প্রশ্নঃ সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ বর্ণনা কর।
অথবা, সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ সামাজিক স্তরবিন্যাসের অনেকগুলো ধরন আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামন্ত প্রথা। মধ্যযুগে ইউরোপীয় সমাজে সামন্তপ্রথার উদ্ভব ঘটে। ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য অংশে তা বিস্তার লাভ করে।
সামন্তপ্রথাঃ সামন্তপ্রথা হলো এক বিশেষ ধরনের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস যা ভূমি মালিকানা ও ভূমি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছিল। আদিম সাম্যবাদী ব্যবস্থার অবসান এবং দাসপ্রথার বিলুপ্তি সাধনে সামন্তপ্রথা গড়ে ওঠে। সামন্তপ্রথাকে ভূমি লেনদেন ও মালিকানা ব্যবস্থাও বলা চলে। প্রকৃতপক্ষে সামন্তপ্রথা হলো ভূমি মালিক ও কৃষকের মধ্যে এক ধরনের চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক।
সামন্তপ্রথার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশঃ
(১) ইউরোপীয় সমাজে সামন্তপ্রথার উদ্ভব ঘটে। ৫ম শতাব্দীতে রোমান সম্রাট প্রদেশগুলোতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হন ও প্রদেশগুলো দস্যু কবলিত হয়ে পড়ে।
(২) জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় দুর্বল ভূমি মালিকরা শক্তিশালী ভূমি মালিকদের নিকট তাদের সম্পত্তি দিয়ে নিজেরা চাষ করতে থাকেন। রোমান সেই প্রথার নাম ছিল Precariun.
(৩) আবার দুর্বলরা একই সাথে সবলদেরকে তাদের জমির ব্যবস্থাপনা বুঝিয়ে দেয় ও নিজেরা তাদেরকে সামরিক সাহায্য দেয়। এ প্রথার নাম ছিল Beneficium.
(৪) মূলত Precarium ও Benefacium হলো সামন্তপ্রথার আগের অবস্থা।
(৫) ভারতীয় এক দশে সামন্তপ্রভুরা জমির খাজনা আদায় করত। তারা ছিলা শাসকের প্রতিনিধিস্বরূপ।
(৬) সামন্ততন্ত্রই পুঁজিবাদের জন্ম দেয়। ড. নাজমুল করিম বলেন, European feudalism gave birth to capitalism, while Indian feudalism of its own accord failed to do so.
(৭) ঔপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে সামন্তপ্রথা গড়ে ওঠে। উপনিবেশ স্থাপনকারীরা নিজেদের অথবা তাদের অনুগত লোকদের সামন্তপ্রভু হিসেবে তৈরি করত। এভাবেই সামন্তপ্রথা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিস্তার লাভ করে।
(৮) সামন্তপ্রথা সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রথা। এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশই পরবর্তীকালে পুঁজিবাদকে উৎসাহিত করেছিল। পুঁজিবাদকে টার্গেট করে সামন্তপ্রথা বিকশিত হতে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগে ইউরোপীয় সমাজেই মূলত সামস্তপ্রথার উৎপত্তি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হওয়ায় এই সামন্তপ্রথা পরবর্তীকালে অন্যান্য সমাজেও বিস্তার লাভ করে। ভারতীয় উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের সময় সামস্তপ্রথার আদলে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। একে প্রাচ্যের সামন্তপ্রথা বলা হয়। অপরদিকে ইউরোপীয় সমাজে গড়ে ওঠা সামন্তপ্রথাকে বলা হয় পাশ্চাত্যের সামন্তপ্রথা। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সামন্তপ্রথার ধরন ছিল ভিন্ন। ইউরোপীয় সমাজে সামন্তপ্রথা ছিল আনুষ্ঠানিক। অপরদিকে ভারতীয় সমাজের সামন্তপ্রথা ছিল অনানুষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক। এভাবে ইউরোপীয় সামন্তপ্রথা বিভিন্ন সমাজে বিস্তার লাভ করে বলা হত।
Leave a comment