সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণ:
মধ্যযুগের মুসলিম ইতিহাসকারদের বিবরণ অনুযায়ী মামুদ ছিলেন ইসলামধর্মের বীর নায়ক। উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই তুর্কি গজনিকে মধ্য-এশিয়ায় একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করেন এবং অ-মুসলমান তুর্কি-উপজাতির বিধ্বংসী আক্রমণের হাত থেকে মুসলমান সমাজকে রক্ষা করেন। মামুদ তাঁর মুদ্রায় ‘আমির’ শব্দটি ব্যবহার করতেন। খলিফার কর্তৃত্বকে তিনি অশ্রদ্ধা বা অস্বীকার করেননি, যদিও তাঁর চালচলন ছিল একান্তভাবেই একজন স্বাধীন শাসকের মতো। তাই খলিফার প্রতিনিধি (আমির-উল্ উমারা) মামুদ সমকালীন লেখকদের কলমে ‘সুলতান’বলেই অভিহিত হয়েছেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসকের স্বীকৃতি হিসেবে খলিফা আল্-কাদির-বিল্লাহ তাঁকে ইয়ামিনউদ্দৌলাহ ও আমিন-উল-মিল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেন। সেইজন্য গজনির সুলতানি বংশ ‘ইয়ামিনি বংশ’ নামেও অভিহিত হয়।
কথিত আছে, সুলতান মামুদ খলিফার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন যে, ভারতের হিন্দু তথা বিধর্মী পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবছর অভিযান চালাবেন। এর সত্যতা যাই হোক্, মামুদ যে বারবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযানের মোট সংখ্যা সম্পর্কে কিছুটা মতভেদ আছে। তবে স্যার হেনরি এলিয়ট (H. Elliot) তাঁর ‘History of India as told by its own Historian’ গ্রন্থে (Vol-II, page 434-78) মামুদ কর্তৃক সতেরোবার ভারত আক্রমণের কথা লিখেছেন, যা অধিকাংশ পণ্ডিত গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। ভারতের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণেই মামুদের কোনো দীর্ঘ বা স্থায়ী পরিকল্পনা ছিল না। পর্যায়ক্রমে তিনি একবার ভারতের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়েছেন, এবং ভারতীয় শক্তিকে বিধ্বস্ত করে কিছু ধনসম্পদ সংগ্রহ করে পরমুহূর্তেই ছুটে গেছেন মধ্য-এশিয়ায় কোনো শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল মধ্য-এশীয় রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হওয়া। কারণ তাঁর বিচারে আফগানিস্তানের রাজনীতির উত্থানপতনের সাথে ভারতের তুলনায় মধ্য-এশিয়ার যোগ ছিল বেশি। আর সেই লক্ষ্যপূরণের জন্য আবশ্যিক ছিল একটি অতি সমৃদ্ধ রাজকোষ। আফগানিস্তানের অনুর্বর ভূমি তা প্রদান করতে অক্ষম ছিল। চিন ও ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য থেকেও তাঁর ভালো অর্থাগম হত, কিন্তু গজনির রাজকোষকে সচল ও সক্ষম রাখার দ্বিতীয় উৎস হিসেবে তিনি পাঞ্জাবের উর্বর ভূমি এবং ভারতের মন্দির ও নগরের ঐশ্বর্য সম্পদকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
ভারতের বিরুদ্ধে সুলতান মামুদের সামরিক অভিযানগুলি সম্পন্ন হয়েছিল ১০০০-১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। সমকালীন মুসলিম লেখকের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে মামুদের আক্রমণের প্ররোচনা সৃষ্টি করেছিল সীমান্তবর্তী শাহিরাজ্যের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ। হিন্দু শাহিরাজা জয়পাল ইতিপূর্বে গজনির বিরুদ্ধে যে হামলা করেছিলেন, মামুদের বিচারে তা ছিল গজনির অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক এবং অপমানজনক। ১০০০ খ্রিস্টাব্দে আক্রমণ চালিয়ে মামুদ সীমান্তবর্তী কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেন। পরের বছরেই (১০০১ খ্রিঃ) দশ হাজার দক্ষ অশ্বারোহী সৈন্য ও আনুষঙ্গিক-সহ জয়পালের রাজ্য আক্রমণ করেন। পেশোয়ারের সন্নিকটে এক যুদ্ধে জয়পাল পরাজিত ও বন্দি হন এবং মুক্তিপণ হিসেবে প্রচুর অর্থ, হাতি এবং রাজ্যের কিয়দংশ মামুদকে প্রদান করতে বাধ্য হন। কিন্তু এই অপমানের গ্লানিতে দগ্ধ জয়পাল অচিরেই আত্মহত্যা করেন। শাহিরাজ্যের দায়িত্ব পড়ে পুত্র আনন্দপালের হাতে। ১০০৪-১০০৫ খ্রিস্টাব্দে মামুদ তৃতীয় অভিযান দ্বারা ঝিলাম নদীর বামতীরবর্তী ‘ভীরা’ নগরী গজনির অন্তর্ভুক্ত করে নেন। ১০০৬ খ্রিস্টাব্দে মামুদের পরবর্তী অভিযান পরিচালিত হয় মুলতান রাজ্যের বিরুদ্ধে। মুলতানের শাসক আবুল-ফত্-দাউদ ছিলেন কার্মাথিয়াম গোষ্ঠীভুক্ত গোঁড়া শিয়া মুসলমান। সুন্নি মতবাদে বিশ্বাসী মামুদ দাউদের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রথম বাধা পান দাউদের মিত্র শাহিরাজা আনন্দপালের কাছে। কিন্তু আনন্দপাল পরাজিত হন। ভীত দাউদ আত্মসমর্পণ করেন, জয়পালের পৌত্র এবং ধর্মান্তরিত সুখপালের (সেবক পাল) হাতে মুলতানের শাসনভার দিয়ে মামুদ গজনিতে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সুখপাল ইসলামধর্ম ত্যাগ করে মামুদের কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন। ফলে ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে মামুদ পুনরায় মুলতানে স্বসৈন্যে উপস্থিত হয়ে সুখপাল ও দাউদকে বন্দি করেন এবং মুলতানকে সরাসরি গজনির অন্তর্ভুক্ত করে নেন।
