যহীন নয়। তাই নিজের সমূহ বিপদের সম্ভাবনার কথা জেনেই সে ঘটনাটি দাদাসাহেব ও পুলিশকে জানায়। সত্য প্রকাশের দায়িত্বভার এমনই প্রবল যে, কোনাে ভয় কিংবা পরিণামভীতি আরেফ আলীকে তার কর্তব্য থেকে বিরত করতে পারেনি। যুবক শিক্ষক এতদিন দাদাসাহেবকে যা বলতে পারেনি সেই নির্মম, অপ্রিয় অথচ অনিবার্য সত্যই দ্বিধাহীনভাবে ও প্রত্যয়দৃঢ় কণ্ঠে কাদের মিঞাকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জীবনবােধের গভীরতা থেকে অরেফ আলী প্রত্যয় অর্জন করেছিল। সে প্রত্যয় গড়ে উঠেছিল মুক্তি ও আদর্শের মাত্রাযােগে। তাই সে নিরাপদ আশ্রয়, নিরাপদ জীবন পেছনে ফেলে সত্য প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যায়। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও শুধু আপন কাম লালসা চরিতার্থ করার পর কাদের করিম মাঝির যুবতী স্ত্রীকে হত্যা করে। কাদের মিঞা চেয়েছিল ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, বড়বাড়ির সম্মান, তার ফাঁসির কথা বলে আরেফ আলীর মুখ বন্ধ করতে কিন্তু সে তা করতে ব্যর্থ হয়। কাদের তাকে হুমকি দেয় এই মামলায় আরেফ আলীর ফাঁসি হতে পারে।

উপন্যাসের পরিণতিতে দেখা যায়-আত্মীয়-স্বজন, ধর্ম-সমাজ ও আইনের রক্ষকদের বশীভূত ও হাত করে হত্যার সমস্ত দায়ভার সে চাপিয়ে দেয় হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী নিরীহ স্কুল শিক্ষক আরেফ আলীর ওপর। আরেফ আলীর কাছে মনে হয়েছিল জীবন মৃত্যুর চেয়ে মূল্যবান নয়- তার মৃত্যু বা ফাঁসি হতে পারে জেনেও সে কাদেরের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ করেছিল। সুতরাং যুবক শিক্ষক আরেফ আলী নিজের জীবনের জন্য ভীত ছিল না- ভীত ছিল সত্য প্রকাশ না করাতে এবং অন্য মানুষের জীবনকে মূল্য না দিতে। তাই সে শেষ পর্যন্ত সত্য প্রকাশ করে নিজেকে ফাঁসিকাষ্ঠে নিয়ে যেতেও ভয় পায়নি। যুবক শিক্ষক আরেফ আলী আসলে বিবেক দংশনে ভীত হয়ে, আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে রক্ষা পেতে নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।