গ্রিসে ক্রীতদাসদের একটি বড়াে অংশই আসত যুদ্ধবন্দিদের মধ্য থেকে। প্রভুর ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তি, ক্রীতদাসদের সন্তানসন্ততি, জলদস্যুদের আক্রমণ, অপহরণের দ্বারা জন্মসূত্রে ক্রীতদাসে পরিণত হত।


গ্রিসের বেশিরভাগ ক্রীতদাস গৃহকাজে নিযুক্ত হত। অনেক ক্রীতদাসকে শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন প্রকার শিল্প- উৎপাদনের কাজে নিয়ােগ করা হত। ছােটো ছােটো কারখানাগুলিতেও সমবেতভাবে বহু দাস নিযুক্ত থাকত। এ ছাড়া কৃষিকাজে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করণিকের কাজে, দলিল রক্ষপাবেক্ষপ, রাস্তা তৈরির কাজেও ক্রীতদাসরা যুক্ত থাকত।


গ্রিসে ক্রীতদাস ও তার প্রভুর মধ্যে আনুগত্য ও প্রভুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। প্রভু ভূত্যের এই সম্পর্ক কখনাে কখনাে মধুর হয়ে উঠত। দাসরা প্রভুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করত। তবে বাস্তবে দাসদের ওপর প্রভুর অত্যাচার, নির্যাতন, নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চনা ইত্যাদি কারণে দাস-প্রভু সম্পর্কে সুসম্পর্ক ছিল না।


প্রাচীন গ্রিসের স্পার্টায় ক্রীতদাসদের হেলট বলা হত। এরা ছিল স্পার্টার সর্বাপেক্ষা নির্যাতিত ও শোষিত শ্রেণি। কৃষিকাজ এবং সামরিক দায়িত্বপালন ছাড়াও এদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে লাগানাে হত।


স্পার্টার হেলট ক্রীতদাসদের প্রধান কাজ ছিল চাষবাস। এ ছাড়াও তাদেরকে সামরিক কাজে নিয়ােগ করা হত। হেলটরা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সাহায্য করত।


সাধারণভাবে বলা যায় যে, সম্পত্তি বলতে যা বােঝায় তার সকল বা আংশিক বৈশিষ্ট্য যদি কোনাে ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ করা যায় তবে সেই ব্যক্তি ক্রীতদাস বা দাস বলে গণ্য হয়।


বাইরের থ্রেস, ইলিরিয়া, থেসালি, সিথিয়া, লিডিয়া, সিরিয়া, মিশর, আরব প্রভৃতি দেশ থেকে প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাস আমদানি করা হত।

ইতিহাস চেতনা (History-11 Short Q&A)

রাজনীতির বিবর্তন—শাসনতান্ত্রিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা (History-11 Short Q&A)

রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং এর উপাদান (History-11 Short Q&A)

অর্থনীতির বিভিন্ন দিক (History-11 Short Q&A)

দিগন্তের প্রসার (History-11 Short Q&A)

প্রাচীন এথেন্সের ক্রীতদাসদের থিটিস বলা হত।


গ্রিসের মধ্যে সর্বপ্রথম দাস বাজার গড়ে উঠেছিল ‘কিওস’-এ।


দাসরা স্পার্টায় হেলট নামে, থেসালিতে পেনেসটাই নামে, সিসিলিতে কাইলিরি নামে ও ক্রীটে ক্লারােটাই নামে পরিচিত হত।


প্রাচীন গ্রিসে গৃহকার্যে নিযুক্ত ব্লীতদাসরা গৃহ পরিষ্কার, রান্নাবান্না, শস্য ঝাড়াই, কুয়াে থেকে জল তােলা, কাপড় বােনা, প্রভুর মালপত্র বহন করা, প্রভুর সেবা করা, প্রভুর ভ্রমণসঙ্গী হওয়া প্রভৃতি কাজ করত।


স্পার্টার সমাজ তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল। যথা- [1] স্প্যাটিয়েট, [2] হেলট ও [3] পেরিওকয়।


স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের স্প্যাটিয়েট বলা হত।


স্পার্টায় স্বাধীন নাগরিকরা ‘স্প্যাটিয়েট নামে পরিচিত ছিল।


স্পার্টার ম্যাজিস্ট্রেটরা হেলটদের বিরুদ্ধে বাৎসরিক যুদ্ধ করত।


হেলটদের বিদ্রোহ দমন করার উদ্দেশ্যে ইফর নামে উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা মার্শাল ল’ জারি করতেন।


পেরিওকয়রা স্পার্টার স্প্যাটিয়েট নামে স্বাধীন নাগরিক ও হেলট নামে ক্রীতদাসদের মধ্যবর্তী স্তরে অর্ধ-স্বাধীন প্রজারূপে অবস্থান করত।


পেরিওকয়রা স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের বসতির নিকটবর্তী অঞ্চলে বসবাস করত।


পেরিওকয়রা শাসকগােষ্ঠীর রাজকীয় জমিজমা চাষ করত, শিল্পোৎপাদন ও বাণিজ্যের কাজ সম্পন্ন করত।


প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স নামে অন্যতম পলিস বা নগর- রাষ্ট্রে বসবাসকারী বিদেশিদের মেটিক’ বলা হত।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজের কয়েকটি অচ্ছুত জাতি ছিল ব্রাত্য, নিষাদ, পতিত ক্ষত্রিয় প্রভৃতি।


বৈদিক সমাজব্যবস্থায় পেশাগত ভিত্তিতে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারটি পৃথক বর্ণের সূচনা হয়। আর্যরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিনটি বর্ণে বিভক্ত হয় এবং অনার্যরা শূদ্র বলে পরিচিত হয়। চতুর্বর্ণ কাঠামাের বাইরেও বহু অস্পৃশ্য মানুষ বাস করত, যারা সমাজের পঞ্চম শ্রেণি বলে পরিচিত হত।


বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের কাজ ছিল যাগযজ্ঞ, পূজার্চনা ও অধ্যায়ন-অধ্যাপনা করা। ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল দেশশাসন ও দেশ রক্ষা করা, বৈশ্যদের কাজ ছিল ব্যাবসাবাণিজ্য, কৃষি ও পশুপালন করা এবং শূদ্রদের কাজ ছিল উপরোক্ত তিন শ্রেণির সেবা করা।


যবন, শক, চুন, কুষাণ ও অন্যান্য বিদেশি জাতিগুলি ভারতে এসে দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় সমাজে বসবাস করে। তারা এখানকার সমাজের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। তাদের নিজস্ব সমাজ ও সংস্কৃতির কিছু রীতিনীতিও ভারতীয় সংস্কৃতিতে যুক্ত হলে মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব হয়।


ব্রত থেকে পতিত অর্থাৎ বিধিবিরােধী গােষ্ঠী—এই অর্থে ব্রাত্য। তারা প্রাকৃত ভাষায় কথা বলত। পশুপালন ও যাযাবর জীবনধারাকে তারা জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে।


বৈদিক যুগের অপর একটি জাতি নিষাদরা ছিল অনার্য। নিষাদরা গ্রামাঞ্চলে বা বনেজঙ্গলে বাস করত। বনে জঙ্গলে পশু শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। তারা‌ বৈদিকধর্মের বিধিবিধান না মেনে নিজেদের প্রাচীন ধর্ম পালন করত।


আর্যরা ভারতে আসার পর ঋগবৈদিক যুগে আর্যসমাজে বর্ণপ্রথার প্রচলন ঘটে। বৈদিক বর্ণপ্রথা মূলত বৃত্তি বা কাজের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ঋাগবৈদিক যুগের বর্ণপ্রথা থেকে পরবর্তীকালে ভারতীয় সমাজে জাতিব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে।


ঋগবেদে বৈদিক সমাজের মানুষকে পেশাগত ভিত্তিতে [1] ব্রাহ্মণ, [2] ক্ষত্রিয়, [3] বৈশ্য ও [4] শূদ্র-এই চারটি পৃথক বর্ণে বিভক্ত করা হয়। এই ব্যবস্থা চতুর্বর্ণ প্রথা নামে পরিচিত।


বর্ণ’ ও ‘জাতি’ দুটি পৃথক সত্তা| কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্ণ ও জাতি প্রথার মধ্যে একটি যােগসূত্র আছে। জাতিভেদপ্রথার উদ্ভবে বর্ণপ্রথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করা হয়।


গৌরবর্ণ আর্যরা কৃষ্নকায় ভারতীয়দের ‘অনার্য” বা দস্যু বলে আখ্যা দিয়েছিল।


চারিবর্পের উৎপত্তি সম্পর্কে ঋগবেদের পুরুষসূক্তে বলা হয়েছে যে, আদিপুরুষ ব্রয়ার মুখমণ্ডল থেকে ব্রাহ্মণ, বাছুদ্বয় থেকে ক্ষত্রিয়, উরুদেশ থেকে বৈশ্য ও চরণযুগল থেকে শূদ্রের উৎপত্তি হয়েছে।


বৈদিক সমাজের চারটি বর্ণের বাইরে অবস্থানকারী মুচি, মেথর ও অন্যান্য নিম্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষদের পঞ্চম শ্রেণি বলা হত।


বৈদিক যুগে আর্যদের চতুর্বর্ণ প্রথার প্রথম তিনটি বর্ণ অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরা উপনয়ন ধারণ করত। উপনয়ন ধারণের সংস্কারকে তাদের দ্বিতীয় জন্ম বলে মনে করা হত। এজন্য তারা ‘দ্বিজ’ নামে পরিচিত ছিল ।


বহিরাগত ব্যাকট্রীয়-প্রিক, শক, কুষাণ প্রভৃতি অনার্য জাতিগুলি ভারতীয় সমাজে পতিত ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত।


পতিত ক্ষত্রিয় জাতিকে শাস্ত্রকার মনু ‘ব্রাত্য ক্ষত্রিয় নামে চিহ্নিত করেছেন।


পারসিক ভাষায় ক্ষত্রপ হল প্রদেশ বা অঞ্চলের রক্ষক বা শাসনকর্তা। এটি সংস্কৃত ভাষায় ক্ষত্রপ বা ক্ষ্রপম হিসেবে উচ্চারিত হয়। প্রাচীন ভারতে কোনাে কোনাে শক শাসক ক্ষত্রপ উপাধি ধারণ করেন।


ব্যাকট্রীয়-গ্রিক রাজা মিনান্দার বৌদ্ধ ভিক্ষু নাগসেনের মধ্যে দার্শনিক তত্ত্বের কথােপকথন পালি ভাষায় যে গ্রন্থে আলােচিত হয়েছে তা ‘মিলিন্দপহাে’ নামে পরিচিত।


ভারত-ইতিহাসের ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘রাজপুত যুগ নামে অভিহিত করা হয়।


অগ্নিকূল তত্ত্বটির প্রবক্তা হলেন ব্রাযমণ কবি চাদ বরদাহ।


রাজপুত জাতির উৎপত্তি-সংক্রান্ত উল্লেখযােগ্য দুটি তত্ত্ব হল- [1] অগ্নিকুল তত্ত্ব এবং [2] আর্যজাতি তত্ত্ব।


ব্রাহ্মণ কবি চাঁদ বরদাই তার পৃথিরাজ রাসাে কাব্যে বলেছেন যে, বশিষ্ট মুনি মাউন্ট আবু পাহাড়ে চোদ্দো দিন ধরে যজ্ঞ করে বীরের প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁর লেখা থেকে জানা যায় যজ্ঞের অগ্নিকুণ্ড থেকেই প্রতিহার, চৌহান, পারমার, চালুক্য, কলচুরি, শােলাঙ্কি প্রভৃতি রাজপুত বীরের জন্ম হয়েছে। রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত এই মতবাদ ‘অগ্নিকুল তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।


হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পরবর্তীকালে ভারতের ইতিহাসে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি রাজপুত রাজবংশ ছিল আজমীর ও দিল্লির চৌহান বংশ, গুজরাটের চালুক্য বংশ, কনৌজের গাহড়বাল বংশ, বুন্দেলখণ্ডের চান্দেল্ল বংশ, মালবের পারমার বংশ, গােদাবরীর তীরবর্তী চেদী বংশ, জব্বলপুরের কলচুরি বংশ প্রভৃতি।


তৃতীয় পৃথ্বীরাজ ছিলেন দিল্লি ও আজমীরের চৌহান বংশের ও উত্তর ভারতের শেষ শক্তিশালী হিন্দু রাজা।


তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি ও আজমিরের চৌহান বংশীয় রাজপুত রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ ও তুর্কি আক্রমণকারী মহম্মদ ঘুরির মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ পরাজিত ও নিহত হন।


