প্রশ্নঃ কাকে বলে? সুশাসনের ধারণা ও সংজ্ঞা দাও। 

ভূমিকাঃ ‘গভর্নেন্স’ (Governance) একটি বহুমাত্রিক ধারণা যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, ক্ষেত্র এবং প্রেক্ষাপট থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গভর্নেন্সকে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ‘শাসনের ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ‘গভর্নেন্স’ প্রপ্রঞ্চটির সাথে ‘সু’ প্রত্যয় যোগ করে ‘সুশাসন’ (Good Governance) শব্দটির প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। এর ফলে সুশাসনের অর্থ দাঁড়িয়েছে নির্ভুল, দক্ষ ও কার্যকরী শাসন। তবে সুশাসনকে একক কোনো ধারণার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত বা ব্যাখ্যা করা যায় না। কেননা ‘সুশাসনের ধারণাটি হলো বহুমাত্রিক। বিভিন্ন তাত্ত্বিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থা সুশাসন’ ধারণাটির (Concept) সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। ‘সুশাসন’ ধারণাটি বিশ্ব ব্যাংকের উদ্ভাবিত একটি ধারণা। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষায় সর্বপ্রথম ‘সুশাসন’ (Good Governance) প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। এতে উন্নয়নশীল দেশের অনুন্নয়ন চিহ্নিত করা হয় এবং বলা হয় যে, সুশাসনের অভাবেই এরূপ অনুন্নয়ন ঘটেছে।

সুশাসন (GOOD GOVERNANCE): ম্যাককরনী (Mac’ Corney) বলেছেন যে, ‘সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ককে বোঝায়।’ মোটকথা, প্রশাসনের যদি জবাবদিহিতা (Accountability), বৈধতা (Legilimacy), স্বচ্ছতা (Transparency) থাকে, এতে যদি অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে, বাকস্বাধীনতাসহ সকল রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুরক্ষার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন (Rule of law), আইনসভার নিকট শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা বা দায়িত্বশীলতার নীতি কার্যকর থাকে তাহলে সে শাসনকে ‘সুশাসন’ (Good Governance) বলে।

একটি আধুনিক ধারণা হিসেবে ‘সুশাসন’ প্রতিষ্ঠার পথে রয়েছে বেশ কিছু সমস্যা বা বাধা। তবে সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় এসব সমস্যার সমাধান করে বা বাধা পেরিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

শাসন ও সুশাসনের ধারণা ও সংজ্ঞা (Concept of Governance and Good Governance): পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র মানব সভ্যতার বিবর্তনের ফসল। যুগের পর যুগ ও বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে বিভিন্ন শক্তি ও উপাদানের সমন্বয়ে এসবের উদ্ভব ঘটেছে। এসব সংগঠন গড়ে উঠেছে মানব জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদানের জন্য। এ সকল সংগঠনের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য একসময় শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আদিতে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শাসন প্রবর্তনের মূল লক্ষ্য ছিল জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মনুসংহিতায় লক্ষ্য করা যায় যে, রাজা প্রজাদের নিকট থেকে উৎপন্ন ফসলের ছয় ভাগের এক ভাগ রাজস্ব আদায় করতো। এর বিনিময়ে রাজা প্রজাদের নিরাপত্তা বিধান করতো। প্লেটো, এরিস্টটল, ইবনে খালদুন প্রমুখ দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ বিশ্বাস করতেন যে, উত্তম জীবন গড়ে তোলার জন্যই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব’ (The State exists to Promote good life.। 

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটলে রাষ্ট্রের কার্যাবলি ও দায়-দায়িত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানাবিধ সমস্যা ও জটিলতা বৃদ্ধি পেলে তা নিরসনকল্পে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোতেও জনকল্যাণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হতে থাকে। বৃদ্ধি পেতে থাকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের (Welfare state) ধারণা। এরপর থেকে আধুনিক রাষ্ট্র ‘জনগণের বন্ধু, দার্শনিক ও পরিচালকে’ (Friend, Philosopher and Guide) পরিণত হয়। বর্তমানে জনকল্যাণই রাষ্ট্রের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত হয়। এজন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে সুশাসনের ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে তথ্যের সহজলভ্যতার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও দক্ষতা, সুশাসনের প্রয়োজনীয়তাকে আবশ্যকীয় করে তুলেছে।