হিন্দু শাহিরাজ্যের সাথে সুলতান মামুদের একটা চূড়ান্ত বোঝাপড়া ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি। দাউদকে সঙ্গ দেবার জন্য আনন্দপাল যেমন মামুদের ক্ষোভের সঞ্চার করেন, মামুদও তেমনি সুখপালকে বন্দি করে আনন্দপালকে ক্ষুব্ধ করেন। তা ছাড়া মামুদ জানতেন, পাঞ্জাবকে পদানত করতে না পারলে ভারতের সম্পদের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না। মামুদের এই মনোভাব সম্পর্কে আনন্দপালও অবহিত ছিলেন। তাই তিনিও উত্তর ভারতের নৃপতিদের একত্রিত করে সুলতান মামুদের বিরুদ্ধে এক শক্তিসংঘ গড়ে তোলেন। ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে মামুদ আনন্দপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা শুরু করেন। গোয়ালিয়র, কালিঞ্জর, কনৌজ, দিল্লি, আজমির, উজ্জয়িনী প্রভৃতির নৃপতিরা আনন্দপালের সাহায্যে অগ্রসর হন। কিন্তু কিছুটা ভাগ্যবিপর্যয় এবং কিছুটা নেতৃত্বের অভাবহেতু ওয়েইহিন্দের যুদ্ধে ভারতীয় শক্তিসংঘ তুর্কিদের হাতে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় (১০০৮-১০০৯ খ্রিঃ)। অতঃপর তুর্কিবাহিনী কাংড়ার নিকটবর্তী নগরকোট দুর্গ দখল করে প্রভূত ধনসম্পদের অধিকারী হয়। মামুদের সভালেখক উতবি এবং ফেরিস্তার বিবরণ থেকে জানা যায় যে, মামুদ এখানে যে বিশাল পরিমাণ স্বর্ণ-মোহর এবং সোনা-রূপা লুণ্ঠন করেছিলেন, তা সাধারণ মানুষের কল্পনার অতীত। মুসলমান সৈন্যরাও ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর ধনরত্ন সংগ্রহ করেছিল। ফলে মামুদের অর্থলিপ্সা যেমন বেড়েছিল, তেমনি তাঁর সৈন্যরাও নতুন উদ্যমে ভারতের অভ্যন্তরে অভিযান চালাতে প্রেরণা পেয়েছিল।
আনন্দপাল অতঃপর ‘নন্দনা’তে (লবণ পর্বতশ্রেণির উত্তরে) আশ্রয় নিয়ে পুনরায় শক্তিসঞ্চয়ের চেষ্টা করেন। তবে কার্যকরী কিছু করার আগেই তিনি মারা যান। তাঁর পুত্র ত্রিলোচনপাল মামুদকে বাধা দেবার জন্য নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে মামুদ ত্রিলোচনকে পরাজিত করে নন্দনা দখল করে নেন। ত্রিলোচনপাল প্রথমে কাশ্মীরে আশ্রয় নেন, পরে পাঞ্জাবের পূর্বে শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলে প্রত্যাবর্তন করে নতুনভাবে শক্তিসঞ্চয়ের চেষ্টা করেন। বুন্দেলখণ্ডের চান্দেল্ল-বংশীয় বিদ্যাধরের সাথে মামুদের বিরুদ্ধে তিনি এক জোট গড়ে তোলেন। কিন্তু এবারেও মামুদ আক্রমণ চালিয়ে (১০১৯ খ্রিঃ) এই জোট ভেঙে দেন। ত্রিলোচনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ভীমপালও তুর্কি প্রতিরোধের ব্যর্থ আশা পোষণ করে আজমিরে আশ্রয় নেন। ১০২৬ খ্রিস্টাব্দে ভীমের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মামুদের বিরুদ্ধে শাহিরাজ্যের প্রতিরোধের শেষ আশা মুছে যায়। ইতিমধ্যে মামুদও পাঞ্জাব গজনির অন্তর্ভুক্ত করে নেন। ব্যর্থ হলেও তুর্কি আক্রমণের বিরুদ্ধে হিন্দু- শাহিরাজ্যের ধারাবাহিক প্রতিরোধ তাঁদের স্বদেশপ্রেম ও বীরত্বের পরিচায়ক। আরবদেশীয় লেখক এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলবেরুণী হিন্দু-শাহিবংশের প্রশংসা করে লিখেছেন : “তারা ছিলেন সুমহান ঐতিহ্যের ধারক। সমস্ত প্রাচুর্য্যের মধ্যেও সৎ ও ন্যায়কার্য সম্পাদনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁদের কখনো শিথিল হয়নি।”
হিন্দু-শাহিবংশের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর পাশাপাশি মামুদ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রচুর ধনসম্পদ সংগ্রহ করে নেন। ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে মামুদ নারায়ণপুর (বর্তমান আলোয়ার জেলা) দখল করেন। সেখানকার হিন্দুরাজা মামুদের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। এর ফলে ভারত ও খোরাসানের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে নন্দনা দখল করার পর মামুদ থানেশ্বরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। চক্রস্বামীর বিশাল মন্দিরে সঞ্চিত ধনরত্নের কথা মামুদের অজানা ছিল না। থানেশ্বরের পথে জনৈক হিন্দুরাজা মামুদকে বাধাদানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মামুদ অতঃপর চক্রস্বামীর মন্দির দখল করে প্রচুর ধনরত্ন লুণ্ঠন করেন।
