অথবা, সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদ কাকে বলে?
ভূমিকাঃ সৃষ্টিবাদ অনুসারে এমন এক সময় ছিল যখন জগতের কোন অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু স্রষ্টা কোন এক বিশেষ মুহূর্তে নিজ ইচ্ছাবলে এ জগৎ এবং এ জগতের মধ্যকার সব কিছু সৃষ্টি করেন। সাধারণত ধর্মতত্ত্ববিদ ও কিছুসংখ্যক দার্শনিক এ মতের সমর্থক। সৃষ্টিবাদ দু ধরনের। এগুলাে নিম্নরূপ–
(১) নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদঃ নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদ অনুসারে স্রষ্টা নিছক শূন্য থেকে এ জগৎ এবং এ জগতের মধ্যকার যাবতীয় প্রাণী ও অন্য সবকিছু কোন এক সময় স্বীয় ইচ্ছাবলে সৃষ্টি করেন।
(২) সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদঃ সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদ অনুযায়ী স্রষ্টা নিছক শূন্য থেকে এ জগৎ সৃষ্টি করেননি, স্রষ্টা কোন পূর্বস্থিত উপাদান দিয়ে এ জগৎ সৃষ্টি করেন। সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় জগতের উপাদানগুলাে বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। স্রষ্টা এতে শৃঙ্খলা এনে নিপুণ শিল্পীর মত এ জগৎ সৃষ্টি করেন।
বিবর্তনবাদঃ বিবর্তনবাদ জগতের উৎপত্তি ও বিকাশসম্পর্কিত একটি মতবাদ। এ মতবাদ অনুযায়ী, জগৎ ও অন্যান্য যাবতীয় প্রাণী ও বস্তু অভ্যন্তরীণ শক্তির সাহায্যে সহজ-সরল অবস্থা থেকে ক্রমপরিবর্তনের ধারায় বর্তমান জটিল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিবর্তনবাদীরা মনে করেন, জগতের বর্তমান অবস্থা বহু পরিবর্তনের ফলে সম্ভব হয়েছে। তবে এ পরিবর্তন হল সহজ থেকে জটিল, সদৃশ বা সমজাতীয় অবস্থা থেকে বিসদৃশ ও ভিন্নজাতীয় সুসংবদ্ধ অবস্থায় পরিবর্তন।
আজ আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি তা একসময় উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল। এতই উত্তপ্ত ছিল যে, প্রাণী বেঁচে থাকা ছিল অসম্ভব। এই উত্তপ্ত অবস্থা আস্তে আস্তে হ্রাস পাওয়ার ফলে পরিবেশ ক্রমশ অনুকূল হয়ে ওঠে এবং তাকে আবির্ভাব ঘটে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের এ প্রক্রিয়ায়ই উপযুক্ত আবহাওয়া, বায়ু ও পানি আবির্ভাবের ফলে ক্রমশ উদ্ভব ঘটে উদ্ভিদ ও বিভিন্ন জাতি-প্রজাতি।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, যে বিবর্তনপ্রক্রিয়ায় জগতের যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়, কনজারের মতে, তার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এ বৈশিষ্ট্য হল- ১. কালিক পরিবর্তন, ২. ক্রমিক শৃঙ্খলা, ৩. অভ্যন্তরীণ কারণ, ৪. সৃজনমূলক কারণ। হারবার্ট স্পেনসার তিনটি পর্যায়ের কথা বলেছেন; এগুলাে হল ঐক্যবিধান, পৃথকীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ।
Leave a comment