প্রশ্নাঃ মাতলা মাঝি কে? তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অথবা,  সেলিনা হােসেনের ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ উপন্যাসে মাতলা মাঝি কে? 

উত্তরঃ সেলিনা হােসেনের ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ উপন্যাসে মাতলা মাঝি চণ্ডীপুরের সাঁওতালদের অবিসংবাদিত নেতা। তার পেছনে রয়েছে সাঁওতালদের ব্যাপক সমর্থন। তার ডাকে যে কোনাে সময় সব সাঁওতাল’ বেরিয়ে আসে।

মাতলা মাঝি চাপা স্বভাবের লােক। বয়ােজ্যেষ্ঠ। কালাে পেটানাে শরীর। সে কেবল প্রচণ্ড সাহসী নয়, জোতদারদের বিরুদ্ধে সেই সবচেয়ে সােচ্চার। মাতুলা চাষবাস করে। পাশাপাশি পার্টির কাজ। সে ভালাে বক্তৃতা করে। ঘরােয়া সভা করে। পায়ে গােদ হয়েছে। ব্যথায় কষ্ট পায়। হাঁটতে কষ্ট হয়। ভেষজ ওষুধ লাগায়। তবু পার্টির কাজের নেশায় সে আচ্ছন্ন। কর্মতৎপরতার গুণে সে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পায়। তার বাড়িতে একটা ক্যাম্প করা হয়। সেখানে ছেলেদের তীরধনুক ও বর্শা চালানাে শেখানাে, পুলিশি তৎপরতার মুখে নিজেদের বাঁচানাে, আত্মগােপনে থাকা ইত্যাদি শেখানাে হয়। তার তৎপরতায় কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। সাঁওতালদের মধ্যে আন্দোলনের প্রাণ সঞ্চার করে। সে তেভাগা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তার বিরুদ্ধেও হুলিয়া জারি হয়। পুলিশি নির্যাতন এবং কৌশলগত কারণে পিছিয়ে আসার বিষয়েও তার আছে জোরালো যুক্তিঃ

“আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি, আমরা পরাজিত হয়েছি, কিন্তু মাথা নিচু করেনি। আবার আমরা শক্তি সঞ্চয় করব, আবার আমরা লড়ব। মনে রেখাে, আমরা শােক করব না।”

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, গােটা নাচোলের ষাট ভাগেরও বেশি সাঁওতাল কৃষক। প্রথম তেভাগার বীজ ওদের মধ্যেই রােপিত হয়েছে। আর সেই সাঁওতালদের একত্রিত করেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে মাতলা সর্দার- ফলে তিনি সেই তেভাগা আন্দোলনের প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচিত।