অথবা, সামাজিক দল বা গােষ্ঠি কী?
ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে একা বাঁচতে পারে না। মানুষকে তার প্রাত্যহিক মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য পারস্পরিক সহযােগিতা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির একান্ত প্রয়ােজন। এ জন্যই সৃষ্টির উষালগ্ন থেকেই মানুষ পরস্পরের সান্নিধ্যে দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। দলবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ সমাজবিজ্ঞানী স্মল তার ‘General Sociology’ গ্রন্থে বলেন, ‘দল হচ্ছে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ এমন একটি জনসমষ্টি, যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে এমন একটি সম্পর্ক যা ঐ জনসমষ্টির সদস্যদের একই সূত্রে গ্রথিত করে।
সমাজবিজ্ঞানী রবাট মার্টনের মতে, ‘দল হচ্ছে এমন কিছু লােকের সমষ্টি যারা একে অপরের সাথে স্বীকৃত ও নির্দিষ্ট ধারায় মিথস্ক্রিয়ায় রত হয়, যারা মনে করে যে তারা একটি দলের সদস্য এবং অন্যরাও তাদেরকে আলাদা দলের সদস্য মনে করে।’
সমাজবিজ্ঞানী উইলসন ও রাইল্যান্ড বলেন, ‘যখন দুই বা ততােধিক ব্যক্তির মধ্যে মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা তাদেরকে একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব দান করে, তখন তাদেরকে দল বলা হয়।
বটোমােরের মতে, সাংগঠনিক কাঠামাের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত মানবগােষ্ঠীই হলাে সামাজিক গােষ্ঠী। গােষ্ঠীর মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিও বিদ্যমান থাকে।
সমাজবিজ্ঞানী ইয়ার্ল ইবুনাক তার ‘The Concepts of Sociology,’ গ্রন্থে বলেন, “দল বা গােষ্ঠী হচ্ছে দুই বা ততােধিক লােকের মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি সম্পর্ক, যে সম্পর্ক তাদেরকে অন্যদের থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে যাতে তারা স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।”
সমাজবিজ্ঞানী সিলভার গাইনার তার ‘Sociology’ গ্রন্থে বলেন, “সামাজিক গােষ্ঠী বা দল বলতে কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিকে বুঝায় যারা একে অন্যের সাথে পারস্পরিক স্থায়ী সংহতিতে চুক্তিবদ্ধ।
পরিশেষঃ উপযুক্ত সংজ্ঞাগুলাে বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, পারস্পরিক চেতনা-সমৃদ্ধ এবং একই উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত দই বা ততােধিক ব্যক্তির সমষ্টি, যখন তারা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় রত হয় এবং একটি বিধিবদ্ধ নিয়ম-শৃঙ্খলা দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন তাকে সামাজিক দল বলা হয়।
Leave a comment