প্রসঙ্গ: জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘শিকার’ কবিতায় সারারাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে গভীর অন্ধকারে সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরে ঘুরে একটি সুন্দর বাদামি হরিণ চলে এসেছিল ভােরের আলােয়। ঝলমল করে ওঠা সকালের কাছে সে খুঁজেছিল নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি। ছিড়ে খেয়েছিল বাতাবিলেবুর মতাে সবুজ সুগন্ধি ঘাস। তারপরে গা ভাসিয়েছিল নদীর কনকনে ঠান্ডা জলে। ঘুমহীন, ক্লান্ত, বিহ্বল শরীরকে সে দিতে চেয়েছিল স্রোতের আবেশ। অন্ধকারের জরায়ু থেকে জন্ম নেওয়া ভােরের রােদের মতােই জীবনের উল্লাস খুঁজে নিতে চেয়েছিল হরিণটি। নীল আকাশের নীচে সে জেগে উঠতে চেয়েছিল সূর্যের “সােনার বর্শার মতাে।” অন্যান্য হরিণীকে চমকে দেওয়ার জন্য নিজেকে এভাবেই যেন সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিল সেই সুন্দর বাদামি হরিণটি।

আকাক্ষার পরিণতি : তথাকথিত সভ্যসমাজ হরিণের এই আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে দেয়নি। প্রকৃতির কোমলতার মাঝে হঠাৎ ভেসে এসেছিল এক অদ্ভুত শব্দ। আর তারপরই নদীর জল হয়ে উঠেছিল মচকাফুলের মতাে লাল। প্রাণবন্ত হরিণটি পরিণত হল নিষ্প্রাণ মাংসপিণ্ডে। ঘুমের দেশেই যেন সে হারিয়ে গেল। সিগারেটের ধোঁয়ায় আর গল্পে মশগুল নাগরিক সমাজের বিকৃত জীবন উদ্যাপনে হরিণের সাধ ও আহ্বাদের অবসান ঘটে। হয়তাে নাগরিকজীবনের কাছে প্রকৃতির পরাজয়ের প্রতীক হয়ে থাকে হরিণের এই মৃত্যু।