প্রশ্নঃ সামাজিক ইতিহাস কী বিজ্ঞান? আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ ইতিহাস সমাজ জীবনের দর্পণ। ইতিহাসের মধ্য দিয়ে মানুষের অতীত জীবনের প্রতিচ্ছবি বর্তমানে মূর্ত হয়ে ওঠে। মানব সমাজের উষালগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমাজবদ্ধ মানুষের আচার-আচরণ, প্রথা-প্রতিষ্ঠান, আর্থ সামাজিক সংগঠন প্রভৃতির মূর্ত প্রতিচ্ছবি সামাজিক ইতিহাসে ফুটে ওঠে। পরিবর্তনশীল সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের বিকাশ এবং সামাজিক মূল্যবােধের ধারাকে কেন্দ্র করেই সামাজিক ইতিহাস গড়ে ওঠে।
সামাজিক ইতিহাস বিজ্ঞান কিনাঃ নিম্নে এ বিষয়ে আলােচনা করা হলো-
প্রথমতঃ অনেক তাত্ত্বিক দাবি করেন যে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, নৃ-বিজ্ঞান প্রভৃতি সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলাে বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে। কেননা এ বিষয়গুলাে তাদের পঠন-পাঠন ও গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। এ প্রেক্ষিতেই সামাজিক ইতিহাস বেত্তাগণ সামাজিক ইতিহাসকে বিজ্ঞানের পর্যায়ে ফেলেন। তাদের যুক্তি হলাে ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বর্ণনা করতে সচেষ্ট থাকেন।
দ্বিতীয়তঃ ইতিহাসবিদগণ ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সংকীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে নিরপেক্ষ থাকেন। এক ইতিহাসবিদ যখন রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হয়ে সঠিক প্রর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক চিত্র তুলে ধরেন তখন অবশ্যই তা বিজ্ঞানের মর্যাদার দাবি রাখে।
তৃতীয়তঃ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহ যেমনি তার তত্ত্বসমূহ ধারাবাহিকভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে গবেষণা করে থাকে; তেমনি সামাজিক ইতিহাসবিদগণ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ন্যায় বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে সামাজিক ইতিহাসকে তুলে ধরতে পারবেন কিনা এ নিয়ে মতদ্বৈধতা আছে। এর উত্তর হ্যাঁ বা না বলে শেষ করা যায় না।
চতুর্থতঃ সামাজিক ইতিহাসবেত্তাগণ সামাজিক ঘটনাবলীকে যথাসম্ভব অপরিবর্তিত রেখে যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এজন্য সামাজিক ইতিহাসকে কল্পকাহিনী হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। সামাজিক ইতিহাসে প্রত্যেকটি বিষয়ই সঠিকভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে।
পঞ্চমতঃ বিজ্ঞানের অন্যতম একটি বিষয় হলাে ভবিষদ্বানী। অর্থাৎ কোন বিষয় বিজ্ঞান হবে কী না তা নির্ধারিত হয়ে থাকে তার ভবিষদ্বাণী করার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। ইতিহাসবিদ কোনাে অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পবিবর্তনকে ব্যাখ্যা, করার ক্ষেত্রে সামাজিক ইতিহাসের ধারাবাহিক আলােচনার ওপর গুরুত্বারােপ করে থাকে এবং তার প্রেক্ষাপটে সমাজের ভবিষ্যৎ বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সমাজবিজ্ঞানকে যেভাবে বিজ্ঞানের পর্যায়ে গণনা করা হয়, তেমনি সমাজবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত ‘সামাজিক ইতিহাসকে বিজ্ঞানের পর্যায়ে ফেলা যায়। সামাজিক ইতিহাসের মাধ্যমে অতীত সমাজের সমাজ-সংস্কৃতি, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান, মূল্যবোেধ ইত্যাদি বিষয়গুলাে সঠিকভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে।
Leave a comment