সামরিক বাহিনী হল প্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী বিশেষভাবে সুসংহত এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-সম্বলিত। রাজনীতিক ব্যবস্থার মধ্যে সামরিক বাহিনী একটি গোষ্ঠী হিসাবেই অবস্থান করে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অনুসারে ভূমিকা পালন করে। বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম একটি গোষ্ঠী হিসাবে সামরিক বাহিনীর কতকগুলি অনন্য বৈশিষ্ট্য বর্তমান। সামরিক বাহিনীর এই বৈশিষ্ট্যগুলি অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর পার্থক্যকে প্রতিপন্ন করে। সামরিক বাহিনীর এই মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা আবশ্যক। তা হলে অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীসমূহের থেকে সামরিক বাহিনীর স্বাতন্ত্র্য সম্যকভাবে অনুধাবন করা যাবে।
অ্যালান বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে অর্থবহ আলোচনা করেছেন। অধ্যাপক বলের অভিমত অনুসারে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই সামরিক বাহিনীর কতকগুলি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত উপাদান পরিলক্ষিত হয়। এই উপাদানগুলির ভিত্তিতেই অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর স্বাতন্ত্র্য বা পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এই পার্থক্যমূলক বৈশিষ্ট্যগুলির পর্যালোচনা থেকেই এই ধারণা সহজেই জন্মাতে পারে যে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের ঘটনা অধিকতর হারে ঘটাই স্বাভাবিক। সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন মনে জাগতে পারে যে, সামরিক হস্তক্ষেপের পথে কীসের প্রতিবন্ধকতা বর্তমান?
The Man or Horseback শীর্ষক গ্রন্থে ফাইনার (S. E. Finer)-কে অনুসরণ করে এ প্রসঙ্গে বল যে দীর্ঘ মন্তব্য করেছেন, তা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: The armed forces have a characteristic feature which distinguishes them from other groups in all political systems, and these characteristics would lead one to expect that the military would intervene more frequently than it does they raise the question of what prevents direct military intervention, rather than the question of why it happens at all.”
এস. ই. ফাইনার, লুসিয়ান পাই এবং অ্যালান বলের বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর নিম্নলিখিত পার্থক্যমূলক বৈশিষ্ট্যের কথা বলা যায়।
(১) ক্রমোচ্চ স্তরবিন্যস্ত সাংগঠনিক কাঠামো: সামরিক বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এই কাঠামো ক্রমোচ্চ স্তরবিন্যস্ত (hierarchical) এবং কেন্দ্রীভূত (centralised)। সাংগঠনিক কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আমলাতন্ত্রের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। সামরিক বাহিনীতে সকল সদস্যের অবস্থান উচ্চতর স্তর থেকে নিম্নতর স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। প্রতিটি স্তরের সৈনিক কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্দিষ্ট। আদেশ-নির্দেশ জারি এবং তা সুচারুরূপে সম্পাদিত হয় উচ্চতর স্তর থেকে নিম্নতর স্তর পর্যন্ত। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ-নির্দেশ সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে অধঃস্তন কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকে। সামরিক বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে বল বলেছেন: “The structure of the armed forces is hierarchical centralised putting a premium on rapid communications.” সাংগঠনিক কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক গোষ্ঠীর অমিল অনস্বীকার্য। অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীসমূহের সাংগঠনিক কাঠামো সে অর্থে ক্রমোচ্চ স্তরবিন্যস্ত নয়। তা ছাড়া আদেশ-নির্দেশ প্রদান এবং তা পালিত হওয়ার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর ধারা অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে অনুসৃত হয় না।
(২) শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার কঠোরতা: সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা হল উদাহরণের বিষয়। সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যকে সময়ানুবর্তিতা এবং কঠোর কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ-নির্দেশ বিনা বাক্যব্যয়ে মান্য করে চলতে হয়। শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর বিধি-ব্যবস্থা হল অত্যন্ত কঠোর এবং আপসহীন। নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং আচরণবিধি অমান্য করার অভিযোগে বিশেষ সামরিক আদালতে সামরিক বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যের বিচার হয়। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হয়। এই শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “Discipline and obedience to higher commands are considered of fundamental importance, and here one should not the bureaucratic obedience, in Weber’s sense, to the rank and not to the individual who holds the rank.” সমাজের অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাপার নেই এমন নয়, তবে সামাজিক গোষ্ঠীসমূহের সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার বিষয়টি অত কঠোর নয়। কোন সামাজিক গোষ্ঠীর কর্তৃপক্ষ নিয়ম-শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের জন্য বড় জোর দোষী সদস্যের সদস্যপদ কেড়ে নিতে পারে। সদস্যদের কোন রকম দৈহিক শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা এই সব কর্তৃপক্ষের নেই। কারণ সামাজিক গোষ্ঠীগুলির সদস্যপদ গ্রহণ বা বর্জন নিতান্তই স্বেচ্ছামূলক। প্রকৃত প্রস্তাবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাপরায়ণতা পরিলক্ষিত হয়, অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যসমূহের মধ্যে তা থাকে না।