বিশ্বব্যাংক ও UNDP-এর মতে, সুশাসনের মাধ্যমেই একটি রাষ্ট্রের নাগরিকগণ তাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষাসমূহকে প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে। এছাড়াও একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সে রাষ্ট্রে টেকসই উন্নয়ন সাধিত হয়। সব ধরনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্যও প্রয়োজন সুশাসন। এজন্যই ‘সুশাসন’ বিষয় সম্পর্কিত তাত্ত্বিক মিশেল ক্যামডেসাস (Michel Camdessus) বলেছেন যে, ‘রাষ্ট্রের সব ধরনের উন্নয়নের জন্য সুশাসন অত্যাবশ্যক’ (Good Governance is important for countries at all stages of development)। জাতিসংঘের আফ্রিকা অঞ্চলের বিশেষ উপদেষ্টা ইব্রাহিম গানবারি সুশাসনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে বলেছেন যে, ‘যে সমস্ত রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুধুমাত্র সে সমস্ত দেশেই ঋণ মওকুফ করা হবে’।

শাসন (Governance): Good Governance বা সুশাসন সম্পর্কে আলোচনার আগে জানা প্রয়োজন ‘শাসন’ বা শাসনের ব্যবস্থা’ বা ‘Governance’ বলতে কী বোঝায়। ‘গভর্নেন্স’ একটি বহুমাত্রিক ধারণা যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, ক্ষেত্র এবং প্রেক্ষাপট থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কারণে তাত্ত্বিকদের মধ্যে ‘গভর্নেন্স’ বিষয়ে সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রেও পার্থক্য লক্ষ করা যায়৷

‘গভর্নেন্সকে’ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শাসনের ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ল্যান্ডেল মিলস এবং সেরাজেল্ডিন (Landell Mills and Serageldin)-এর মতে, ‘জনগণ কীভাবে শাসিত হয়, কীভাবে রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি পরিচালিত হয়, কীভাবে দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয় এবং একই সাথে এ সকল প্রক্রিয়া কীভাবে লোকপ্রশাসন ও আইনের সাথে সম্পর্কিত সে বিষয়কেই ‘গভর্নেন্স’ বলে।

The Oxford English Dictionary-তে শাসনের প্রক্রিয়া, শাসনের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব, ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হিসেবে গভর্নেন্সকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

১৯৯৪ সালে বিশ্ব ব্যাংক প্রদত্ত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, ‘সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগের পদ্ধতিই হলো গভর্নেন্স।’

হালফ্যানি (Halfani) ও অন্যান্য গবেষকগণ সহমত পোষণ করে বলেন যে, ‘গভর্নেন্স হলো সরকারের এমন এক ব্যবস্থা যার লক্ষ্য কেন্দ্রীভূত থাকে রাষ্ট্র ও সিভিল সমাজের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক ও উন্মুক্ত যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং সে সাথে কার্যকরী ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, নির্বাচনি প্রক্রিয়া স্থাপন এবং প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল সরকারি কাঠামোকে ক্রিয়াশীলকরণ।’

অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান-এর মতে, “শাসন হলো এমন একটি ধারণা যেখানে কর্তৃপক্ষ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করে” (Governance is such a concept Ag authorities exercise for the organizational management to sustain development)।

ডি. কউফম্যান ও অন্যরা (D. Kaufmann & others) মনে করেন যে, যে প্রক্রিয়ায় শাসকবর্গ নির্বাচিত হন, জবাবদিহি করেন, নিরীক্ষিত ও পরিবর্তিত হন; সম্পদের ব্যবস্থাপনায় সরকারি দক্ষতা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্ধারিত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়াদিতে জনগণের অংশগ্রহণের মাত্রা বিবেচিত হয় তাকেই গভর্নেন্স বলে।

সুশাসন (Good Governance): ‘গভর্নেন্স’ প্রপঞ্চটির সাথে ‘সু’ প্রত্যয় যোগ করে ‘সুশাসন’ (Good Governance) শব্দটির প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। এর ফলে ‘গভর্নেস্’-এর নরমেটিভ উপাদানের প্রকাশ ঘটেছে। এর ফলে সুশাসনের অর্থ দাঁড়িয়েছে নির্ভুল, দক্ষ ও কার্যকরী শাসন। ২০০০ সালে বিশ্বব্যাংক প্রকাশ করে যে, সুষ্ঠু গভর্নেন্স বা সুশাসন চারটি প্রধান স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল। এ চারটি স্তম্ভ হলো- ১. দায়িত্বশীলতা ২. স্বচ্ছতা, ৩. আইনি কাঠামো ও ৫. অংশগ্রহণ।

সুশাসনকে একক কোনো ধারণার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত বা বিশ্লেষণ করা যায় না। কেননা সুশাসনের ধারণাটি হলো বহুমাত্রিক। বিভিন্ন তাত্ত্বিক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থা ‘সুশাসন’ ধারণাটির সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