১০১৫ এবং ১০২১ খ্রিস্টাব্দে মামুদ কাশ্মীর দখলের দুটি ব্যর্থ চেষ্টা করেন। সম্ভবত, শাহিবংশীয় রাজাকে আশ্রয়দানের জন্যই কাশ্মীর মামুদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল। ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ভারতের রাষ্ট্রকর্তৃত্বের কেন্দ্রভূমি কনৌজের উদ্দেশ্যে মামুদ গজনি থেকে রওনা হন। মথুরায় উপস্থিত হয়ে তিনি সেখানকার স্থাপত্যকর্মে সমৃদ্ধ হিন্দু মন্দিরগুলি ধ্বংস করেন এবং মন্দিরে রক্ষিত অর্থ লুণ্ঠন করেন। অকারণে শিল্পসমৃদ্ধ মন্দিরাদি ধ্বংস করে মামুদ গোঁড়ামি ও মধ্যযুগীয় বর্বরতার পরিচয় দেন। ১০১৯ খ্রিস্টাব্দের গোড়ায় তিনি উপস্থিত হন কনৌজে। মথুরার মতো কনৌজেও তিনি পৈশাচিক উল্লাসের মাঝে সমস্ত মন্দির ও তীর্থস্থান ধ্বংসের নির্দেশ দেন। কনৌজের রাজা রাজ্যপাল বিনাপ্রতিরোধে মামুদের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। রাজ্যপালের কাপুরুষতায় ক্ষুব্ধ হয়ে বুন্দেলখণ্ডের চান্দেল্ল রাজা বিদ্যাধর রাজ্যপালকে হত্যা করেন। মামুদ এতে অপমানিত বোধ করেন এবং বিদ্যাধরের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। এ ছাড়া হিন্দু শাহিরাজ্যের সাথে বুন্দেলখণ্ডের মৈত্রীজোটও মামুদকে ক্ষুব্ধ করেছিল। যাই হোক্, বিদ্যাধর আত্মগোপন করে এ যাত্রা রক্ষা পেয়ে যান। ১০২০ খ্রিস্টাব্দে মামুদ পুনরায় কালিঞ্জর আক্রমণ করেন এবং বিদ্যাধরের বশ্যতা ও প্রচুর ধনরত্ন লাভ করেন।
ভারতের বিরুদ্ধে মামুদের দুঃসাহসিক অভিযানগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল গুজরাটের সোমনাথের বিরুদ্ধে আক্রমণ। ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে মুলতান থেকে রাজপুতানা হয়ে মামুদের বাহিনী সোমনাথের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়। সোমনাথ শহরের ধর্মপ্রাণ অধিবাসীদের ধারণা ছিল সর্বশক্তিমান সোমনাথেশ্বর তাদেররক্ষা করবেন। কিন্তু মামুদ বিনাবাধায় সোমনাথে প্রবেশ করেন এবং মন্দির লুণ্ঠন করেন। (১০২৬ খ্রিঃ) তাঁর নির্দেশে দেবমূর্তিটিকে খণ্ড খণ্ড করে গজনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। মন্দিরের পুরোহিত-সহ প্রায় ৫০ হাজার হিন্দু তুর্কিদের অস্ত্রাঘাতে নিহত হন। প্রভূত ধনরত্ব-সহ সুলতান মামুদ গজনিতে ফিরে যান।
ভারতের বিরুদ্ধে মামুদের শেষ অভিযান ছিল সিন্ধুর জাঠেদের বিরুদ্ধে। সোমনাথের মন্দির লুণ্ঠন করে স্বরাজ্যে প্রত্যাবর্তনের সময় জাঠরা কচ্ছ অঞ্চলে তুর্কিবাহিনীকে নানাভাবে বিব্রত করেছিল। তাদের সমুচিত শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে সুলতান মামুদ পরবৎসর জাঠদের আক্রমণ করে পরাজিত করেন (১০২৭ খ্রিঃ)। অতঃপর তিনি স্বদেশে ফিরে গিয়ে মধ্য-এশিয়ার রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকেন। ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
সুলতান মামুদের অভিযানের প্রকৃতি ও গুরুত্ব :
গজনির সুলতান মামুদ ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে টানা ২৭ বছর ভারতবর্ষের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। বিচ্ছিন্নভাবে বিচার করলে তাঁর প্রতিটি আক্রমণের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য আবিষ্কার করা সম্ভব। এই সকল আক্রমণের ফলে আক্রান্ত রাজ্য ও জনগোষ্ঠীর ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াও ছিল জোরালো। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তাঁর ভারত-বিরোধী অভিযানগুলির কোনো সুদুরপ্রসারী বা গঠনমূলক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। ভারতের বিরুদ্ধে তিনি অভিযান পাঠিয়েছেন মোট ১৭ বার এবং প্রতিবারই তিনি জয়লাভ করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত প্রায় নেই-ই, যখন একজন মধ্যযুগীয় শাসক কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে একনাগাড়ে এতগুলি অভিযান পাঠিয়েছেন, অথচ লক্ষ্যে এবং ফলের দিক থেকে প্রতিটি অভিযানই ছিল স্বতন্ত্র। তখন ভারতে কোনো কেন্দ্রীয় শক্তি ছিল না। এককভাবে কোনো আঞ্চলিক ভারতীয় রাজ্য শক্তিতে সুলতান মামুদের সমকক্ষও ছিল না। আবার তাদের মধ্যে স্বার্থদ্বন্দ্ব এত প্রবল ছিল যে, বহিরাগত শত্রুর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করাও সম্ভব হয়নি। এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সুলতান মামুদ দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সতেরোটি অভিযান চালিয়ে কেবলমাত্র পাঞ্জাব ও মুলতানকে তাঁর রাজ্যভুক্ত করতে পেরেছিলেন। এমনকি এই দুটি ভারতীয় অঞ্চল দখল করার পেছনে তাঁর কোনো গুরুতর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। পাঞ্জাব ছিল ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশদ্বার। তাই উল্লিখিত অঞ্চল দখল করে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশের পথ তিনি নিরুপদ্রব করতে চেয়েছিলেন মাত্র।
