শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর এই শিক্ষার মূল্যায়ন হয়ে থাকে বাৎসরিক ফলাফলের
মাধ্যমে। আর এই  ফলাফল সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। আমরা যদি  সিজিপিএ
(CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত না জানি তাহলে আমাদের ফলাফল নির্ণয়
করতে পারবো না।  সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
আমার পোস্টটি পড়ুন।

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা দুটি শব্দের সাথে পরিচিত। আর তা হল
সিজিপিএ  (CGPA) এবং জিপিএ (GPA)  । আমরা এসএসসি(SSC) ও এইচএসসি
(HSC) সহ সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ (GPA)  হিসাব করতে পারলেও ডিগ্রী
কোর্সও অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল সিজিপিএ (CGPA)  কিভাবে করতে
হয় তা অনেকের কাছে অজানা বিষয়।  সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে
বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত 

সিজিপিএ (CGPA) কি?

সাধারণভাবে সিজিপিএ  (CGPA) বলতে বোঝায় একজন
শিক্ষার্থীকে তার একাডেমিক বিষয়ের উপর মূল্যায়ন করার পদ্ধতি।
সিজিপিএ  (CGPA)  হল একটি
ইংরেজি শব্দ। সিজিপিএ  (CGPA)  এর পূর্ণরূপ
হল Cumulative Grade Point Average। একজন শিক্ষার্থীর তার একাডেমিক পরীক্ষার
কৃতিত্ব মূল্যায়নের জন্য সাধারণত গ্রেড পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়। একজন
শিক্ষার্থী প্রতিবছর যে রেজাল্ট প্রাপ্ত হয় তার যোগফল কে যে কয় বছরের 

ফলাফল যোগ করা হয় সেই কয় বছরের সমষ্টি দিয়ে ভাগ করে যে ফলাফল পাওয়া যায়
তার গড়কে বলা হয় সিজিপিএ  (CGPA) ।সিজিপিএ  (CGPA)  গ্রেডিংপয়েন্ট করা হয়  সাধারণত অনার্স এবং ডিগ্রী লেভেল এ গিয়ে।
সাধারণত চার বছর বা তিন বছরের গ্রেডিং পয়েন্টকে এক জায়গাতে করে
সিজিপিএ  (CGPA) গ্রেডিং পয়েন্ট
তৈরি করা হয়।

জিপিএ (GPA)কি ?

একজন শিক্ষার্থীর একাডেমিক মূল্যায়নের পদ্ধতি হল জিপিএ (GPA)। এই জিপি এ সাধারণত
এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের বছর শেষে সার্বিক মূল্যায়নের একটি গ্রেড
পয়েন্ট। জিপি এর পূর্ণরূপ হল গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (Grade Point Average)। 
এটি একটি সংখ্যা সূচক স্কোর।যা একটি শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ফলাফল
অর্জন ও প্রতিফলনের একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি করে থাকে।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে বুয়েটে প্রথমবারের মতো গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপর
২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় এবং ২০০৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় তা চালু করা
হয়।  সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

সিজিপিএ (CGPA) বের করার পদ্ধতি

আমাদের দেশ তথা বাংলাদেশের যারা ডিগ্রী লেভেল এবং অনার্স লেভেল এ পড়াশোনা করেন
তাদের ৩ বছর অথবা ৪ বছরের একটি কোর্স শেষ করলে একটি ফলাফল প্রদান করা হয়। আর
তাদের এই ফলাফল যে পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় তাকে বলা হয়
সিজিপিএ (CGPA)।  আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক সিজিপিএ (CGPA) ফলাফল বের
করার নিয়ম। মনে করুন আপনি অনার্সের বা ডিগ্রির একজন শিক্ষার্থী। 

আপনার অনার্সের চতুর্থ বা ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার বার্ষিক বা ফাইনাল ফলাফল
বের হয়েছে। এখন আপনি গত তিন বছর বা চার বছরের ফলাফল এর সিজিপিএ (CGPA) করতে চান
তাহলে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো – আপনাকে তিন বছরের বা ৪ বছরের ফলাফল একসঙ্গে
যোগ করতে হবে। যেমন ধরুন আপনি আপনি প্রথম বর্ষে অর্জন করেছেন ৩ .৫০, দ্বিতীয়
বর্ষে অর্জন করেছেন ৩.০, তৃতীয় বর্ষে অর্জন করেছেন ৩.৫০ এবং চতুর্থ বর্ষে অর্জন
করেছেন ৩.০ ।