তারা ‘সুশাসন’ ধারণাটি বিশ্বব্যাংকের উদ্ভাবিত একটি ধারণা। একটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বব্যাংক সর্বপ্রথম উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে ‘সুশাসন’ ধারণাটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় সর্বপ্রথম ‘সুশাসন’ প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। এতে উন্নয়নশীল দেশের অনুন্নয়ন চিহ্নিত করা হয় এবং বলা হয় যে, সুশাসনের অভাবেই এরূপ অনুন্নয়ন ঘটেছে। শুধু তাই নয়, সুশাসন নিশ্চিতকরণের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে তা’ পূরণের শর্তে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ঋণ সাহায্য ও প্রকল্প সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

সুশাসনের সংজ্ঞা (Definition of Good Governance): সুশাসনকে একক কোনো ধারণার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। কেননা সুশাসনের ধারণাটি বহুমাত্রিক। তবে এরপরও বিভিন্ন তাত্ত্বিক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থা ‘সুশাসন’ ধারণাটির সংজ্ঞা প্রদান করার চেষ্টা করেছেন। এগুলো নিম্নরূপঃ

বিশ্ব ব্যাংক (World bank)-এর মতে, “সুশাসন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়” (Good Governance is a manner in which power is exercised in the management of a country’s economic and social resources for development.)। 

পিয়েরে ল্যান্ডেল মিলস্ এবং ইসমাইল সেরাজেলডিন (Pierre Landell, Mills and Ismail Serageldin) তাদের লিখিত ‘Governance and the Eternal Factor’ নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে বলেছেন যে, “গভর্ন্যান্স বলতে বোঝায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার ব্যবহার যা একটি রাষ্ট্রকে পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে জনগণের সুষ্ঠু চাহিদা ও তাদের বৈধ অধিকার উপভোগের বাধ্যবাধকতা।”

অধ্যাপক ড. মহব্বত খান-এর মতে, “সুশাসন হলো একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পদের কার্যকরী ব্যবস্থা। তবে ব্যবস্থাটি হবে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায্য সমতাপূর্ণ।”

UNDP-এর মতে, “একটি দেশের সার্বিক স্তরের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের চর্চার বা প্রয়োগের পদ্ধতিই হলো সুশাসন” (Good Governance is the exercise of economic, Political and administrative authority to manage a country’s affairs at all levels.)। 

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান (Kofi Annan) বলেছেন, “সুশাসন মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, জনপ্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং সক্ষমতাকে প্রবর্তন করে।

ভি. কে. চোপড়া (V. K. Chopra) বলেন, “সুশাসন হলো শাসনের একটি পদ্ধতি যা সমাজের মৌলিক মূল্যবোধগুলো দ্ব্যর্থহীনভাবে চিহ্নিত করতে সমর্থ, সেখানে মূল্যবোধগুলো হচ্ছে মানবাধিকারসহ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক- সাংস্কৃতিক বিষয়ক এবং একটি দায়বদ্ধ ও সৎ প্রশাসনের মাধ্যমে এই মূল্যবোধগুলো অন্বেষণ করা” (Good governance is a system of governance that is able to Unambiguously identify the basic values of the society where values are economic, political and socio-culture issues including human rights and pursue these values through and accountable and honest administration.)। 

জি. বিলনে (G. Bilney)-এর মতে, “Good Governance is the effective management of a country’s Social and economic resources in a manner that is open, transparent, accountable and equitable)। 

মারটিন মিনোগের মতে, “বৃহৎ অর্থে সুশাসন হচ্ছে কতিপয় উদ্যোগের সমাহার ও একটি সংস্কার কৌশল যা সরকারকে আরো বেশি গণতান্ত্রিক, মুক্তমনা, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য সুশীল সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করে তোলে।”

The Social Encyclopaedia তে ‘সুশাসন’ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, “এটি সরকার পরিচালনা অপেক্ষা একটি বিস্তৃত ধারণা যা একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহারের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।” (It is a broader concept than Government, which is specially concerned with the role of Political authorities in maintaining social order within a defined territory and the exercise of executive power)। 

চাই ‘সুশাসন’ সম্পর্কে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন ম্যাককরনী (MacCorney)। তার মতে সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ককে বোঝায়’ (Good governance is the relationship between civil society and the state, between government an governed, the ruler and ruled)।

উপসংহারঃ সবশেষে বলা যায় যে; প্রশাসনের যদি জবাবদিহিতা (Accountability), বৈধতা (Legitimacy), স্বচ্ছতা (Transparency) থাকে, এতে যদি অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে, বাক স্বাধীনতাসহ সকল রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুরক্ষার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন, আইনসভার নিকট শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা থাকে তাহলে সে শাসনকে ‘সুশাসন’ বলে।