অথবা, বাউল সাধনায় সিদ্ধি বলতে কী বুঝ? সংক্ষেপে আলোচনা কর

উত্তর: বাউল গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাধনা করা। আর এ সাধনার মাধ্যমে পরমপুরুষ বা পরমাত্মাকে চিনতে না পারলে সাধনা সিদ্ধি হবে না। অর্থাৎ জীবনে মোক্ষ লাভ বা যোগী লাভ করতে হলে সিদ্ধি অর্জন করতে হবে।

বাউল গান মূলত যোগ নির্ভর। ইড়া-পিঙ্গলা এবং সুষুম্না এ তিনটি যোগ প্রক্রিয়া গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীকে মহানদী কল্পনা করে এবং দেহের অন্য সকল নাড়িকে উপনদী কল্পনা করে বায়ু পরিচালনা করলে যোগী হওয়া সম্ভব। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শুক্র, রজঃ, রক্ত, নীর-ক্ষীরা প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে গোটা দেহের উপর কর্তৃত্ব করা সম্ভব।

যোগে সিদ্ধি লাভ হচ্ছে ইচ্ছা শক্তি অর্জন করা বা মোক্ষলাভ করা। শুক্র বা বীর্যের স্খলনে নতুন প্রাণের উদ্ভব হয়। এ শুক্র ইচ্ছানুযায়ী শরীরে জোয়ারের মতো রূপ প্রবাহ করে। শুক্র থাকে লিঙ্গের কাছে; যেটাকে প্রজনন শক্তির আঁধার রূপে কল্পনা করা হয়। সুতরাং ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগে মানুষ অসামান্য শক্তি অর্জন করে অসাধ্য-সাধন করতে সক্ষম হয়। এ শুক্র শক্তি থাকলে জীবনের বিনাশ নেই। তাই শুক্রকে নাড়ির মাধ্যমে মূলাধার থেকে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করতে পারলেই মানুষের ইচ্ছাশক্তির পূর্ণ প্রয়োগ করা সম্ভব। এটিই অর্থাৎ শুক্র কামরস্য, শিব শক্তি বা রাধাকৃষ্ণের অদ্বয় সংস্থিতি। সুতরাং বাউল পদাবলীতে এটিই সিদ্ধি।

পরিশেষে বলা যায় যে, সিদ্ধি তথা শুক্র রসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই জীবনের পূর্ণাঙ্গতা আসে। মানুষ হয়ে উঠে সাধক বা পূজক।