ভূমিকাঃ রাজনৈতিক চিন্তাজগতে স্বতন্ত্র মতবাদের জন্য যেসকল দার্শনিক চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সেন্ট অগাষ্টিন। “The City of God” গ্রন্থের মধ্যে মধ্যে অগাষ্টিনের সামগ্রিক দর্শন চিন্তার নিখুঁত প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। তার এই গ্রন্থ মধ্যযুগের চিন্তাধারাকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে। তাই এই গ্রন্থের তাৎপর্য অপরিসীম।
“The City of God” গ্রন্থের তাৎপর্যঃ
(১) ঐক্যের প্রতীকঃ পঞ্চম শতাব্দীতে গির্জা ও বহুদেববাদী রাষ্ট্রের মধ্যে যে সংঘর্ষ দেখা দিয়েছিল তার অবসান সূচিত হয় “The City of God” এর মাধ্যমে। রাষ্ট্রকে গির্জার অধীনে এনে খৃষ্ট ধর্মের প্রাধান্য স্থাপনের কথা বলেন। মানুষ সৎ না হলে এবং ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় মনােভাবাপন্নকে রাষ্ট্রের ভিত্তি না করলে রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না।
(২) ধর্ম ও রাজনীতিঃ অগাস্টিন রাষ্ট্র ও খ্রিষ্টধর্মকে পাশাপাশি রেখেছেন। রাষ্ট্রের কাজ কেবল রাজনীতির ওপর গুরুত্ব দিলে ধর্মবােধ ও মূলবােধ উপেক্ষিত হবে এবং এর ফলে যেকোনাে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হবে “The City of God” এ অষ্টিন বলেছেন যে, ব্যক্তির চরিত্রে গঠন ও সমাজকে সুন্দর করতে হলে রাজনীতির চেয়ে ধর্ম ও মূল্যবােধ অধিকতর প্রয়ােজন।
(৩) রাষ্ট্রীয় শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনঃ রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব হলাে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা। রাষ্ট্র ও জনগণ খ্রিষ্টধর্ম থেকে বিচ্যুত হলে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে ধর্ম। এর পরে রাষ্ট্র শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করবে। ধর্মের বাধা না থাকলে মানুষ পাপাচারে নিমগ্ন হয়, বিশৃঙ্খল আচরণ করে।
(৪) দুই যুগের মধ্যে সেতুবন্ধনঃ অগাষ্টিন দুই যুগের মধ্যে অর্থাৎ প্রাচীন যুগ ও আধুনিক যুগের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন করেন। তিনি প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র থেকে আদর্শ কথাটি বাদ দিয়ে ধর্ম কথাটা বসিয়ে দেন। অগাস্টিনের রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়ায় ধর্মীয় বা খ্রিষ্টীয় বা গির্জা রাষ্ট্র। অগাষ্টিন মনে করেন, শান্তি ও ন্যায়বিচার হলাে যেকোনাে সাম্রাজের প্রকৃত ভিত্তি এবং এর জন্য অপরিহার্য ভগবান।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, “The City of God” এ ধর্মের প্রাধান্য লক্ষণীয়। অগাষ্টিন ধর্মকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন। “City of God” এর দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি, শৃঙ্খলা, একতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
Leave a comment