সুমেরের অধিবাসীদের প্রধান পেশা ছিল কৃষি ও পশুপালন। এ ছাড়াও অনেকে ব্যাবসাবাণিজ্য, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কাষ্ঠশিল্প, স্বর্ণশিল্প, গৃহনির্মাণ শিল্প ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ছিল। শিক্ষক, পুরােহিত ও সৈনিকের পেশাও ছিল অনেকের কাছে বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন।

[1] কৃষি: সুমেরের অধিবাসীদের অন্যতম প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত মেসােপটেমিয়ার জমি ছিল খুব উর্বর। বর্ষাকালে এই দুই নদীতে বন্যা দেখা দিত। ফলে অঞ্চলটি পলিমাটি জমে উর্বর হয়ে ওঠে। এই উর্বর জমিতে চাষাবাদ করে অধিবাসীরা যব, গম, সবজি, শণ প্রভৃতি উৎপাদন করত।

[2] পশুপালন: সুমেরের অধিবাসীদের দ্বিতীয় প্রধান জীবিকা ছিল পশুপালন। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীতীরবর্তী তৃণভূমি অঞ্চলে পশুচারণের সুবিধা ছিল। অধিবাসীরা কুকুর ছাগল, গােরু, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি পশু পালন করত। ষাঁড় দিয়ে তারা জমিতে লাঙল দিত। পরিবহণের কাজেও সুমাররা পশু শক্তিকে কাজে লাগিয়েছিল। গৃহপালিত পশুর সাহায্যে সুমাররা দুধ শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছিল।

[3] ব্যাবসাবাণিজ্য: সুমারদের অনেকেই ব্যাবসাবাণিজ্য করে জীবিকা চালাত। পাল তােলা নৌকায় করে তারা সিন্ধু অঞ্চলের সঙ্গে ব্যাবসা বাণিজ্য করত। তারা সিন্ধু অঞ্চলে পশমের কাপড়, গম, যব, ফল প্রভৃতি রপ্তানি করে সেখান থেকে নিজেদের দরকারি জিনিসপত্র যেমন রকমারি পাথর, কাঠ ইত্যাদি আমদানি করত। সুমাররাই সর্বপ্রথম চাকাওয়ালা গােরুর গাড়ির ব্যবহার শুরু করে।

[4] শিল্পকর্ম: সুমাররা নানা ধরনের শিল্পকর্মকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল৷ কুমােররা মৃৎশিল্পে, তাঁতিরা তাঁতশিল্পে, ছুতােররা কাষ্ঠশিল্পে, কামাররা তামা ও ব্রোঞ্জ শিল্পে, স্যাকরারা স্বর্ণশিল্পে এবং ঘরামিরা গৃহনির্মাণ শিল্পে নিয়ােজিত ছিল। সেযুগে বর্ষবয়নের কাজ, ধাতুর কাজ ও রঞ্জকের কাজও অনেকের পেশা ছিল।

[5] অন্যান্য পেশা: সুমেরবাসীদের মধ্যে কিছু লােকশিক্ষকতা, পূজার্চনা, যুদ্ধবিগ্রহ ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিল। কেউ মজুরের, কেউবা ব্যাবসাবাপিজ্যের হিসেবনিকেশ রাখার জন্য কেরানির কাজ করত।

সুমেরবাসীরা কৃষি এবং পশুপালন ছাড়াও বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশায় নিযুক্ত থাকত। এই সমস্ত পেশায় তারা বিশেষ দক্ষতা লাভ করেছিল।

[1] ধাতুশিল্পে: সুমাররা তামা, ব্রোঞ্জ, সােনা, রুপা প্রভৃতি ধাতুর ব্যবহার জানত। এখানকার স্যাকরারা সােনা ও রুপাে দিয়ে কারুকার্যময় অলংকার তৈরি করত| তা ছাড়া তামা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র-সহ চাষের ক্ষেত্রে ও অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করা হত।

[2] পোড়ামাটির শিল্পে: মিস্ত্রিরা পােড়ানাে ইট দিয়ে একতলা, দোতলা বাড়ি বানাত। এখানকার ঘরবাড়ি, মন্দির, মূর্তি সবই পােড়ামাটি দিয়ে তৈরি করা হত। এজন্য এই সভ্যতা পােড়ামাটি বা টেরাকোটা সভ্যতা নামেও পরিচিত।

[3] মৃৎশিল্পে: কুমােরের চাকার সাহায্যে মৃৎশিল্পীরা বিভিন্ন আকারের থালা, বাসন, গ্লাস তৈরি করতে শিখেছিল। মাটির তৈরি পাত্রপুলিকে তারা আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করে নিত। অনেকসময় তারা মাটির পাত্রগুলির ওপর রং দিয়ে নকশা আঁকত।

[4] স্থাপত্যশিল্পে: স্থপতিরা বড়াে বড়াে মন্দির গড়ে তুলত। এই সমস্ত মন্দিরের দেওয়ালে নানা রঙের ঝিনুক ও পাথর দিয়ে ছবি আঁকা হত।

[5] বস্ত্রবয়ন শিল্প: সুমাররা বস্ত্রবয়নশিল্পেও যথেষ্ট উন্নত ছিল। এই শিল্পে সুতাে কাটা, কাপড় বোনা ও রং করার জন্য তিনটি পৃথক কারিগর শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছিল।