“সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু
অনলে পুড়িয়া গেল।”
উত্তর: বৈষ্ণব পদকর্তাগণ দুঃখের পদরচনায় বেশ পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। বৈষ্ণব কবিতায় কৃষ্ণপ্রেমে ব্যাকুল রাধার বিরহচিত্তের অভিব্যক্তি তুলে ধরা হয়েছে অলোচ্য কবিতাংশটিতে।
প্রতিটি মানুষ সুখে থাকতে চায়, পতিসান্নিধ্যের সেরা সুখটিই অনুসন্ধান করতে চায় রাধা। কিন্তু তার কৃষ্ণ তার প্রতি বিমুখ। বড়ো আশা করে সমাজ-সংসারের ভয়কে দূরে ঠেলে রাধা কৃষ্ণকে মন দিয়েছে। সুখের নীড় রচনার স্বপ্ন দেখেছে কৃষ্ণকে নিয়ে। যে সুখের জন্য রাধা ঘর বেঁধেছে, সে সুখের ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। নারী সব যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে, কিন্তু মনের মানুষের দেওয়া কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না, সহ্য করতে পারে না প্রেমের অপমান। তার প্রেমকে অবজ্ঞা করে কৃষ্ণ এখন দূরে সরে গেছে। তাই রাধা তার স্বপ্নের সংসারকে অনলে পুড়ে যাবার সাথে তুলনা করেছে। রাধার ধারণা হয়ত অন্য কোনো রমণী গোপনে ষড়যন্ত্র করে তার কাছ থেকে কৃষ্ণকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। তাই রাধার অভিশাপ:
“যুবতী হইয়া শ্যাম ভাঙাইয়া
এমতি করিল কে।
আমার পরাণ যেমতি করিছে
তেমতি হউক সে।”
কবি জ্ঞানদাস তাঁর রচিত পদে রাধার বিরহযন্ত্রণাকে সুন্দর ভাষাভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। বিরহের কবিতা রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। উপরিউক্ত পদেও রাধার হৃদয়যন্ত্রণার অভিব্যক্তি চমৎকারভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কবির ভাষায়:
“সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু
অনলে পুড়িয়া গেল।
আমিয়া সাগরে সিনান করিতে
সকলি গরল ভেল ॥”
মানবজীবনের অমোঘ সত্যকে কবি তুলে ধরেছেন রাধার এ আক্ষেপের মাধ্যমে। মানুষ যা আশা করে প্রকৃতির নির্মম বাস্ত বতায় তা বার বার হোঁচট খায়। রাধার জীবনের বাস্তবতা সমগ্র মানবজীবনের জন্যই প্রযোজ্য।
Leave a comment