আপনার অর্জিত চার বছরের এই ফলাফল যোগ করলে আসবে ১৩.0 । এখন সিজিপিএ (CGPA) বের
করতে আপনাকেএই ফলাফলকে ৪ দ্বারা ভাগ করতে হবে। তাহলে আপনার সিজিপিএ হবে ৩.২৫।
আপনি যদি ডিগ্রী লেভেলের ফলাফল সিজিপিএ করতে চান তাহলে আপনাকে ডিগ্রী প্রথম
বর্ষের ফলাফল + ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল ও তৃতীয় বর্ষের ফলাফল একসঙ্গে যোগ
করে ৩ দিয়ে ভাগ করতে হবে। তাহলে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেয়ে যাবেন।

সিজিপিএ (CGPA) বের করার আরেকটি সহজ পদ্ধতি হলোঃ-

প্রাপ্ত নম্বর     গ্রেড পয়েন্ট             
  লেটার গ্রেড

  
৮০+                     ৪.00                          A+

৭৫+                    ৩.৭৫                         A

৭০ +                   ৩.৫০                         A-

৬৫+                   ৩.২৫                         B+

৬০+                    ৩.00                          B

৫৫+                    ২.৭৫                         B-

৫০+                    ২.৫0                          C+

৪৫+                    ২.00                           C

৪০+                    0.00                             F

সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

 জিপিএ (GPA) ৪ গ্রেডিং পয়েন্ট সিস্টেম

জিপিএ  (GPA) গ্রেডিং পয়েন্ট সিস্টেমে এ সর্বোচ্চ 90 + নাম্বার পেলে A+ । নতুন গ্রেডিং
পয়েন্ট পদ্ধতিতে ৯০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের লেটার গ্রেড ‘A+’ ও
গ্রেড পয়েন্ট হবে ৪, যা সর্বোচ্চ ফল। এরপর ৮০ থেকে ৮৯ নম্বর প্রাপ্তদের লেটার
গ্রেড ‘A’ ও গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫, ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর প্রাপ্তদের লেটার গ্রেড ‘B+’ ও
গ্রেড পয়েন্ট ৩, ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তদের লেটার গ্রেড ‘B’ ও গ্রেড পয়েন্ট
২.৫,

৫০ থেকে ৫৯ নম্বর প্রাপ্তদের লেটার গ্রেড ‘C+’ ও গ্রেড পয়েন্ট ২, ৪০ থেকে ৪৯
প্রাপ্তদের লেটার গ্রেড ‘C’ ও গ্রেড পয়েন্ট ১.৫, ৩৩ থেকে ৩৯ প্রাপ্তদের লেটার
গ্রেড ‘D ও গ্রেড পয়েন্ট হবে ১ এবং 0 থেকে ৩২ প্রাপ্তদের লেটার গ্রেড ‘F’ ও
গ্রেড পয়েন্ট হবে 0 ।  ৯0-১00  A+ ৪.00। 
সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

প্রাপ্ত নম্বর             গ্রেড
পয়েন্ট               লেটার গ্রেড

৯০-১০০               
    ৪.০০                 
          A+

৮০-৮৯     
                ৩.৫     
                     
  A

৭০-৭৯               
        ৩.0             
                B+

৬০-৬৯ 
                   ২.৫ 
                     
        B

৫০-৫৯         
            ২.0         
                      C+

৪০-৪৯                   
    ১.৫               
                C

৩৩-৩৯                   
  ১.0                                  D

0-৩২                          0.0                                   F

সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

প্রচলিত GPA-৫ গ্রেডিং পয়েন্ট সিস্টেম

প্রচলিত GPA-৫ গ্রেডিং পয়েন্ট সিস্টেমে একজন পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৮0 +
নাম্বার পেলে A+  পেত। এই পদ্ধতি সাধারণত প্রাথমিক স্তর (PEC) থেকে
মাধ্যমিক(SSC) এবংউচ্চমাধ্যমিক(HSC) সহ  সমমান পরীক্ষায়  প্রচলিত
ছিল।  নিচে  প্রচলিত গ্রেডিং পয়েন্ট সিস্টেম পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা
করা হলো –