ঋগবৈদিক যুগের কয়েকজন বিদুষী নারী ছিলেন মমতা, ঘােষা, অপালা, লােপামুদ্রা, বিশ্ববারা, বিশাখা প্রমুখ।


পরবর্তী বৈদিক যুগের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য বিদুষী নারী ছিলেন গাগী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।


পরবর্তী বৈদিক যুগে যে সকল নারী বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যাচর্চা করতেন তাদের ‘সদ্যাদ্বাহা’ বলা হত।


পরবর্তী বৈদিক যুগে যে সকল নারী আজীবন অবিবাহিত থেকে ধর্ম ও দর্শনচর্চা করে জীবন কাটিয়ে দিতেন তারা ব্রহ্মবাদিনী নামে পরিচিত ছিল।


প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের যুগে দুজন উচ্চশিক্ষিতা নারী ছিলেন চন্দনা ও জয়ন্তী।


ঋগ্‌বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীশিক্ষারও যথেষ্ট সুযােগ ছিল। মৌর্যযুগে অভিজাত নারীরা শিক্ষালাভের যথেষ্ট সুযােগ পেতেন এবং শিক্ষিত নারীরা রাজকার্যেও অংশ নিতেন। গুপ্তযুগের নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা করতেন। গুপ্ত-পরবর্তী যুগে নারীশিক্ষা কিছুটা হলেও ব্যহত হয়েছিল।


[1] বেদ শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে যিনি গুরুকুল আশ্রম প্রতিষ্ঠা করতেন তিনি ‘আচার্যা নামে পরিচিত। [2] পাপিনি এবং কাত্যায়ণ মৌর্যযুগের নারী শিক্ষিকা বা অধ্যাপিকাকে উপাধ্যায়া বলে উল্লেখ করেছেন। মনুস্মৃতি অনুসারে, যিনি বেদ শিক্ষাদানের বিনিময়ে প্রাপ্ত বেতনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি হলেন উপাধ্যায়া।


মৌর্য যুগে চার প্রকার শাস্ত্রীয় ও চার প্রকার অশাস্ত্রীয় বিবাহরীতির প্রচলন ছিল।


অর্থশাস্ত্রে আট প্রকার বিবাহরীতির উল্লেখ আছে। যথা- [1] ব্রাহ্ম, [2] দৈব, [3] আর্য, [4] প্রাজাপত্য, [5] অসুর, [6] গাল্ধব, [7] রাক্ষস এবং [৪] পৈশাচ।


মৌর্য পরবর্তী যুগে উচ্চবর্ণের পুরুষ ও নিম্নবর্ণের নারীর মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে ‘অনুলােম বিবাহরীতি বলা হত।


মৌর্য যুগে পিতা কোনাে চরিত্রবান পাত্রকে আমন্ত্রণ করে তার হাতে কন্যা সম্প্রদান করাকে ব্রাহ্ম বিবাহ বলা হত।


মৌর্য যুগে অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে পাত্রপাত্রী স্বেচ্ছায় বিবাহ করলে তাকে গান্ধর্ব বিবাহ বলা হত।


মৌর্য পরবর্তী যুগে নিম্নবর্ণের পুরুষ ও উচ্চবর্ণের নারীর মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে প্রতিলােম’ বিবাহরীতি বলা হত।


গুপ্ত যুগে চার প্রকার বিবাহরীতির বহুল প্রচলন ছিল। যথা—ব্রায়, দৈব, আর্য, প্রাজাপত্য বিবাহ।


প্রাচীন ভারতে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীকে সম্পত্তি রাখার যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তার নাম স্ত্রীধন।।


অর্থশাস্ত্র বিবাহিতা নারীকে সর্বোচ্চ ২০০০ পণ রৌপ্যমুদ্রা নিজের কাছে রাখার অধিকার দিয়েছিল।


ঋগ্‌বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগে গৃহস্থালির পরিচালনায় নারীর একাধিপত্য ছিল। মৌর্যযুগে নারীরা গৃহস্থালি সামলানাের পাশাপাশি নৃত্য ও সংগীতের শিক্ষা গ্রহণ করার সুযােগ পেত। গুপ্তযুগে গুরুজনদের সেবা, স্বামীর বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়ন, ভৃত্যদের পরিচালনা, গৃহ পরিষ্কার, গবাদি পশুর দেখাশােনা, প্রাত্যহিক খরচের হিসাব রাখা, সুতাে কাটা, কাপড় বােনা প্রভৃতি ছিল নারীদের দৈনন্দিন কাজ।