(৩) অসামরিক জনজীবন থেকে কঠোর বিচ্ছিন্নতা: দেশের জনসাধারণের জীবনধারার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জীবনযাত্রার কোনরকম সংযোগ থাকে না। সামরিক বাহিনীর সকলে স্বতন্ত্রভাবে একটি নির্দিষ্ট ব্যারাকে বসবাস করে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং নির্দিষ্ট রং এক রকমের হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তাদের মধ্যে বিশেষ একটি ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত মনোভাবের সৃষ্টি করা হয়। তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট ও বিশেষ ধরনের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে। তাদের জীবনযাত্রার ধারণা, ধরন-ধারণ, আচরণ পৃথক প্রকৃতির হয়। সামরিক বাহিনীর পদস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এই বিষয়টি স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয়। সামগ্রিক বিচারে জনজীবন থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও বিচ্ছিন্নতার কারণে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের পৃথক গোষ্ঠীভুক্ত বলে মনে করে। জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকে কঠোর বিচ্ছিন্নতা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও নিয়মানুবর্তিতার স্বার্থে অপরিহার্য মনে করা হয়। এই কারণে অসামরিক জনগণ ও তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর কোনরকম যোগাযোগ থাকে না। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “The armed force in varying degrees emphasise their separation from civilian society by separate barracks, distinctive uniforms and indoctrination of recruits in the history and traditions of that particular branch of the armed forces, resulting in a pride in that tradition and a distinct esprit de corps.” এ প্রসঙ্গে বল আরও বলেছেন: “The consequent values help by members that armed forces esparable the officers, may distinguish them from the rest of society in a way that is not true of other comparable groups such as police forces.” অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠী বা সংগঠনসমূহের সদস্যদের ক্ষেত্রে এ কথা খাটে না। সামাজিক সংগঠনসমূহের সদস্যদের জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ বর্তমান থাকে। শুধু তাই নয়, সামাজিক সংগঠনসমূহের নিজেদের মধ্যেও পারস্পরিক সংযোগ সম্পর্ক বর্তমান থাকে।
সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচী থাকে। সামরিক বাহিনীর সাধারণ প্রশিক্ষণ ছাড়াও, বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের জন্য স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়। এই প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া হিসাবে সতত ক্রিয়াশীল থাকে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রাত্যহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে; আবার বিশেষ প্রশিক্ষণের কর্মসূচীও থাকে। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “Sometimes the military ensures for political re cruits different type of education from early age from that of civilian society.” Fac ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে দক্ষতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করা হয়। তা ছাড়া পরিবর্তিত সামরিক প্রযুক্তি ও নতুন কলাকৌশলের সঙ্গে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পরিচিত করা হয়। আবার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী সদস্যদের মধ্যে অভিপ্রেত মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি চারিত্রিক গুণাবলী গড়ে তোলা হয়। অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের জন্য বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বড় একটা অনুভূত হয় না। এই কারণে সদস্যদের দৈহিক বা মানসিক প্রশিক্ষণের জন্য নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয় না।
(৫) হিংসার মুখ্য হাতিয়ারের অধিকারী: বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ করে দেশের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে ত বটেই, আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা করার জন্য সামরিক বাহিনী বলপ্রয়োগ করে। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে পুলিশ বাহিনী ব্যর্থ হলে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই সামরিক বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়। কর্তব্য সম্পাদনে সামরিক বাহিনী বলপ্রয়োগ ও হিংসার আশ্রয় গ্রহণ করে। বলের অভিমত অনুসারে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই সামরিক বাহিনী হল হিংসার মুখ্য হাতিয়ারের একচেটিয়া অধিকারী। তিনি বলেছেন: “Above all the military monopolises the chief instruments of violence in the political system.” অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর এ কথা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক।
(৬) দক্ষিণপন্থী বা বামপন্থী মূল্যবোধের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে: সামরিক বাহিনী তার কর্মসূচী ও কার্যপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণপন্থী বা বামপন্থী মতাদর্শ বা মূল্যবোধের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। সামরিক বাহিনী সব সময় দক্ষিণপন্থী চিন্তা-চেতনার দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়, এ ধারণা যথার্থ নয়। দক্ষিণপন্থী সরকারকে অপসারিত করে সামরিক বাহিনী বামপন্থী সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আবার বিপরীতক্রমে সামরিক বাহিনী বামপন্থী সরকারের অবসান ঘটাতে এবং দক্ষিণপন্থী সরকারকে ক্ষমতাসীন করতে পারে। এ রকম উভয় ধরনের ঘটনার অসংখ্য নজির মানবসভ্যতার সাম্প্রতিক ইতিহাসে বর্তমান। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “There are many examples of military intervention to support radical policies of both the right wing and left-wing varieties.”