প্রাপ্ত নম্বর                 
গ্রেড পয়েন্ট                 
   লেটার গ্রেড

৮0+                                  ৫.00                                   A+

৭0-৭৯                              ৪.00                                    A

৬0-৬৯                             ৩.৫0                                  A-

৫0-৫৯                              ৩.00                                   B

৪0-৪৯                                ২.00                                  C

৩৩-৩৯                               ১.00                                  D

00- ৩২                                 0.00                                  F 

সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

সিজিপিএ (CGPA ) ও জিপিএ (GPA )এর মধ্যে পার্থক্য

নিচে সিজিপিএ (CGPA ) ও জিপিএ (GPA )এর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হলো –

সিজিপি (CGPA ) পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি ।যেটা গোটা বিশ্বে পরিচালিত হয়। আর
জিপিএ (GPA ) পদ্ধতি এটি পুরাতন পদ্ধতি। এটার মান নির্ণয় খুবই কম।

সাধারণত মাধ্যমিক বা এস এস সি (SSC) ও উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচ এস সি
(HSC)পরীক্ষায় জিপিএ (GPA ) ব্যবহার হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সব পরীক্ষার
ক্ষেত্রে যেমন অনার্স লেভেল ও ডিগ্রী কোর্সে সিজিপিএ (CGPA ) ব্যবহার হয়।

জিপিএ (GPA ) হল এক বছর পরীক্ষার মান নির্ণয় করার পদ্ধতি। আর সিজিপিএ (CGPA )
হল পুরো কোর্সের মান নির্ণয় করার পদ্ধতি। সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA)
সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

কত গ্রেডিং পয়েন্টে জিপিএ কত

২০০৩ সাল থেকে এসএসসিও এইচএসসির ক্ষেত্রে জিপিএ  ৫.০০ প্রথম বিভাগ
হিসেবে ধরা হয়, জিপিএ ৩.৫০ বা তার চেয়ে বেশি দ্বিতীয় বিভাগ হিসেবে ধরা
হয়, জিপিএ  ২.৫০ বা এর চেয়ে বেশি হলে কিন্তু ৩.৫০ এর চেয়ে কম হলে
তৃতীয় বিভাগ হিসেবে ধরা হয়, জিপিএ ১.0০ বা তার চেয়ে বেশি কিন্তু ২.৫০ এর
চেয়ে কম হলে তৃতীয় বিভাগ হিসেবে ধরা হয়।

২০০৪ সাল থেকে এসএসসিও এইচএসসির ক্ষেত্রে জিপিএ ৫.০০ পয়েন্ট হলে প্রথম
বিভাগ, জিপিএ ৪. ০০ বা তার চেয়ে বেশি হলে দ্বিতীয় বিভাগ, জিপিএ ৩.০ বা
তার চেয়ে বেশি হলে এবং ৪.০ এর কম হলে তৃতীয় বিভাগ, এবং জিপিএ ১.0
বা তার বেশি এবং ৩.০ এর কম হলে তৃতীয় বিভাগ হিসেবে ধরা হয়।

২০০৯ সালের ২রা জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এভাবে গ্রেডিং
পয়েন্ট করা হতো।

২০১০ সালের ৪ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভাগ ও গ্রেটিং পয়েন্ট এর মধ্যে
সমতা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন
অনুযায়ী জিপিএ ৩.০বা তার বেশি হলে প্রথম বিভাগ ,  জিপিএ ২.০০
বা তার বেশি  কিন্তু ৩.০০ এর কম হলে দ্বিতীয় বিভাগ , জিপিএ ১.০০
বা তার চেয়ে বেশি কিন্তু ২.০০ এর কম হলে তৃতীয় বিভাগ।
সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

শেষ কথা

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা দুইটি শব্দের সাথে পরিচিত। আর তা হল জিপিএ (GPA)
এবং সিজিপিএ  (CGPA)।আমরা
এসএসসি (SSC) ও এইচ এস সি (HSC) সহ সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ হিসাব করতে
পারলেও ডিগ্রী কোর্স ও অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল কিভাবে করতে হয় তা
অনেকের কাছেই অজানা বিষয়। সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে
বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

আমি দ্বিতীয় জিপিএ ও সিজিপিএ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমি আশা করি
আমার এই আলোচনা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। 
সিজিপিএ (CGPA) ও জিপিএ (GPA) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।