সুচনা: বাংলা ‘সাম্রাজ্য বা ইংরেজি empire’ হল একটি রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক ধারণা। এই empire’ শব্দটি লাতিন শব্দ imperium’ থেকে এসেছে যার অর্থ হল ‘শক্তি’ বা কর্তৃত্ব।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দেওয়া যায়। যেমন—
[1] “সাম্রাজ্য বলতে একজন সম্রাটের অধীনস্থ এমন বিস্তৃত ভূখণ্ড বা রাষ্ট্রকে (বিভিন্ন রাজ্যের সমষ্টি) বােঝায় যা রাজ্যের (Kingdom) চেয়ে সুবিস্তৃত হবে, যেখানে সর্বদা বিভিন্ন জাতির মানুষের বাস থাকবে এবং তাদের শাসন করার জন্য সম্রাটের একটি প্রশাসনিক কাঠামাে থাকবে। এক কথায়, শক্তিশালী রাজতান্ত্রিক শাসক বা শাসকগােষ্ঠীর অধীনস্থ সুবিস্তৃত রাষ্ট্রকে সাম্রাজ্য বলা হয়।
[2] অন্যভাবে বলা যায় যে, সাম্রাজ্য হল সেই ভৌগােলিক অঞ্চল, যেখানে সাম্রাজ্যবাদী নীতি কার্যকরী থাকে। সাম্রাজ্য বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠে ওঠে। এই উপাদানগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল বিভিন্ন গােষ্ঠী, জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতি।
[3] রাজনৈতিক ধারণা অনুসারে, সাম্রাজ্য বলতে ভৌগােলিকভাবে বিস্তৃত বিভিন্ন রাজ্য ও জাতির ঐক্যবদ্ধ একক বােঝায় যেখানে শাসনকার্য পরিচালনা করে কোনাে রাজতন্ত্র (সম্রাট বা সম্রাজ্ঞী) অথবা কয়েকজনের একটি ক্ষুদ্র গােষ্ঠী।
[1] খ্রিস্টপূর্ব ত্ৰয়ােবিংশ শতকে মহান সারাগনের নেতৃত্বে মেসােপটেমিয়ায় বৃহৎ আক্কাদীয় সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। সম্ভবত এটিই পৃথিবীর প্রথম সাম্রাজ্য।
[2] খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকে প্রাচীন গ্রিসে বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল।
[3] প্রাচীন কালে বিশাল আসিরীয় সাম্রাজ্যের (২০০০-৬১২ খ্রিস্টপূর্ব) অস্তিত্ব ছিল।
[4] খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকে গ্রিসে তৃতীয় খুটমােসের নেতৃত্বে বৃহৎ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
[5] পার্সিয়া অঞ্চলে প্রথম সাম্রাজ্য ছিল মিডিয়ান সাম্রাজ্য।
[6] পরবর্তীকালে এই অঞ্চলে গড়ে-ওঠা আকিমেনীয় সাম্রাজ্য (৫৫০-৩৩০ খ্রিস্টপূর্ব) ছিল বিভিন্ন সংস্কৃতির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত সুবিস্তৃত ও সফল সাম্রাজ্য। মেসােপটেমিয়া, মিশর, গ্রিসের অংশবিশেষ, থ্রেস, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার বৃহদংশ আকিমেনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে গিয়েছিল।
[7] খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ম্যাসিডনের অধিপতি আলেকজান্ডার গ্রিস থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত এক সুবিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন। তিনি বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
[৪] পরবর্তীকালে পশ্চিমি দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত রােমান সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীতে এক দীর্ঘকালীন ও সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য।
[9] চিনের হান সাম্রাজ্য (২০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২২০ খ্রিস্টাব্দ) ছিল এক দীর্ঘকালীন সাম্রাজ্য।
[10] প্রাচীন ভারতে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সুবৃহৎ মৌর্য সাম্রাজ্য (৩২৪- ১৮৭ খ্রি.পূ.) ও গুপ্ত সাম্রাজ্য (খ্রিস্টীয় ২৭৫ থেকে ষােড়শ শতকের মাঝামাঝি) গড়ে ওঠে।
উপসংহার: প্রাচীন যুগ থেকে দেখা যায় যে, সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন জনপদ, মহাজনপদ বা ক্ষুদ্র বৃহৎ রাষ্ট্রের ভূখণ্ড দখল করে যুগে যুগে শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলির উত্থান ঘটেছিল। আবার সাম্রাজ্যবাদী সেসব রাষ্ট্রের আয়তন বাড়তে বাড়তে ইতিহাসের নিয়মেই তার পতনের পথও প্রস্তুত হয়েছিল।
Leave a comment