ড. রোমিলা থাপার মনে করেন, মামুদের ভারত-আক্রমণের লক্ষ্য ছিল এদেশের অপরিমেয় ঐশ্বর্য এবং পাঞ্জাবের উর্বরা সমভূমি অঞ্চল। ভারত-ভূমিতে রাজনৈতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য দ্বারা মামুদ পরিচালিত হননি। কারণ ভারতের থেকে মধ্য-এশিয়ার রাজনীতির প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি। তাঁর রাজ্য গজনির রাজনীতির সাথে মধ্য-এশিয়ার যোগ ছিল অনেক বেশি। ড. থাপার লিখেছেন : “মামুদ ভারত-আক্রমণ সম্পর্কে কোনো দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করেননি। চিন ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের লাভজনক বাণিজ্য থেকে তাঁর আয় হত প্রচুর। তাই ভারতে রাজত্ব করার চেয়ে মধ্য-এশিয়ায় রাজত্ব করাই মামুদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় ছিল।” অধ্যাপক সতীশচন্দ্রও মনে করেন, সুলতান মামুদের ভারত-আক্রমণের সূচনাপর্ব অর্থাৎ হিন্দু-শাহিরাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানের লক্ষ্য ছিল সীমান্তবর্তী শত্রু রাজ্যের ধ্বংস করা এবং ভারতের সমৃদ্ধ অঞ্চলের প্রবেশের ছাড়পত্র অর্জন করা। অর্থাৎ তাঁর প্রাথমিক আক্রমণের পশ্চাতে ছিল পরবর্তী আক্রমণ শানানোর পথ তৈরি করার লক্ষ্য। তাই দেখা যায়, ১০১০ থেকে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল মথুরা, থানেশ্বর, কনৌজ ও সোমনাথ প্রভৃতি অর্থাৎ যেখানকার মন্দিরগুলি ধনসম্পদের জন্য বিখ্যাত ছিল। এইসব স্থান দখল করার পরেই নির্বিচারে লুণ্ঠন চালিয়ে তিনি দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। ভারতে সংগৃহীত ঐশ্বর্য দ্বারা তিনি শক্তি সংগ্রহ করে লিপ্ত হয়েছেন মধ্য-এশিয়ার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। বিজিত স্থানে নিজস্ব প্রতিনিধি বসিয়ে বা অধিকার বজায় রেখে শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টাই তিনি করেননি। এই কারণে ঐতিহাসিক স্মিথও (V. A. Smith) সুলতান মামুদকে ‘নিছক লুণ্ঠনকারী দস্যু’ (A bandit operating on a large scale) বলে অভিহিত করেছেন। ভারতের ভূমিখণ্ড নয়, ভারতের ধনসম্পদ লুণ্ঠনই ছিল তাঁর সপ্তদশ অভিযানের মূল লক্ষ্য। মামুদের মধ্য-এশীয় নীতি ব্যাখ্যা করলে তাঁর লুণ্ঠনস্পৃহার প্রমাণ পাওয়া যায়। দেখা গেছে, ভারত অভিযানের প্রায় সাথে সাথে তিনি ‘সিস্তান’, ‘খোরাসান’, ‘ঘুর’ প্রভৃতি মধ্য-এশীয় রাজ্যগুলি আক্রমণ করে সেখানে স্থায়ী সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে লুটপাট করেই ফিরে গেছেন স্বদেশে। তাই বলা চলে, ভারতের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন লুণ্ঠনকারী, কিন্তু মধ্য-এশিয়ায় তাঁর ভূমিকা ছিল সংগঠকের।
মামুদের ভারত-আক্রমণের প্রকৃতি হিসেবে ‘লুণ্ঠনতত্ত্ব স্বীকার করে নিলেও বিতর্ক দেখা দেয় তাঁর ধর্মীয় চরিত্র প্রসঙ্গে। অর্থাৎ মামুদ কেবল রাজনৈতিক প্রয়োজনে অর্থসংগ্রহের জন্য ভারত-আক্রমণ করেছিলেন, নাকি লুণ্ঠনের সাথে সাথে ধর্মপ্রচারের প্রেরণাও তাঁকে ভারত-আক্রমণে প্ররোচিত করেছিল? মামুদের সভা-ঐতিহাসিক উতবি (Uibi) প্রচার করেন যে, গভীর ধর্মবোধ এবং অবিশ্বাসীদের মধ্যে তাকে প্রচার করার মহৎ উদ্দেশ্য দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সুলতান মামুদ ভারত আক্রমণে অগ্রসর হয়েছিলেন। তারিখ-ই-ইয়ামিনি গ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন : “Sultan Mahmud at first designed in his heart to go to Sijistan, but subsequently preferred to engage previously in a holy war against Hind.” উতবির এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মামুদের ভারত অভিযানকে একটা ধর্মীয় চরিত্র প্রদান করেছেন। একথা ঠিক, মামুদ বেছে বেছে হিন্দু-মন্দিরগুলিকে আক্রমণ করেছেন। লুণ্ঠনের সঙ্গে সঙ্গে দেবদেবীর মূর্তিগুলিকেও কলুষিত করেছেন। বহু বন্দি ইসলামধর্ম গ্রহণের বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছে। যুদ্ধরত সেনাদের মনোবল ও যুদ্ধস্পৃহা বৃদ্ধির জন্য তিনি তাদের মধ্যে ‘গাজি’হবার টোপ দিয়েছেন। ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপ্রসাদও মনে করেন, লুণ্ঠন ও ধর্ম যুগপৎ মামুদের ভারত আক্রমণের প্রেরণা হিসেবে বর্তমান ছিল। তিনি লিখেছেন : “রাজ্য নয়, সম্পদ ; বিজয় নয়, পৌত্তলিকদের ধ্বংসসাধন করাই ছিল তাঁর (মামুদের) ভারত আক্রমণের লক্ষ্য” (Wealth and not territory, the extipation of idolatory and not conquest, were the objects of his raids.”)
