অথবা, সামন্তবাদ বলতে কী বুঝ?
ভূমিকাঃ রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগ একটি বিরাট স্থান দখল করে রয়েছে। এই মধ্যযুগের সূত্রপাত নিয়ে বির্তকের অবকাশ থাকলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, ইউরােপীয় ইতিহাসের ষষ্ঠ শতাব্দীর টিউটনিক উপজাতিদের হাতে রােমান সাম্রাজ্যের পতনকাল থেকে মধ্যযুগের সূচনা এবং তা পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত।
সামন্তবাদঃ মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা সামন্তবাদ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। রােমান সাম্রাজ্যের পশ্চিম অংশে টিউটন উপজাতিরা সাম্রাজ্য বিস্তার করলে পুরাতন ও নতুন শাসনব্যবস্থার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এই অসামঞ্জস্যতা দূর করার লক্ষ্যে এক নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তােলা হয় যা সামন্তবাদ নামে অভিহিত হয়।
সামন্তবাদের দু’টি অবয়ব লক্ষ্য করা যায়ঃ (১) রাজনৈতিক সামন্তবাদ (Political Feudalism) ও (২) অর্থনৈতিক সামন্তবাদ (Economic Feudalism)।
(১) রাজনৈতিক সামন্তবাদঃ রাজনৈতিক সামন্তবাদে প্রতিরক্ষা, বিচারসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড ইত্যাদি কেবল সম্রাট বা রাজার হাতে ন্যস্ত না থেকে তা বিকেন্দ্রিক হয়ে পড়বে অর্থাৎ অন্যান্য ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাতে অর্পিত হবে। তবে সামন্তপ্রভুরা প্রজাদের আনুগত্যের বদৌলতে তাদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
(২) অর্থনৈতিক সামন্তবাদঃ অর্থনৈতিক সামন্তবাদ প্রধানত ভূমিব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এতে ভূমির মালিকানাস্বত্ব বিলুপ্ত হয় এবং ইজারাস্বত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগের একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে সামন্তবাদ পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সামন্তবাদের পরিপূর্ণতা একই ব্যক্তির হাতে সাধিত ঘটে। সামন্তবাদ তাই মধ্যযুগের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য। মধ্যযুগের এই সামন্তবাদের সঙ্গে তখনকার রাষ্ট্র তথা কমনওয়েলথের সমন্বয় সাধিত হয়।
Leave a comment