মনুসংহিতায় ও যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ছয় প্রকার স্ত্রীধনের উল্লেখ রয়েছে। যথা- [1] অধ্যপ্নি, [2] অধ্যবাহনিক, [3] প্রীতিদত্ত, [4] পিতৃদত্ত, [5] মাতৃদত্ত এবং [6] ভ্রাতৃদত্ত। অর্থশাস্ত্রে চার প্রকার স্ত্রীধনের উল্লেখ আছে। যথা[1] শুল্ক, [2] অধিবেদনিক, [3] অন্বাধেয় এবং [4] বন্ধুদত্ত।


স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর কিছু কিছু অধিকার ছিল। স্ত্রী নিজের সম্পত্তি যথেচ্ছভাবে দান করতে চাইলে স্বামী তাতে বাধা দিতে পারত। স্ত্রীর কাছে ২০০০ পণের বেশি অর্থ সঞ্চিত হয়ে গেলে অতিরিক্ত অর্থ স্ত্রীর হয়ে স্বামী রাখত। স্বামীর অত্যন্ত প্রয়ােজনের মুহূর্তে স্ত্রীর সম্পত্তি নিজের হাতে নিতে এবং তা বিক্রি করতে পারত।


প্রাচীন মিশরে রাজনৈতিক কর্তৃত্বপরায়ণা দুজন নারী ছিলেন নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রা।


প্রাচীন ভারতে রাজনৈতিক কর্তৃত্বপরায়ণ তিনজন নারী ছিলেন সুলতান রাজিয়া, রানি দুর্গাবতী ও নূরজাহান।


নেফারতিতি ছিলেন মিশরের ফ্যারাও চতুর্থ আমেনহােটেপ-এর পত্নী ও পরবর্তীকালে মিশরের রানি।


মিশরের সর্বশেষ ফ্যারাও ছিলেন রানি ক্লিওপেট্রা।


ব্রুটাস নামে জনৈক আততায়ী ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজারকে হত্যা করেন।


অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধ রােমান সম্রাট অক্টাভিয়াস ও মিশরের রানি ক্লিওপেট্রার মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধে অক্টাভিয়াস জয়লাভ (৩১ খ্রি.পূ.) করেন।


রানি দুর্গাবতী ছিলেন বর্তমান মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত গন্ডােয়ানা রাজ্যের রানি।


১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে মােগল সম্রাট আকবর ও পণ্ডেয়ানার রানি দুর্গাবতীর বাহিনীর মধ্যে নররাই-এর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এই যুদ্ধে দুর্গাবতীর বাহিনী পরাজিত হয়।


দিল্লির সুলতান ইলতুৎমিসের কন্যা রাজিয়া ছিলেন দিল্লির প্রথম মহিলা শাসক।


গন্ডােয়ানার রানি দুর্গাবতী মােগল সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার উপক্রম হলে তিনি নিজেকে ছুরিবিদ্ধ করে প্রাণ ত্যাগ করেন (২৪ জুন, ১৫৬৪ খ্রি.)।


রাজিয়া মুহজাবউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী ও কুতুবউদ্দিন হাসান ঘুরিকে প্রধান সেনাপতি (মালিকই-লঙ্কর) পদে নিয়ােগ করেন।


সুলতান রাজিয়া চল্লিশের চক্র ভেঙে দেন।


রাজিয়া ভাতিণ্ডা দুর্গ অভিযানকালে তার সেনাপতি ইয়াকু খাঁ নিহত হন ও আলতুনিয়ার হাতে রাজিয়া বন্দি হন।


জাহাঙ্গিরের অসুস্থতা ও অন্ধ পত্নীভক্তির সুযােগে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নূরজাহান তাঁর নিকটজনদের নিয়ে একটি গােষ্ঠী গােড়ে তােলেন এটি ‘নূরজাহান চক্র’ নামে পরিচিত।


নূরজাহান চক্রের প্রধান সদস্য ছিল নূরজাহান, তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগ, ভ্রাতা আসফ খা, যুবরাজ খুররম (শাহজাহান) প্রমুখ।