লেখকের যাত্রাপথ: ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনায় লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় রাজাভাতখাওয়া স্টেশন থেকে ট্রাকে চড়ে চা-বাগান, খানাখন্দে ভরা মাঠ, ডুয়ার্সের ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পৌঁছােন সান্তালবাড়িতে। সেখান থেকে বক্সা দু-মাইল চড়াই হাঁটা পথ। লেখক ওপরে উঠতে গিয়ে দেখেন যে, বক্সায় যেতে গেলে যে পাহাড়ে তাঁদের উঠতে হবে, সেই পাহাড়ি পথ জঙ্গলে ঢাকা। সেই পাহাড়ি পথে উঠতে উঠতে লেখকের হাঁফ ধরে যায়। নিস্তব্ধ পথে হঠাৎ একসময় ঝিরঝির শব্দ শুনতে পেয়ে লেখক বিস্মিত হয়ে ভাবেন যে, কাছেই নিশ্চয় কোনাে ঝরনা আছে। এতক্ষণ তিনি একবারও পাখির ডাক পর্যন্ত শুনতে পাননি। এই ঝরনার জল যেখান দিয়ে বয়ে গেছে তার ওপর তিনি একটি কাঠের সেতু দেখতে পেলেন। সেই সেতু পেরােনাের পরই লেখক দু-একটা কাঠের ঘর দেখতে পেলেন যা ছিল ওখানকার ডাকঘর, জলকল এবং বনবিভাগের দফতর। আরও খানিকটা এগিয়ে রাস্তাটা একটা তেমাথায় গিয়ে শেষ হল। এর মধ্যে একটি রাস্তা জয়ন্তী পাহাড়ের দিকে, দ্বিতীয় রাস্তাটি ভুটান পাহাড়ের গা বেয়ে সােজা তিব্বতের দিকে চলে গেছে। এই রাস্তাটি দিয়েই মাসখানেকের মধ্যে লাসায় যাওয়া যায়। তৃতীয় রাস্তাটি ঘাস ও কাকরে ভরা ছােটো একটা মাঠ অতিক্রম করে কাঁটাতারে ঘেরা বক্সা জেলখানার সীমানায় গিয়ে শেষ হয়েছে। মাঠ পেরিয়ে পাথরের সিঁড়ি ভেঙে অবশেষে লেখক পৌঁছােন বক্সা জেলখানার সদর দরজায়।