অথবা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধর্মের ও শিক্ষার ভূমিকা সংক্ষেপে আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজজীবনের প্রধান ভিত। মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের চেতনা থেকেই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি এবং এর মাধ্যমেই সমাজজীবন প্রবহমান। মানবসমাজের বৈচিত্র্য ও জটিলতা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী গিডিংসের মতে, মানবসমাজের যা কিছু মহৎ ও কল্যাণকর, তার সবকিছুই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একযুগ হতে অন্য যুগে বর্তায়। তাই মানবসমাজের বিকাশ ও অগ্রগতি তথা সুশৃঙ্খল সমাজজীবন গঠনের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধর্মের ভূমিকাঃ ধর্ম এমন একটি বিশ্বাস, যা মানুষকে সকল দুর্নীতি, অন্যায় অনুশীলন প্রভৃতি কার্যকলাপ থেকে মুক্ত রাখে। তাই সামাজিক জীবনকে সুন্দর ও আদর্শময় করে গড়ে তােলার জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজজীবনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিম্নে আলােচনা করা হলাে-
(১) সামাজিক ঐক্য সুদৃঢ়করণেঃ সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজেকে একই পরিবারের সদস্য বলে মনে করে। তাদের কাছে ধর্মের বন্ধন রক্তের বন্ধনের চেয়ে বড়। এ বিশ্বাসে তারা এমন একটি সামাজিক ঐক্য গড়ে তােলে যা সমাজ জীবনেকে মধুময় করে তােলে। তাই সামাজিক ঐক্য সুদৃঢ়করণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
(২) সামাজিক মমত্ববােধ সৃষ্টিতেঃ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মূলত মানবমুক্তি তথা মানবকল্যাণের নিমিত্তেই গড়ে ওঠে। তাই ধর্মে আশ্রিত সকল মানুষই একে অপরের প্রতি মায়াজালে আবদ্ধ থাকে। কেউ অভাব-অনটন কিংবা বিপদগ্রস্ত হলে অপর ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগণ তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। এভাবেই সমাজে সামাজিক মমত্ববােধ সৃষ্টি হয়।
(৩) সামাজিক প্রয়ােজন মেটাতেঃ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষ তাদের সামাজিক প্রয়ােজনাদি মিটিয়ে থাকে। ধর্ম একটি মাধ্যম। যার ফলে সামাজিক মানুষ কতকগুলাে নীতি ও বিশ্বাসের দ্বারা গােষ্ঠিবদ্ধ হয়। এভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক মানুষ বিবাহ অনুষ্ঠান, নৈতিক মূল্যবােধ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ দ্বারা সামাজিক জীবন অতিবাহিত করে।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষার ভূমিকাঃ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলাে ব্যক্তির মধ্যে সুপ্ত বুদ্ধিগত ক্ষমতাগুলােকে বিকশিত করে তার ব্যক্তিত্বকে সুগঠিত করা এবং ব্যক্তিকে চরিত্রবান করে গড়ে তােলা। নিচে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তুলে ধরা হলাে-
(১) সামাজিকীকরণ (Socialization): সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের মধ্যদিয়ে শিশুর যে সামাজিকীকরণ শুরু হয়; শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান শিশু-কিশােরদেরকে সমাজে সুযােগ্য সভ্য হিসেবে গড়ে তােলে। তাই সামাজিকীকরণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম।
(২) সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিঃ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সমাজের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। শিক্ষার দ্বারা মানুষ নিজেকে জানতে ও চিনতে পারে, এ জন্য সে সমাজ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। ব্যক্তির মধ্যে দায়িত্ববোধ ও সামাজিক চেতনা না থাকলে সে সমাজের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারে না। শিক্ষার দ্বারাই ব্যক্তির মনে এ দায়িত্ববােধ ও সামাজিক চেতনা সৃষ্টি করা যায়।
(৩) প্রতিভা বিকাশঃ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা নিহিত থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যাক্তি শিক্ষার ছোয়া না পায় ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বিকাশ লাভ করতে পারে না। মূলত শিক্ষা ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে থাকে। ফলে ব্যক্তির মধ্যে যে সমস্ত সৃজনশীল গুণাবলি লুকিয়ে থাকে, শিক্ষার মাধ্যমে তা পরিস্ফুটিত হয়ে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধর্ম ও শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ধর্ম এবং শিক্ষা উভয়ই সমাজজীবনের সাথে একান্তভাবে জড়িত। ধর্ম যেমন ব্যক্তিকে আদর্শ ও নৈতিকতা সম্পন্ন সামাজিক মানুষে পরিণত করে তেমনি শিক্ষা মানুষকে সুন্দর, মুক্ত, মননশীল ও সংস্কৃতিবান আদর্শ ব্যক্তিত্বে পরিণত করে।
Leave a comment