কিন্তু অধ্যাপক মহম্মদ হাবিব উল্লিখিত বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারেননি। তাঁর মতে, মামুদের মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না। তাঁর ভারত আক্রমণের পশ্চাতে ধর্মীয় প্রেরণা ছিল না, ছিল ধ্বংসের উন্মাদনা। হাবিবের ভাষায় : ” Mahmud was not a fanatic and his expeditions against India were not motivated by religion but by love of plunder.” একথা হয়তো সত্য যে, ভারতে আগত মুসলিম-আক্রমণকারীদের তুলনায় মামুদ ধর্মের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় ছিলেন। বহুক্ষেত্রেই অর্থপ্রদানের বিনিময়ে হিন্দুদের তিনি মুক্তি দিয়েছেন। তাঁর রাজ্য গজনিতেও হিন্দুদের প্রতি নমনীয় ব্যবহার করা হত। এমনকি অর্থলাভের সম্ভাবনা থাকলে তিনি নিজ ধর্মক্ষেত্র বাগদাদকেও বিধ্বস্ত করতে দ্বিধা করতেন না বলে অনেকে মনে করেন।
হ্যাভেল (Havell) লিখেছেন : “He would have sacked Bagdad with a little compunction as he plundered Somnath, if the undertaking had seemed as profitable.” আপন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং তার মহিমা প্রচার করার কোনো লক্ষ্য হয়তো মামুদের ছিল না; তবে মথুরা, সোমনাথ প্রভৃতি দেবস্থান ও দেবমূর্তির প্রতি তিনি যে নগ্ন আচরণ করেছেন, তাতে তাঁকে ‘গোঁড়া ও পরধর্মদ্বেষী’ বলা চলে। মহম্মদ হাবিবও তাঁর এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এই কাজকে ইসলামের মূল আদর্শের পরিপন্থী’ বলেও বর্ণনা করেছেন।
যাই হোক্, মামুদের ভারত আক্রমণের পশ্চাতে রাজ্যস্থাপন বা ধর্মপ্রচার—কোনো ইচ্ছাই তদর্থে বর্তমান ছিল না, একথা বলা চলে। এ প্রসঙ্গে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মন্তব্যটি খুবই যথার্থ এবং মামুদের আক্রমণের চরিত্র বিশ্লেষণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লিখেছেন : “মিশনারি উদ্দেশ্য নিয়ে ধর্মপ্রচার বা সাম্রাজ্যের সংগঠক হিসেবে মামুদ ভারতে আসেননি। তাঁর অভিযানগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ধনসম্পদ লুণ্ঠন এবং এদেশীয় রক্ষকদের ধ্বংসসাধন।” (“He was neither a missionary for the propagation of religion in this country, not an architect of empire. The main object of his eastern expeditions seems to have been the acquisition of the wealth of India and the destruction of the moral of its custodians.”)।
মামুদ ভারতে কোনো রাজ্য স্থাপন করেননি সত্য, কিন্তু তাঁর আক্রমণগুলি সম্পূর্ণ নিষ্ফলা ছিল— একথা বলা চলে না।
প্রথমত, সুলতান মামুদ ভারতের অভ্যন্তরে ইসলামের বিজয়-পতাকা বহন করে এনেছিলেন এবং পরবর্তীকালে অন্যান্যরা সেই পথ ধরে ভারতে প্রবেশ করে এদেশে ইসলামের শাসন প্রবর্তন করেছিল। ড. মজুমদারের ভাষায়: “The Ghaznavid occupation of the punjab served as the key to unlock the gates of the Indian interior. ”
দ্বিতীয়ত, মামুদের একাধিক অভিযান এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রাজার পরাজয় কিংবা আত্মসমর্পণ ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দৈন্যকে প্রকট করে তুলেছিল। মামুদের উপর্যুপরি আক্রমণ, ধ্বংস ও লুণ্ঠন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল এদেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে। ড. মজুমদারের ভাষায়: “Big cracks were amade in the great fabric of Indian polity. ”
তৃতীয়ত, মামুদ ভারত থেকে লুণ্ঠন করে গজনিতে নিয়ে গিয়েছিলেন অপরিমেয় ধনসম্পদ। ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে ও দুর্গে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত সম্পদের এত বিশাল ও দ্রুত বহির্গমন (Drain) এদেশের অর্থব্যবস্থায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। আরব পণ্ডিত আলবেরুণী লিখেছেনঃ “Mahmud utterly ruined the prosperity of the country and performed those wonderful exploits by which the Hindus became like the atoms of dust scattered in all direction ……. .”
চতুর্থত, মামুদ এদেশে সম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে সঙ্গে যে ধ্বংসলীলা চালান, তার ফলে মথুরা, বৃন্দাবন, নগরকোট, সোমনাথ প্রভৃতি স্থানের বহু শিল্পসমৃদ্ধ মন্দির ও দুর্গ ধূলিসাৎ হয়েছিল। এই সকল রুচিসম্পন্ন ও কারুকার্যময় স্থাপত্যশোভা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল পরবর্তী প্রজন্ম। শুধু তাই নয়, অতঃপর সামরিক শক্তিসঞ্চয়ের প্রয়োজনে সুকুমার কলার বিকাশ ব্যাহত হয়েছিল অনিবার্যভাবে।
পঞ্চমত, অধ্যাপক হাবিব মনে করেন, এই আক্রমণের ফলে আধ্যাত্মিকতার দেশ ভারতবর্ষে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছিল নিদারুণভাবে। মামুদের লোভ এবং নৃশংসতা এবং ইসলামের আদর্শ একাকার রূপে প্রতিভাত হয়েছিল অধ্যাত্মবাদী হিন্দুদের কাছে। ইসলামকে শান্তির দূত না-ভেবে ধ্বংসের অপদেবতা বলে ভাবতে বাধ্য হয়েছিল তারা। মামুদকে ‘ইসলামের গৃহশত্রু’ রূপে বর্ণনা করে তিনি বলেছিলেন: “He showed to the Philosophical Hindus the darker and more tyrannical sode of Islam and the Hindus began to hate Islam for all times to come.”
