‘সীতার বনবাস’

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) কে উনিশ শতকের একজন মহাপুরুষ হিসেবে সুধীমহল স্বীকৃতি দিয়েছেন। কারণ তিনি বাংলা ভাষার গঠনে, বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে যেমন যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন, তেমনি এদেশে শিক্ষাবিস্তার এবং আচার সর্বস্ব সনাতন হিন্দু ধর্মের নানা কুসংস্কারের মূলোৎপাটনেও যথার্থ সমাজ সংস্কারের ভূমিকা পালন করেছেন। বিদ্যাসাগর যেসব গ্রন্থ রচনা করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন, সেসবের মধ্যে তার অনূদিত গ্রন্থগুলোই প্রধান। ১৮৬০ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ‘সীতার বসবাস’ বিখ্যাত সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণের অংশ বিশেষ নিয়ে রচিত। এর প্রধান আকর্ষণ বিদ্যাসাগরের কাব্যময় ভাষারীতি। এ গ্রন্থে বিদ্যাসাগরের সাহিত্যিক গদ্যের চরম প্রকাশ ঘটেছে। যে ভাষা তৎসম শব্দবহুল এবং দীর্ঘ সমাসবদ্ধ পদযুক্ত তা সত্ত্বেও ভাষা নীরস হয়নি। বিদ্যাসাগরের ভাষারীতির নমুনা হিসেবে আমরা সীতার বনবাস থেকে কিয়দংশ উদ্ধৃত করছি, লক্ষ্মণ বলিলেন, আর্যে! এই সেই জন্মস্থান মধ্যবর্তী প্রসবন গিরি। এই গিরির শিখরদেশ আকাশপথে, সতত সঞ্চরমান জলধরমণ্ডলীর যোগে নিরন্তর নিবিড় নীলিমায় অলংকৃত। অধিত্যকাপ্রদেশ ঘনসন্নিবিষ্ট বিবিধ বনসম্পদসমূহের আচ্ছন্ন থাকাতে সতত স্নিগ্ধ, শীতল ও রমণীয়, পাদদেশে প্রসন্নসলিলা গোদাবরী তরঙ্গ বিস্তার করিয়া প্রবলবেগে গমন করিতেছে। রাম বলিলেন, “প্রিয়ে তোমার স্মরণ হয়, এই স্থানে কেমন মনের সুখে ছিলাম।”

বলাবাহুল্য এ ভাষা অত্যন্ত সুললিত এবং উচ্চাঙ্গের সাহিত্যগুণসম্পন্ন। এ কারণেই পাঠক মনে এর আবেদন চিরস্থায়ী।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।