প্রশ্নঃ 
সার্টিফিকেট কাকে বলে? কোন কোন কারণে সার্টিফিকেট বিক্রয় রদ করা যায়? সার্টিফিকেট অফিসারের কার্যাবলী উল্লেখ কর।

ভূমিকাঃ একটি দেশ পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে এই অর্থ আয় করে। এর মধ্যে অন্যতম উৎস হলো জনগণের নিকট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব বা বিভিন্ন ট্যাক্স। সরকার জনগণের নিকট থেকে বিভিন্ন দাবীর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। এই সকল অর্থ যেন সহজে আদায় করা যায় সেজন্য ১৯১৩ সালের সরকারী দাবী আদায় আইন প্রণীত হয়।

সার্টিফিকেট (Certificate) কাকে বলেঃ সরকারি দাবী আদায় আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী-

কোন সার্টিফিকেট অফিসারের যদি এমন বিশ্বাস জন্মে যে, কালেক্টরকে প্রদান করতে হবে এমন পাওনা বকেয়া রয়েছে, তাহলে উক্ত অফিসার নির্ধারিত ফরমে সরকারি পাওনার বিবরণ লিখে তাতে স্বাক্ষর করবেন এবং এটি তার নিজ অফিসে দাখিল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এটি হলো সার্টিফিকেট।

সরকারি দাবী আদায় আইনের ১ম তফসিল অনুযায়ী-

অন্য সংস্থার বা সরকারি কর্মকর্তা এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে সার্টিফিকেট অফিসারের নিকট বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য অনুরোধ পত্র প্রেরণ করবেন। সার্টিফিকেট অফিসার তখন সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে ৬ ধারা অনুযায়ী তার অফিসে দাখিল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এটিকেও সার্টিফিকেট বলে।

কোন কোন কারণে সার্টিফিকেট বিক্রয় রদ করা যায়ঃ সরকারি দাবী আদায় আইন অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় দুইভাবে রদ করা যায়। 

(১) সার্টিফিকেট অফিসারের মাধ্যমে: 

২২ ধারা অনুযায়ী-

৭ ধারার নোটিশ জারি করা হলে এবং স্থাবর সম্পত্তি নিলাম হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনী অর্থ জমা দিয়ে নিলাম রদের আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে-

* ক্রেতার প্রাপ্য ক্রয় মূল্যের ৫% হারে ক্ষতিপূরণ জমা দিতে হবে।

* কালেকটরের নিকট দেয় অন্যান্য সরকারি পাওনা জমা দিতে হবে।

* পাওনাদারের অর্থের ৬.২৫%হারে সুদসহ মূল অর্থ জমা দিতে হবে। 

২৩ ধারা অনুযায়ী-

* ৭ ধারার নোটিশ জারি না হলে অথবা 

* নিলাম প্রচারে অনিয়ম হলে অথবা

* নিলাম পরিচালনায় অনিয়ম হলে অথবা

* সার্টিফিকেট কার্যক্রমে অনিয়ম হলে

৬০ দিনের মধ্যে সার্টিফিকেট অফিসারের নিকট নিলাম রদের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে উপযুক্ত কারণ থাকলে ৬০ দিনের পরেও আবেদন করা যায়।

২৩ ধারা অনুযায়ী-

* নিলাম বিক্রিত সম্পত্তিতে দেনাদের কোন স্বত্ব না থাকলে অথবা

* নিলাম বিক্রিত সম্পত্তির বাস্তবে কোন অস্তিত্ব না থাকলে

নিলাম বিক্রির ৬০ দিনের মধ্যে নিলাম ক্রেতা নিলাম বিক্রি রদের আবেদন করবেন।

(২) দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে:

৩৬ ধারা অনুযায়ী-

* ৭ ধারায় নোটিশ জারি হয়নি শুধু এই কারণে নিলাম বাতিল হবে না –

* ৭ ধারার নোটিশ জারি না হওয়ার কারণে যথেষ্ট ক্ষতি হলে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যায়।

* নিলাম বিক্রি রদের জন্য বা পুনর্দখল পাওয়ার জন্য ১ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।

* দেনাদার যদি সার্টিফিকেট কার্যক্রমে উপস্থিত থাকে অথবা এই আইনের ২২ ও ২৩ ধারা অনুযায়ী নিলাম রদের আবেদন করলে দেওয়ানি আদালত এই ধারায় কোন মামলা গ্রহণ করবেন না।

৩৭ ধারা অনুযায়ী-

* সার্টিফিকেট কার্যক্রমে কোন অনিয়ম বা প্রতারণা হলে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে।

* এক্ষেত্রে দেওয়ানি আইন অনুযায়ী উক্ত ঘটনা জানার ৩ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।

উপসংহারঃ সার্টিফিকেট জারির মাধ্যমে মূলত: দেনাদারের নিকট থেকে সরকারি অনাদায়ী পাওনা আদায় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এজন্য তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি নিলাম করে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। অবশ্য এই বিক্রির জন্য অন্য ব্যক্তির ক্ষতি হলে তিনি দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।