ভূমিকাঃ সামাজিকীকরণ-এর অন্যতম কাজ হলাে ব্যক্তির Personality কে উন্নীত করা। জীবনব্যাপী এ Process এর মধ্য দিয়ে শিশু তার স্বীয় সমাজের Values, Norms, Skill ইত্যাদি শেখে এবং সামাজিক জীবে পরিণত হয়। কিন্তু কীভাবে বাল্যকাল থেকে ব্যক্তির self বা core of personality গড়ে ওঠে, তা নিয়ে মতান্তর রয়েছে। নিম্নে বিভিন্ন সমাজ মনােবিজ্ঞানীদের মতবাদ নিয়ে আলােচনা করা হলােঃ
কুলির looking glass process তত্ত্বঃ Charles Honton Cooley [1864-1929] একজন প্রখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ ছিলেন। যিনি পরবর্তীতে একজন মনােবিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হন। তিনি তার Human nature and social order গ্রন্থে সামাজিকীকরণের তত্ত্ব প্রদান করেন।
C.H Cooly মনে করেন, self হলাে প্রকৃতপক্ষে একটা social product যা নানা ধারায় পূর্ণতা পেয়ে থাকে। বাল্যকালে শিশুর কোনাে self থাকে না বরং socialization প্রক্রিয়ায় তা ধীরে ধীরে ব্যাপ্তি লাভ করে। Self বা Personality সম্পর্কিত তত্ত্ব হতে C.H cooley বলেন- নবজাত শিশুর Self বিকাশে এবং Personality গঠনে Primary Group এর ভূমিকা বেশি কার্যকর। তিনি মনে করেন, শিশুর personality গঠনে যে জিনিসটি বেশি কাজ করে তা হলাে অন্যে কি ভাবছে আমাকে নিয়ে এ বােধটি। যাকে তিনি বলেছেন- Loolking glass self process. তিনি সমাজকে Looking glass বলে চিহ্নিত করেছেন। ব্যক্তি অন্যের সামনে নিজকে উপস্থাপন করে কিংবা ধারাবাহিকভাবে চলমান। Cooley এর এ ধারণাটি হচ্ছে এমন একটি প্রতিবিম্ব, যা তৈরী হচ্ছে অন্যের দ্বারা। cooley এর মতে, Our sense of self is the reaction of the ideas about us that we perceive in the mind of others. আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিবিম্ব সম্পর্কে যে ধারণা তা হলাে অনেকগুলাে আয়না দ্বারা সৃষ্টি একটি প্রতিবিম্ব আর এ আয়নাগুলাে হচ্ছে চারপাশের মানুষের চোখ। Cooley প্রদত্ত Self সম্পর্কিত এ তত্ত্বটি পুরাে অর্থে imagination কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত থাকে।
Walton Lippmon: Walton Lippmon বলেছেন, Pictures in our heads. অর্থাৎ ব্যক্তির চারিদিকের পরিচিত মানুষের কিংবা যাদের সাথে তার Intraction হচ্ছে তাদের মধ্যে তার স্বীয় Image খোজার চেষ্টা করি। এক কথায় বলা যায়, ব্যক্তির action গুলাে সমাজ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। এ থেকেই মূলত Cooley-এর Self conception-এর চিত্র ফুটে ওঠে।
G.H. Mead’s Theory: George Herbert Mead [1863-1931] একজন মার্কিন সমাজ মনােবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম সামাজিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিখ্যাত Mind, self and Society গ্রন্থে childhood socialization সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। G. H Mead অপর স্বদেশি মনােবিজ্ঞানী C.H Cooly-এর looking glass process-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বর্ণনায় Self development-এর Theory দিয়েছেন। Cooley এর মতাে Mead ও মনে করেন Self is the social prodect. তবে তার Theory এর মূল সুর হলাে Taking the role of the other. Mead- self development এর বিশ্লেষণে Cooley এর তুলনায় গভীরে পৌছান। এ কারণে বলা হয়, Meads theory is nothing but the elaboration of Cooley’s view”.
