সুন্দরবন হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ এ অবস্থিত একটি ম্যানগ্রোভ বন। তোমরা যারা
সুন্দরবন রচনা  পরীক্ষায় লিখতে চাও তারা আমার এই সুন্দরবন
রচনা পরীক্ষায় নির্দ্বিধায় লিখতে পারো। আমি আশা করি আমার এই রচনা লিখলে
তোমরা বেশ উপকৃত হবে।

আমি সুন্দরবন রচনা এর মধ্যে দিয়ে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তোমরা
এই রচনা পড়লে এর সাথে আর যে কয়টি রচনা লিখতে পারবে আর তা হল – পৃথিবীতে একটাই
সুন্দর বন, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ,এই একটি মাত্র সুন্দরবন
রচনা পড়ার মাধ্যমে লিখতে পারবে। নিচে সুন্দরবন রচনা বিস্তারিত লেখা হলো-

পোস্ট সূচিপত্রঃ সুন্দরবন রচনা 

ভূমিকা

পৃথিবীর অন্যতম ম্যানগ্রোভ বা লোনা পানির বন হল সুন্দরবন। বাংলাদেশের খুলনা,
বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ও বরগুনা জেলার কিছু অংশ নিয়ে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে গড়ে
উঠেছে এই বিশাল বন। সুন্দরবনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গাছ। এছাড়াও এ বনে যেমন
রয়েছে প্রচুর গাছপালা তেমনি রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও জীবজন্তু। এই বনেই
বাস করে পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ।আর এই টাইগারের নাম অনুসারে পুরো
পৃথিবীতে বাংলাদেশ পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ
একটি ঝড়ের রাত – রাত্রি রচনা সম্পর্কে জানুন

সুন্দর বন হল পৃথিবীর একক ম্যানগ্রোভ বা একক ইকো সিস্টেম। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে
ভরপুর এই সুন্দরবন তাই এই বন শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয় সারা বিশ্বের
প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছেও একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

সুন্দরবন নামকরণের কারণ

সুন্দরবনে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। তবে সব গাছের মধ্যে সুন্দরী নামের একপ্রকার
গাছের জন্য সুন্দরবন বিখ্যাত। আর এই গাছের নাম অনুসারে এই বর্ণের নামকরণ করা হয়
সুন্দরবন।

সুন্দরবনের আয়তন

বাংলাদেশে সুন্দরবনের মোট আয়তন ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার। তবে বাংলাদেশ এবং ভারতের অংশ
মিলে সুন্দরবনের মোট আয়তন ১৩৯৫০ হেক্টর বা ৩ ৪ ৫০০ একর। সুন্দরবনের মোট আয়তনের
৬২ শতাংশ বাংলাদেশে এবং ভারতের ২৪ পরগনা জেলায় রয়েছে ৩৮ শতাংশ। তবে আজ থেকে
প্রায় ২০০ বছর পূর্বে সুন্দরবন বিস্তৃত ছিল প্রায় ১৬৭০০ বর্গ কিলোমিটার। তবে
সুন্দরবনের মোট জলা জীর্ণ হল ৩১.১ শতাংশ। সুন্দরবন দুইটি বন বিভাগের
অন্তর্ভুক্ত।

সুন্দরবনের অবস্থান

সুন্দরবনের অবস্থান হলো বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, দক্ষিণে এক বিশাল
সাগর বঙ্গোপসাগর, পিরোজপুর ও বরিশাল জেলা। পশ্চিমে হাড়িয়া ভাঙ্গা নদী ও
রায়মঙ্গল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলা নিয়ে সুন্দরবনের অবস্থান।
ভৌগলিক অক্ষাংশের হিসাবে বাংলাদেশ ও ভারত উপকূল ধরে ২১ ডিগ্রি ৩০ সেলসিয়াস
দ্রাঘিমা জুড়ে উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ ডিগ্রি ০০ থেকে ৮৯৫৫ পূর্ব দ্রাঘিমার
মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। এই বোন সজ্জিত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের
গাছপালা আর জীবজন্তু দিয়ে।

সুন্দরবনের ভূতত্ত্ব, মৃত্তিকা ও জলবায়ু

মূলত সুন্দরবনের ভূভাগ সৃষ্টি হয়েছে হিমালয় পর্বতের ভূমিক্ষয়জনিত জমাকৃত পলি
মাটি থেকে। এই বনের দক্ষিণ পূর্ব দিকটিক্রমেই ঢালু হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের
অভ্যন্তরের সাধারণ মাটির তুলনায় সুন্দরবনের মাটি একটু আলাদা ধরনের। এই বনের
মাটি দোআঁশ যুক্ত পলি মাটি। বঙ্গোপসাগরের জোয়ার ভাটার কারণে সুন্দরবনের
এলাকায় পানি লবণাক্ত। এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি
সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সুন্দরবনের উদ্ভিদ