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, মামুদের এতগুলো আক্রমণ এবং তার করুণ পরিণতি সত্ত্বেও ভারতের সীমান্তসমস্যা সম্পর্কে ভারতীয় শক্তিবর্গ কোনো শিক্ষা অর্জন করেননি। যৌথভাবে বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার কোনো পরিকল্পনা তাঁরা নেননি। তাৎক্ষণিক আত্মরক্ষার চেষ্টা ছাড়া কোনো দীর্ঘস্থায়ী সীমান্তরক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। মামুদের মৃত্যুসংবাদে এদেশের নৃপতিগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছিলেন; কিন্তু উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভবিষ্যতে যে আবার কোনো আক্রমণ আসতে পারে, সেকথা কেউই উপলব্ধি করতে পারেননি। তাই দ্বাদশ শতকের শেষদিকে ওই উত্তর পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে মহম্মদ ঘুরি যখন ভারত আক্রমণ করলেন, ভারতীয় শক্তিবর্গ তখনও আত্মরক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন।
মামুদের কৃতিত্বের মূল্যায়ন :
এশিয়ার অগ্রণী মুসলমান শাসকদের অন্যতম ছিলেন গজনির সুলতান মামুদ। ইরাক এবং ক্যাস্পিয়ান সাগর থেকে গঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত এবং বাগ্দাদের খলিফার সাম্রাজ্য থেকে তুলনায় বৃহত্তর এক সাম্রাজ্যের সংগঠক ও অধীশ্বর ছিলেন তিনি। পুঁথিগত বিদ্যা তাঁর ছিল না। কিন্তু মানব-চরিত্র অনুধাবন করার ক্ষমতা ছিল তীব্র। তাঁর দৈহিক গড়ন ছিল কমনীয়তাবর্জিত, কিন্তু বলিষ্ঠ। স্বতন্ত্রভাবে মামুদ একজন দক্ষ সৈনিক বা সেনাপতিও ছিলেন না। কিন্তু তাঁর চরিত্রে এমন কিছু গুণের সমাবেশ ঘটেছিল, যা সম্মিলিতভাবে তাঁকে নেতা, সুলতান বা বিজেতার গৌরব অর্জনে সাহায্য করেছিল। ঐতিহাসিক শ্রীবাস্তব-এর ভাষায় : “His outstanding virtue were cool courage, prudence and resourcefulness.” কিন্তু মামুদের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ কেবল মধ্য-এশিয়া কিংবা গজনিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গেও তাঁর রাজনৈতিক বা সামরিক জীবন বিজড়িত; এবং এখানেই সৃষ্টি হয়েছে তাঁর কৃতিত্ব-বিচারের জটিলতা। কারণ মধ্য-এশিয়াতে তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যের সংগঠক, কিন্তু ভারতে তিনি ছিলেন একজন ‘ধর্মান্ধ লুণ্ঠনকারী’। তাই কোনো কোনো পণ্ডিতের বিচারে সুলতান মামুদ ছিলেন ভয়ংকর হিংস্র ও ধর্মান্ধ একজন মুসলমান শাসক, যিনি অস্ত্রের জোরে ভারতভূমিতে প্রতিষ্ঠা পেতে সচেষ্ট ছিলেন। আবার এক শ্রেণির ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে মামুদ ছিলেন সাম্রাজ্যের সংগঠক, সুশাসক এবং শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক একজন সম্পূর্ণ সুলতান। এই বিতর্কের সুন্দর সমন্বয় খুঁজে পাওয়া যায় ড. ঈশ্বরীপ্রসাদের মন্তব্যে। তিনি লিখেছেন : “To the Muslims of his days, he was a Ghazi who tried to extirpate infidelity in heathen lands. To the Hindus, he is to this day a veritable Hun who destroyed their most sacred shrines and wantonly wounded their religious susceptibilities.” কিন্তু এই ধরনের গোষ্ঠীকেন্দ্রিক ব্যাখ্যা ইতিহাসের মূল্যায়ন হিসেবে চূড়ান্ত হতে পারে না। আসলে তিনি ছিলেন নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং বাস্তববাদী ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগীয় উপাদানের মধ্যেও নিজ ভাগ্য গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই ঈশ্বরীপ্রসাদ মনে করেন, “সামগ্রিকভাবে সুলতান মামুদ ছিলেন দক্ষ নেতা, ন্যায়পরায়ণ শাসক এবং গুণীজনের পৃষ্ঠপোষক, যার ভিত্তিতে তাঁকে মধ্যযুগীয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক বলা যায়।”
মামুদের শাসন-কাঠামোর প্রকৃতি ও বিন্যাস সম্পর্কে আলোকপাত না করলেও, সমকালীন লেখকেরা সুলতান মামুদকে একজন দক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ শাসক’ বলে উল্লেখ করেছেন। সম্ভবত, তাঁর রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল এবং প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন একজন করে গভর্নর। উতবি তৎকালীন প্রাদেশিক শাসকদের দক্ষতা ও মানবতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রদেশগুলিতে আদায়ীকৃত রাজস্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব রাখতে হত। বিভিন্ন বাজার ও ব্যবসাকেন্দ্রের ওপরেও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বলবৎ ছিল। বিচারতত্ত্বের মর্মার্থ তাঁর অজানা ছিল না। তাই ন্যায়বিচার প্রণয়নের ব্যাপারে তাঁর কোনো কুণ্ঠাও ছিল না। কথিত আছে, মামুদ ব্যভিচারের অপরাধে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। নিজপুত্র মাসুদকে যথাসময়ে ঋণ প্রত্যাবর্তন না করার অপরাধে অর্থদণ্ড দিতে বাধ্য করেছিলেন। মামুদের ন্যায়পরায়ণতা প্রসঙ্গে উতবি লিখেছেন : “The glorious lord of the poor who displayed equality between the widow and the wealthy so that the door of boasting and oppression was closed.”