Mead মনে করেন, মানুষ সামাজিক বিকাশের ফল। অন্যের ক্রিয়ায় শিশুরা স্বতঃস্ফূর্ত নাড়া দেয়। শিশু অন্যের আচরণের ব্যাখ্যা করতে পারে না। আর তাদের চারপাশের কোনাে জিনিসের মানেও বুঝতে পারে না। এমনকি তার কোনাে আচরণে অন্যের সংস্পশও সে বুঝতে পারে না। কিন্তু যখন সে বাইরের জগতে প্রবেশ করে অন্যের আচরণের মখােমখি হয়, কিংবা অন্যের Role বিশ্লেষণ করতে শেখে তখনই সে তার Self conception সম্পর্কে সচেতন হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে Mead ব্যক্তির Self বিকাশের দুটি প্রধান স্তর বর্ণনা করেন। যথা- (i) pre-verbal stage, (ii) verbal stage এস
(i) Pre-verbal stage: এ পর্যায়টিকে stage of simple imitationও বলা হয়। তবে Barnourd Mett এটিকে The preparatory stage বলে আখ্যা দেন। এ পর্যায়ে শিশু অন্যের সাথে তার Interaction শুরু করে। এ পর্যায়ে শিশু Self কি তা বুঝে না। বরং সে কেবল তার পিতামাতা, ভাই-বােন ও আত্মীয়দের বিভিন Role of attitude কে অনুকরণ করে।
(ii) Verbal stage: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে শিশুরা কথা বলতে শেখে এবং সামাজিক অর্থের নতুন দিক উন্মােচন করে। এবং তবে যেহেতু verbal stage টি দীর্ঘ একটি ব্যাপার, তাই Mead এর দু’টি ভাগ দেখিয়েছেন।
(1) Play Stage: এ স্তরে এসে শিশু পূর্বের Pre-verbal বা Imitation Stage-এ যে জিনিসগুলাে অনুকরণ করে তার বাস্তব রূপ খুঁজে পায়। এ স্তরে শিশু ডাক্তার, পিতা-মাতা, ভাই ইত্যাদি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং এ অভিনয়ের মাধ্যমে শিশুর মানসিক পরিবর্তন সাধিত হয়।
(2) Game stage: এ স্তরে এসে শিশুকে অবশ্যই শিখতে হয়। শুধুমাত্র একজন তার কাছে কি আশা করে তা নয়, গােটা সমাজ তার কাছে কি প্রত্যাশা করে সেটা। এই স্তরে এসে শিশু তার সামাজিক পরিচিতি লাভ করে। তাকে নিজের ভূমিকায় থেকে সামাজিক রীতিনীতি ও আইন-কানুন মেনে চলতে হয়।
Frueds Theory: Sigmand Frued ছিলেন একজন বিখ্যাত মনােবিজ্ঞানী, মনােসমীক্ষক, দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী। মনােবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযােগ্য। মনস্তাত্ত্বিকদের মধ্যে Frued- ই প্রথম ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্পর্কে অর্থবহ আলােচনা করেছেন। Frued-এর মতে, ব্যক্তি এবং সমাজ একটি স্থায়ী বিরােধী কাজে লিপ্ত থাকে। তিনিও সমাজ ও ব্যক্তিকে অখণ্ড সত্তা হিসেবে দেখেননি। তিনি Self কে তিনটি উপাদানে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেখানাে হলাে:
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে Id বলা হয়। সহজাত প্রবৃত্তিসহ বংশগতির সূত্রে প্রাপ্ত সকল প্রকার মনােবৃত্তির প্রক্রিয়াই Id বা আদিম সত্তার অন্তর্ভুক্ত। আদি সত্তা হলাে সকল মানসিক শক্তির আধার। এই প্রত্যয়ের ওপর ভিত্তি করে Ego ও Super Ego নিজেদের কাজ করে থাকে।
Ego: আদি সত্তার কামনা-বাসনার যথােপযুক্ত সমাপ্তি সাধনের জন্যই বিবেকের জন্ম। Ego- কে ব্যক্তিত্বের কার্যনির্বাহী কর্ণধার বলা হয়ে থাকে। Id-কে বাদ দিয়ে Ego- এর কোনাে অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এবং Ego কখনাে Id হতে স্বাধীন হতে পারে না।
Super Ego: Super Ego কে চিরাচরিত মূল্যবােধ এবং সামাজিক শাস্তি প্রদানের অভ্যন্তরীণ পর্ব বলা হয়। Super Ego হলাে ব্যক্তিত্বের নৈতিকতার ধারক ও বাহক। এটা সমাজের প্রচলিত মূল্যবােধের স্বীকৃতি দেয় আবার নিজস্ব বিবেকেরও মূল্য দেয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, সামাজিকীকরণ জীবনব্যাপি একটি প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে শিশু তার স্বীয় সমাজের আচার-আচরণ, মূল্যবােধ, রীতিনীতি, দক্ষতা প্রভৃতি শেখে এবং সামাজিক জীবে পরিণত হয়। সামাজিকীকরণের অন্যতম কাজ হলাে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে উন্নীত করা। কীভাবে বাল্যকাল থেকে ব্যক্তির Self বা core of personality গড়ে ওঠে এ নিয়ে মতান্তর রয়েছে তা উপযুক্ত আলােচনায় বুঝা যায় । মতান্তর থাকলেও এ সম্পর্কে বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের আলােচনার ফলে সামাজিকীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানে স্থান পেয়েছে।
Leave a comment