প্রশ্নঃ সুবল কে? তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের তথ্যানুসারে তিতাস নদীর তীরবর্তী গােকনঘাট গ্রামের বাসিন্দা সুবল- কিশােরের বন্ধু।

সুবলের বাবার নাম গগন মালাে- তার কোনাে কালে নাও বা জাল ছিল না। তার ছেলে সবুলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযােজ্য। তারও নৌকা ও জাল কেনার সামর্থ্য নেই। সুবলের চরিত্রের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় বাসন্তীর চৌয়ারি বানানাে উপলক্ষ্যে। কিশাের ও সুবলের মাধ্যমে তৈরি হয় বাসন্তীর চৌয়ারি। তাকে কেন্দ্র করেই দূরন্ত দুই বালকের অনুরাগ জন্মে বাসন্তীর প্রতি। কিন্তু সুবল বুঝতে পারে বাসন্তী পছন্দ করে কিশােরকে। তাই সুবল সে-পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। কিশাের ও সুবল বাল্যবন্ধু, দু’জনেব স্বভাব চরিত্রের প্রকৃতি ভিন্ন রকম। তবু তার শৈশব থেকে যৌবনে পাড়ি জমায় একে অপরের হাত ধরাধরি করে। শৈশবে তারা স্কুলের পড়া ফাকি দিয়ে কলা গাছের খােল কেটে চটি জুতা তৈরি করতাে। জুতা পায়ে দিয়ে কিশাের সুবলের কাছে ভক্তি চায়, নিজেকে বৈকুণ্ঠ চক্রবর্তী বলে দাবি করে। শৈশবের এই খেলার গণ্ডি পেরিয়ে তারা সক্ষম পুরুষ হয়ে ওঠে মালাে সমাজের। নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য কিশাের উত্তরের প্রবাসে মাছ ধরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। একদেবপুরে মাছ ধরতে গিয়ে কিশাের বিয়ে করে এক কুমারী মেয়েকে আবার বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কিশাের বউকে হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বাসন্তীর সাথে বিয়ে হয় সুবলের। সে বিয়ের পর দুরন্ত আষাঢ়ের কথা ভেবে কালােবরণের নৌকায় জিয়লের ক্ষেপ-এ গিয়েছিল। সুবলকে তারা ভাগীদার নয়- মাসিক বেতনভূক্ত শ্রমিক হিসেবে নিয়েছিল। সুবলের মতাে লােক বেতনভুক্ত হলে- পুঁজিদার মালিক তাকে চাকরের মতাে জ্ঞান করে। মেঘনার নদীর মাঝখান দিয়ে চলছিল তাদের নৌকা- এমন সময় নদীতে আসে তুফান। ঈশান কোণের বাতাসে নৌকাটিকে তীব্র বেগে ঝেটিয়ে তীরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। সকলে প্রস্তুত হলাে তীরে ধাক্কা লাগার আগেই লাফিয়ে পড়ে দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা করে নৌকার গতিরােধ করবে। সবার আগে সুবলের প্রতি আদেশ হলাে- সুবল লাফ দিলেও অন্যরা সে কাজ করে না। বেতনধারী লােকের মনে মুনিবের প্রতি প্রবল একটা বাধ্যবাধকতা বােধ থাকে- সুবলেরও তাই ছিল। তাই সুবল ফলাফল না ভেবে নৌকা থেকে লাফিয়ে নৌকার মাঝখানটাতে কাঁধ লাগাতে গেল- তাতে নৌকার বেগ কিছুই কামেনি। অন্যদের বিশ্বাসঘাতকতায় নৌকাটি সুবলের বুকখানা আর মাথা পিণ্ড করে দেয়। সবেগে নৌকা তীরে উঠে আসে- সুবল নৌকার তলায় চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করে।

সুতরাং সার্বিক আলােচনায় বলা যায়- জীবন সাধ-আল্লাদ কোনােটিই সুবলের পূর্ণ হয়নি। আবাল্য বন্ধুর প্রতি বিশস্ত থেকেছে- বিপদে মানুষের পাশে থেকেছে- কিন্তু তার সাথেই করা হয় চরম বিশ্বাসঘাতকতা; আর এ কারণেই তাকে মর্মান্তিক মৃত্যুকে গ্রহণ করতে হয়।