মামুদ নিঃসন্দেহে অসাধারণ সামরিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ছোট্ট এক পাহাড়ি রাজ্যকে তিনি যে বিশালতা দিয়েছিলেন, তা একজন সাধারণ সমর নায়কের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাঁর বাহিনীতে ছিল বহুজাতির মানুষের সমাবেশ। আরব, আফগান, তুর্কি, হিন্দু প্রভৃতি নানা ধর্ম ও জাতির মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা আদায় করে নেবার অপূর্ব দক্ষতা তাঁর ছিল। কোনো যুদ্ধে তিনি পরাজিত হননি। মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ জাতিগুলিকে তিনি দমন করেছিলেন অনায়াসেই। ঐতিহাসিক লেনপুল সুলতান মামুদকে একজন ‘মহান সৈনিক এবং দেহ ও মনের দিক থেকে অসীম সাহস ও অদম্য উৎসাহী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। গবেষক এস. এম. জাফর (S. M. Jaffar) মামুদের সামরিক প্রতিভার প্রশংসা করে লিখেছেন : “He was endowed with a genius of war, a scientific general, skillful in planning and through in execution.”
এই সময় ইরানীয় ভাবধারায় যে নবযুগের সূচনা হয়েছিল, তার সঙ্গেও মামুদ গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। মামুদের উৎসাহে পারসিক সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে তুর্কিদের পরিচয় ঘটে এবং পরবর্তীকালে তা ভারতে প্রবেশ করে। রণাঙ্গনের দক্ষ যোদ্ধা মামুদ ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা-সংস্কৃতির অনুরাগী ছিলেন। প্রতিভাবান আলবেরুণী, ইতিহাসবিদ উতবি, দার্শনিক ফারাবি, সুসাহিত্যিক ফিরদৌসী প্রমুখ বহু পণ্ডিত তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। এ ছাড়া কবি আনসারী, উজারী, ফারুকী প্রমুখ গুণীজনের সমাবেশ ঘটেছিল গজনির রাজদরবারে। তাই লেনপুল লিখেছেন : ……. from the cities of Oxus and shores of the Caspian; from Persia and Khorasan he pressed into his service the light of oriental letters.” গজনিতে মামুদ একটি বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার নির্মাণ করে শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসারে সহায়তা করেন। শোনা যায়, অনিশ্চিত যুদ্ধাভিযানের মাঝেও তিনি কবিতা ও গান শোনার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে দ্বিধা করতেন না।
কায়ার পাশে যেমন ছায়ার অবস্থান, তেমনি সুলতান মামুদের চরিত্র ও কৃতিত্বের উজ্জ্বল আভার পাশে ধর্মান্ধতা, নৃশংসতা ও লালসার কালো ছায়ার অস্তিত্ব লক্ষণীয়। শিক্ষার উন্নয়নে তাঁর অবদান সীমাবদ্ধ ছিল সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের মধ্যে। জ্ঞানের জন্য শিক্ষা নয়, আত্মগৌরবের জন্য শিক্ষার পৃষ্ঠপোষণ ছিল তাঁর শিক্ষানুরাগের ভিত্তি। ভারতবর্ষের স্বার্থের বিচারে তিনি ছিলেন নিছক ধ্বংসকারী। শ্রীবাস্তবের ভাষায় : “a daring bandit, an avaricious plunderer and a wanton destroyer of Art.” যে নৃশংসতার সাথে তিনি ভারতের মন্দির ও মূর্তি ধ্বংস করেছেন, তাতে আর যাই হোক তাঁকে আন্তরিকভাবে সংস্কৃতিমনা বলা যায় না। অধ্যাপক হাবিব সুলতান মামুদের এই অন্ধকারময় দিকটির কথা স্মরণ করে গভীর অনুতাপের সাথে লিখেছেন : “কোনো সৎ ঐতিহাসিক এবং যে-কোনো মুসলমান যার ইসলামের তত্ত্ব সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা আছে, মামুদের এহেন নীতিবিবর্জিত মন্দির ধ্বংস করাকে গোপন করবেন না বা কোনো অজুহাতে তাকে সমর্থন করবেন না।… হিন্দুদের পবিত্র উপাসনার স্থানগুলিকে অপবিত্র করাকে ইসলাম ও অন্যান্য সব ধর্মই নিন্দা করে।” অর্থের প্রতি তাঁর লালসা ছিল সীমাহীন। কথিত আছে, ‘শাহনামা’র প্রখ্যাত লেখক ফিরদৌসীকে তিনি প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে অস্বীকার করেছিলেন। সমকালীন লেখকের বিবরণীতে দেখা যায়, মৃত্যুর মুহূর্তে তিনি সমস্ত সঞ্চিত সম্পদ তাঁর চোখের সামনে সাজিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সকল বক্তব্যে অতিরঞ্জন হয়তো আছে, কিন্তু তাঁর অর্থলালসা ও হীনমন্যতা সম্পর্কে একটা আভাস এ থেকে পাওয়া সম্ভব।
শাসক হিসেবে তাঁর মধ্যে মৌলিকত্বের অভাব অবশ্যই ছিল। উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা প্রশাসনকে দক্ষ ও দৃঢ় করার চেষ্টা তিনি করেননি। ঐতিহাসিক লেনপুলের মতে, কোনো নতুন সরকারি সংগঠন বা আইন তিনি উদ্ভাবন করেননি। লেনপুলের ভাষায় : “We hear of no laws or institutions or methods of government that sprang from his initiative.” এই কারণে সুলতান মামুদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ মনে করেন, “সুলতান মামুদের সাম্রাজ্যের কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল না। বিরাট অঞ্চলে বিস্তীর্ণ নানা জাতির এই অসংবদ্ধ রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র অস্ত্রের জোরে।”তাই জনৈক রহস্যবাদী মুসলমান লেখক বলেছেনঃ “শাসক হিসেবে মামুদ ছিলেন মুর্খ। তাই বর্তমান রাজ্যকে নিশ্চিত নিরাপদ না করেই, বার বার নতুন রাজ্যজয়ে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন।” (“He is a stupid fellow. Without being able to manage what he already possesses he yet goes out to conquer new countries. “)। অর্থ সম্পদের প্রতি অস্বাভাবিক লালসা তাঁর রাজ-চরিত্রকে নিঃসন্দেহে কলুষিত করেছে। লুণ্ঠন ও ব্যক্তিগত সম্পদ সংগ্রহের যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছিলেন, তাতে সাম্রাজ্যের ভিত সবল হয়নি, দুর্বল হয়েছে। সেনাবাহিনী বা প্রজাসাধারণের মধ্যে কোনো জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠেনি এবং সে চেষ্টাও তিনি করেননি।
উল্লিখিত সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি সত্ত্বেও সুলতান মামুদ মধ্যযুগীয় শাসকদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুলতান রূপে স্বীকৃত। গজনিকে মধ্য-এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাজ্যে উন্নীত করার কৃতিত্ব তাঁরই। অন্যদিকে ভারতভূমিতে তুর্কি শাসনের পথপ্রদর্শকও ছিলেন সুলতান মামুদ। এ প্রসঙ্গে মহম্মদ হাবিব যথার্থই বলেছেন, “সমসাময়িকদের কাছে সুলতান মামুদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির মূল কারণ তাঁর চরিত্র নয়, তাঁর দক্ষতা এবং সাফল্য।”
মামুদের উত্তরাধিকারীদের আমলে ভারত :
সুলতান মামুদের মৃত্যুর (১০৩০ খ্রিঃ) পরেও দেড়শো বছর ইয়ামিনি বংশ গজনি শাসন করে এবং ভারতের পাঞ্জাব অংশে গজনির প্রতিনিধিদের শাসন চলতে থাকে। অবশ্য এই পর্বে গজনিতে ইয়ামিনি- বংশের অস্তিত্ব যেমন শব্দবর্ণহীন ছিল, ভারতেও তেমনি একটা স্থাণু কর্তৃত্ব তাদের নামের সাথে যুক্ত ছিল। মামুদ তাঁর সাম্রাজ্য দুই পুত্র মাসুদ ও মহম্মদের মধ্যে বণ্টন করে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাসুদ (১০৩১-‘৪১ খ্রিঃ) সেই ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করেন এবং মহম্মদকে বন্দি করে গোটা সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব দখল করেন। ফেরিস্তার বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মাসুদও পিতার মতো নানা সদ্গুণের অধিকারী ছিলেন। ব্যক্তিত্ব, সাহসিকতা, উদারতা, শিক্ষানুরাগ ইত্যাদি তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। তখন ভারতে গজনির শাসক-প্রতিনিধি ছিলেন আরিয়ারুক। স্বাধীনতাকামিতা এবং তহবিল আত্মসাৎ-এর অভিযোগে তাঁকে গজনিতে আহ্বান করে হত্যা করা হয় এবং ভারতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নিয়ালতিগিন। বারাণসী আক্রমণ করে (১০৩৩ খ্রিঃ) নিয়ালতিগিন প্রচুর সম্পদ সংগ্রহ করেন। তবে মাসুদের কাছে সত্য গোপন করে রাখেন। পাঞ্জাবে তাঁর শত্রুপক্ষের প্ররোচনায় মাসুদ নিয়ালতিগিনকে দমন করার জন্য তাঁর ধর্মান্তরিত হিন্দু সেনাপতি তিলককে ভারতে প্রেরণ করেন। তিলক অল্পদিনের মধ্যেই নিয়ালভিগিনকে হত্যা করেন এবং ভারতের গভর্নর নিযুক্ত হন মামুদের পুত্র মাজদুদ (১০৩৬ খ্রিঃ)। এই সময় মাসুদ ভারত অভিযান করে পাঞ্জাবের হাঙ্গীদুর্গ দখল করে প্রচুর ধনসম্পদ ও বন্দি দাস সংগ্রহ করেন। সোনিপতের রাজা মাসুদকে প্রচুর অর্থ প্রদান করে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেন।
মাসুদ গজনিতে প্রত্যাবর্তন করেই সেলজুক-তুর্কিদের আক্রমণের মুখে পড়েন। ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক-তুর্কিদের কাছে পরাজিত হবার পর মাসুদ ভারতে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পথিমধ্যে বিদ্রোহী সেনারা মাসুদকে বন্দি এবং হত্যা করে এবং তাঁর ভ্রাতা মহম্মদকে গজনির সিংহাসনে বসায়। অবশ্য কিছুকালের মধ্যেই মাসুদের পুত্র মাজদুদ মহম্মদকে হটিয়ে সিংহাসন পুনর্দখল করে নেন। মাদুদ ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্রদ্বয় মামুদ এবং মনসুরকে যথাক্রমে লাহোর ও পেশোয়ারের শাসক নিযুক্ত করেন। অবশ্য এঁরা ছিলেন নামেমাত্র শাসক। প্রকৃত অর্থে এই অঞ্চলে এঁদের কোনো রাজকীয় কর্তৃত্ব ছিল না। ওদিকে গজনিতেও ইয়ামিনিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং সেলজুক-তুর্কিদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রাধান্য গজনির প্রশাসনে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা প্রকট করে তোলে। তৃতীয় মাসুদের মৃত্যুর পর (১১১৫ খ্রিঃ) সেলজুক-তুর্কিরা ইয়ামিনিবংশের উত্তরাধিকার প্রশ্নেও হস্তক্ষেপ করে এবং তাদের সাহায্য ও সমর্থন নিয়ে বাহরাম গজনির সিংহাসনে বসেন। এই বিশৃঙ্খলার যুগে আমির মালিকদের ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। শেষ পর্যন্ত ঘুর রাজ্যের সাসাবনীবংশীয় শাসক গিয়াসউদ্দিন ঘুরির নির্দে তাঁর ভাই শিয়াবউদ্দিন মহম্মদ ১১৬৯ খ্রিস্টাব্দে গজনি আক্রমণ ও দখল করে ঘুর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। অবশ্য জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার অনুমতিক্রমে শিহাবউদ্দিন স্বাধীনভাবে গজনি শাসন করতে শুরু করেন। শিহাবউদ্দিন পরে মুইজুদ্দিন মহম্মদ-বিন্-সাম উপাধি গ্রহণ করেন। ভারতের ইতিহাসে মুইজুদ্দিন মহম্মদ ঘুরি নামেই বেশি পরিচিত।
Leave a comment