সাধারণ ধারণা: সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা নিয়ে নানা মত রয়েছে। প্রথমদিকে এর অর্থ ছিল সামরিক কর্তৃত্ব। পরবর্তীকালে বলা হয় একটি দেশ নিজের স্বার্থে অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনাশ বা সংকুচিত করে সেই দেশ ও জাতির ওপর যে প্রভুত্ব বা কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করে তা হল সাম্রাজ্যবাদ (Imperialism)।

সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা

  • লেনিনের মত: ভি. আই. লেনিন তার ‘Imperialism: the Highest Stage of Capitalism’ গ্রন্থে লিখেছেন, “সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের একচেটিয়া পর্যায়।”

  • হবসনের মত: জন এ. হবসন তার Imperialism: A Study গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “প্রাথমিক স্তরে জাতীয়তাবােধ অন্যদেশে উপনিবেশ গড়ে তােলার প্রেরণা জোগায়, যা পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের রূপ নেয়।” এ ছাড়া সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে মরগ্যানথাট, পামারও পারকিনস, বন, সি ডি বার্নস, সুম্যান, হিলফারডিং, কার্ল কাউৎস্কি, হজ, ওয়েলস এবং বেয়ার্ড সাম্রাজ্যবাদের নানা সংজ্ঞা দিয়েছেন।

সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্য: সাম্রাজ্যবাদের নানা উদ্দেশ্য ছিল, যেমন—[i] অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ, [ii] জাতীয়তাবাদের সম্প্রসারণ, [iii] জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা, [iv] জনসংখ্যার সংকুলান এবং [v] ধর্ম ও সভ্যতার আদর্শ প্রচার।

[1] সামরিক সাম্রাজ্যবাদ: সাম্রাজ্যবাদের একটি প্রধান রূপ হল এর সামরিক রাজনৈতিক দিক। আলেকজান্ডার, নেপােলিয়ান, হিটলারের মতাে সমর বিজেতাগণ সামরিক বিজয়ের মধ্যে দিয়ে অপরের রাজ্য দখল করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ নিজ স্বার্থে অন্য দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে এবং সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে। চেকোশ্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরিতে সােভিয়েত সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্যে অথবা নিকারাগুয়াতে বিদ্রোহীদের মার্কিন তরফে সামরিক অস্ত্র জোগানের মধ্যে সামরিক সাম্রাজ্যবাদের পরিচয় মেলে।

[2] অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ: সামরিক সাম্রাজ্যবাদ ছাড়াও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষার তাগিদেই মূলত এটির উদ্ভব। ইউরােপে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্যায়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশের শিল্পপতিগণ এই সাম্রাজ্যবাদকে ত্বরান্বিত করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি বণিক কোম্পানিগুলির উদ্যোগে এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দরুন সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটে। দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্য লাতিন আমেরিকার ওপর শােষণ চালায়। তৈলসম্পদের লােভে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতাে দেশগুলি আরব বিশ্বের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করে।

[3] সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ: সাম্রাজ্যবাদের আর-একটি রূপ হল সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। অন্য দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অধিবাসীর রুচিবােধ, মননশীলতা, পছন্দ ও অপছন্দের দিকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টাই হল সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের মূল উদ্দেশ্য হল সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতির প্রসার ঘটানাে। অনেক সময় সংস্কৃতির ধ্যানধারণার প্রচারের নামে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রসারেরও চেষ্টা চালানাে হয়, যেমন পূর্বতন সােভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটানাের চেষ্টা চালিয়েছিল। মূলত ১৯৫০-এর দশক থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বাড়তে থাকে।

উপনিবেশবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদের মধ্যে পার্থক্য লেখাে। নয়া উপনিবেশবাদের ফলাফল লেখাে।

উনবিংশ ও বিংশ শতকের উপনিবেশবাদের ইতিবৃত্ত পর্যালােচনা করাে।

উনবিংশ ও বিংশ শতকের সাম্রাজ্যবাদের ইতিবৃত্ত পর্যালােচনা করাে। সাম্রাজ্যবাদের তাৎপর্য লেখাে।