(৭) জাতীয় স্বার্থের প্রতিভূ: সামরিক বাহিনীর মধ্যে যে মূল্যবোধ, মতাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান থাকে তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয় যে, এই গোষ্ঠী কায়েমী ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। সামরিক বাহিনী হল যথার্থ জাতীয় স্বার্থ ও সংহতির রক্ষক ও পৃষ্ঠপোষক। স্বদেশপ্রীতি ও আত্মত্যাগের গুণাবলী সামরিক বাহিনী সদস্যদের মধ্যে সঞ্চারিত থাকে। কিন্তু অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলি সাধারণত কায়েমী ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের বিচার-বিবেচনার দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে এই সাধারণ নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমও আছে। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “… the military is above sectional, vested interest conflicts in the political process, and that the military is the embodiment of the national interest, albeit an authoritarian, disciplined conception of the national interest.” এ প্রসঙ্গে বল আরও বলেছেন: “… these distinctive features do lead the military to the belief that it is the only body aware of what constitutes the true national interests, and that only the military is capable of implementing policies to protect that interest.”
(৮) সামরিক বাহিনী সাধারণত অসামরিক সরকারের উপর প্রত্যক্ষভাবে এবং বিশেষ ধরনের কোন চাপ সৃষ্টি করে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক স্বার্থে অসামরিক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “It is true that military influence is used to protect the armed forces from civilian mismanagement such as a failure to expand them or equip them with the necessary modern weapons to carry out the important functions of protecting national territory from foreign aggression, and sometimes military pressure may result from junior officers being dissatisfied with their promotion prospects.” কিন্তু অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলি গোষ্ঠীগত স্বার্থে সরাসরি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে।
(৯) সামরিক বাহিনী সাধারণত সাংবিধানিক আইন অথবা দেশের আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে গঠিত। এই বাহিনীর কাজকর্মও নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বারা। অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলি এভাবে গঠিত হয় না। তবে সামাজিক গোষ্ঠীগুলিকে সর্ববিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করে চলতে হয়।
(১০) সামরিক বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য হল দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করাই হল এই বাহিনীর মুখ্য দায়িত্ব। এই কারণে সামরিক বাহিনীকে জাতীয় স্বার্থের রক্ষক হিসাবে অভিহিত করা হয়। অপরপক্ষে অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলি সাধারণত গোষ্ঠীগত স্বার্থসাধনের ব্যাপারে সতত সক্রিয় থাকে।
(১১) সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে শারীরিক সামর্থ্য ও দৈহিক যোগ্যতার উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলির সদস্যপদ প্রদানের ক্ষেত্রে দৈহিক যোগ্যতার উপর জোর দেওয়া হয় না।
(১২) অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীসমূহ রাজনীতিক কাজকর্মে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারে এবং করে। নির্বাচনী রাজনীতিতেও তারা রাজনীতিক দলের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থা বা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধেও সামাজিক গোষ্ঠীগুলি আন্দোলনে সামিল হতে পারে। এ সব কথা সামরিক বাহিনী প্রসঙ্গে সাধারণত প্রযোজ্য নয়।
Leave a comment