প্রশ্নঃ ‘সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন’- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ সাম্য ও স্বাধীনতা উভয়ই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলােচ্য বিষয় সাম্য ও স্বাধীনতা। একে অপরের সম্পূরক। সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা ভােগ করা যায় না। কেননা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকলে সবল দুর্বলের ওপর হস্তক্ষেপ করে। এমতাবস্থায় দুর্বলের স্বাধীনতা থাকে না। সাম্য স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করে।

‘সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন’: নিম্নে এই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হলাে –

(১) সাম্য স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিতঃ আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান বলে বিবেচিত না হলে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। অর্থনৈতিক সাম্য বিঘ্নিত হলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়। স্বাধীনতা না থাকলে মানুষে মানুষে ব্যবধান সৃষ্টি হয়। লাস্কি, রুশাে, বার্কার প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণও মতবাদের সমর্থন করেছেন।

(২) সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা থাকতে পারে নাঃ রুশাের মতে, সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা থাকতে পারে না। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে যদি ব্যাপক বৈষম্য থাকে, তাহলে সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। সেই সমাজে দুর্বলেরা হয় শােষণের স্বীকার।

(৩) সাম্য ও স্বাধীনতা পরিপূরকঃ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক স্বাধীনতা ব্যতীত সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সাম্যের নিশ্চয়তা না থাকলে কোনাে স্বাধীনতা থাকে না। স্বাধীনতা অর্থ সাম্য আর সাম্য অর্থ স্বাধীনতা।

(৪) সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য স্বাধীনতার অন্তরায়ঃ অধ্যাপক লাস্কি-এর মতে, ধন বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য স্বাধীনতার পথে বাধার সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী ব্যক্তিরাই রাজনৈতিক ক্ষমতাও করায়ত্ত করে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, সমাজ জীবনে সর্বক্ষেত্রে সাম্যনীতির প্রবর্তন স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে। পােল্যান্ড এর মতে, স্বাধীনতার সমস্যা দূরীকরণের একটি মাত্র উপায় আছে, আর তা সাম্যের মধ্যে নিহিত। সুতরাং বলা যায়, সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন।