প্রশ্নঃ সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের মধ্যে পার্থক্য কী?

অথবা, সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের মধ্যে ৫টি পার্থক্য দেখাও।

ভূমিকাঃ জগৎ ও জীবনের রহস্য উন্মােচন করা এবং এদের যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাদানের প্রচেষ্টা মানব ইতিহাসের সর্বযুগে লক্ষণীয়। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে পাশ্চাত্য দর্শনের যে যাত্রা শুরু হয় তা এই সমস্যাকে কেন্দ্র করেই। এবং আজ পর্যন্ত সকল দার্শনিকই বিভিন্নভাবে জগতের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিভিন্ন মতামতের মধ্যে আমরা প্রধানত দুটি মতবাদ পাই। এ দু’টি মতবাদ হলাে- সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদ। নিচে আমরা এ দু’টি মতবাদ আলােচনা করব।

সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের পার্থক্যঃ সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদ দু’টি পরস্পর বিরুদ্ধ মতবাদ। সুতরাং এ দুই মতবাদের পার্থক্য থাকাই স্বাভাবিক। এদের মধ্যে আপাত দৃষ্টিতে যে পার্থক্য দেখা যায় তা হচ্ছে-

(১) সৃষ্টিতত্ত্ব বা সৃষ্টিবাদ অনুসারে কোনাে একটি শক্তি বা ঈশ্বর বিশেষ মুহূর্তে এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন। অভিব্যক্তিবাদ বা বিবর্তনবাদ অনুসারে, এ জগৎ কেউ সৃষ্টি করেননি, এ জগৎ ক্রমবিকাশের ফল।

(২) সৃষ্টিবাদ অনুসারে জগতের বর্তমানের সব বস্তু সেই আদিতে সৃষ্ট জগতের বস্তুর অনুরূপ, কিছুই বদলায়নি। পক্ষান্তরে, বিবর্তনবাদ অনুসারে জগতের প্রতিটি বস্তুই ক্রমবিকাশের ফল। ধীর পরিবর্তনের মাঝে বহুপর্যায় পেরিয়ে জগতের প্রত্যেকটি বস্তু বর্তমান রূপ পেয়েছে।

(৩) সৃষ্টিবাদ অনুসারে ঈশ্বর জগৎকে কোনাে এক বিশেষ মুহূর্তে সৃষ্টি করেছেন। বিবর্তনবাদ জগতের উৎপত্তিতে কোনাে বিশেষ মুহূর্তকে স্বীকার করে না। কেননা কোনাে বিশেষ মুহূর্তেই এ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে- এ কথার কোনাে যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।

(৪) জগৎ সাপেক্ষ বা নিরপেক্ষ কোনােভাবেই সৃষ্টি হতে পারে না। সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদ আল্লাহর সমান্তরাল শক্তিকে স্বীকার করে আর নিরপেক্ষ সষ্টিবাদ আল্লাহর পূর্ণতাকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করেন না। কাজেই উভয় মতবাদের মধ্যে বিরােধ আছে। অন্যদিকে, বিবর্তনবাদ সুষ্ঠু, বিরােধহীন এবং যুক্তিগ্রহ।

(৫) ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ সৃষ্টিবাদকে সমর্থন করে। পক্ষান্তরে বিজ্ঞান ও দর্শনে বিবর্তনবাদের অধিক সমর্থন রয়েছে।

(৬) সৃষ্টিবাদ অনুসারে জগতের সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক হলাে বাহ্যিক। পক্ষান্তরে বিবর্তনবাদ অনুসারে বিবর্তন হলাে জগতের ধর্ম। বিবর্তনের সাথে জগৎক্রিয়ার সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে আন্তঃসম্পর্ক।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বিবর্তনবাদই বুদ্ধিনির্ভর মতবাদ। তবে অনেকের মতে, সষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য যেমন রয়েছে, তেমনি সাদৃশ্যও আছে। তাদের মতে, বিবর্তনের ক্রমধারায় সষ্টির নব নব। স্তরে এক মহাসত্যের প্রেরণা না থাকলে বিবর্তন অর্থবহ হতে পারে না।