সুন্দরবন নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ দিয়ে ভরা। সুন্দরবনকে দেখে মনে হয়
যেন উদ্ভিদের মিলনমেলা। সরকারি জরিপ অনুসারে, সুন্দরবনে রয়েছে ২৪৫ শ্রেনী ও
৩৩৪ প্রজাতির বৃক্ষ। তবে এ বনের প্রধান বৃক্ষ হল সুন্দরী বৃক্ষ। উদ্ভিদ
বিজ্ঞানী ডি প্রেইন উল্লেখ করেন, সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে।
পৃথিবীতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ রয়েছে ৫০ টি আর শুধু মাত্র সুন্দরবনে রয়েছে ৩৫টি
ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ।

আরো পড়ুনঃ  মোবাইল ফোন – রচনা  ৬-১২ শ্রেণির জন্য

এছাড়াও সুন্দরবনের রয়েছে সুন্দরী, গেউয়া, গরান, কেওড়া, ধোন্দল, পশুর, আমলকি
প্রভৃতি। এছাড়াও এখানে নানা ধরনের ঔষধি গাছ রয়েছে। এছাড়াও সুন্দরবনের 
প্রায় সবখানে গোলপাতা নামক একপ্রকার গাছ জন্মে। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ গোল পাতা
দিয়ে ঘরের ছাউনি তৈরি করে থাকে।

সুন্দরবনের প্রাণী

সুন্দরবনে  বিচিত্র প্রজাতির প্রাণী বাস করে। প্রাণী ছাড়া এ বনের
অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এই বনে রয়েছে ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির
স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী। এছাড়াও এখানের
জলাশয়ে রয়েছে ১২০ প্রজাতির মাছ। সুন্দরবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো রয়েল
বেঙ্গল টাইগার। আর এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসস্থল হল সুন্দরবন।
একসময় এই বনে পচুর পরিমাণে চিতাবাঘ ছিল।

এছাড়াও এখানে রয়েছে কয়েক প্রজাতির হরিণ যেমন – চিত্রা ও মায়া হরিণ। এছাড়াও
এ বনে রয়েছে বানর, বিড়াল, সজারু, বন্য শুকর এবং লিউপাড। এছাড়াও রয়েছে
বিচিত্র সব পাখি যেমন – বক,শারস, হারগিলা, লেঞ্জা, কাদা খোঁচা, শকুন,
মাছরাঙ্গা,কাঠঠোকরা, ভোগীরথী, পেঁচা,মধুপায়ি, বুলবুলি, শালিক, ফিঙ্গে, বেনে
বউ, ঘুঘু, ফুলঝুরি, মুনিয়া, হারিসাশা, টুনটুনি, দোয়েল, বাবুই প্রভৃতি। সমুদ্র
উপকূলে দেখা যায় গাংচিল, জল কবুতর, টার্ন ইত্যাদি। এছাড়াও সরীসৃপদের মধ্যে
রয়েছে কুমির, সাপ, টিকটিকি ইত্যাদি।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুন্দরবনের স্থান

জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের বনজ সম্পদের
প্রধান উৎস হল সুন্দরবন। কাঠের উপর নির্ভর কৃত কাঁচামালের প্রধান যোগান আসে
সুন্দরবন থেকে। সুন্দরবন থেকে প্রাপ্ত কাঠ  জ্বালানি ব্যবহৃত হয় কয়লা
হিসাবে। খুলনা হার্ডবোর্ড মিল ও নিউজপ্রিন্ট কারখানা গড়ে উঠেছে সুন্দরবনকে
কেন্দ্র করে। এ বন থেকে প্রাপ্ত ফল গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনের
জলাশয় থেকে যে শামুক ঝিনুক পাওয়া যায় তা দিয়ে খাবারের ভালো চুন তৈরি হয়।

আরো পড়ুনঃ  নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানুন

একশ্রেণীর পেশাজীবী লোক সুন্দরবনের মধুর উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ
করে। এছাড়াও এ বন থেকে পাওয়া যায় গোলপাতা ও মোম। এই বনের জলাশয় থেকে পাওয়া
যায় শামুক, ঝিনুক ও কাঁকড়া। সুন্দরবনের বনজ সম্পদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে
বড় বড় শিল্প কারখানা।

সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা

সুন্দরবনের বিভিন্ন বনজ সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মানুষ এখানে অহরহ প্রবেশ
করছে যার কারণে সুন্দরবনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এই বনের পানির লবণাক্ততা দিন
দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যার কারণে ম্যানগ্রোভ বন দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন
শিকারীদের কারণে সুন্দরবনে এখন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা দিন দিন কমে
যাচ্ছে ।বিভিন্ন প্রাকৃতিক  দুর্যোগেও বন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এছাড়াও সরকারি সাইলোগুদাম, অরিয়ন বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
বনের পরিবেশকে দিন দিন ধ্বংস করে দিচ্ছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের ঐতিহ্য হলো সুন্দরবন। বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর সুন্দরবনের বিশাল
প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের আত্ম – সামাজিক উন্নয়নে
সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে বর্তমানে সুন্দরবনের গাছপালা
ও প্রাণিজগত ধ্বংসের মুখে। সরকারের উচিত সুন্দরবনের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া।
আমাদেরও উচিত সুন্দর বনের সকল গাছপালা সহ প্রাণীকুল রক্ষা করা কারণ সুন্দরবন হল
আমাদের জাতীয় সম্পদ।