অথবা, সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদ ও নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদ কী? ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ বিশ্বজগৎ ঈশ্বরের সৃষ্টি, না প্রাকৃতিক শক্তির স্বাভাবিক পরিণতি, না বিশ্বজগতের যাবতীয় বস্তুর ক্রমপরিবর্তন যান্ত্রিক নিয়মের দাস- এ নিয়ে দর্শনের ইতিহাসে বিভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তবে দর্শনের এ ইতিহাস আলােচনা করলে জগতের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রধানত দুটি মতবাদ দেখা যায়। যথা- ১. সৃষ্টিবাদ, এবং ২. বিবর্তনবাদ। নিম্নে সৃষ্টিবাদের প্রকারভেদ হিসেবে সাপেক্ষ ও নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদ আলােচনা করা হলাে-
সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদঃ সাপেক্ষ সৃষ্টি তত্ত্বানুসারে, নিছক শূন্য থেকে শূন্যেরই সৃষ্টি হয়। ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে নিছক শূন্য নয় বরং স্বতঃস্থিত উপাদানের আশ্রয় নেন। কেউ কেউ এ উপাদানকে জড় বা আদিম উপকরণ বলে মনে করেন। ঈশ্বর শিল্পীর মতাে এ উপাদান নির্দিষ্ট করে তা আকারে আকরিত করেন। ফলে এই সুন্দর জগতের সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঈশ্বর জগতের উপাদান-কারণ নন। তিনি জগতের উপাদান-কারণের সৃষ্টিও করেননি। ঈশ্বর ও জগতের উপাদান উভয়ই নিত্য অথবা চিরস্থায়ী। ঈশ্বর কেবল জগতের নিমিত্ত কারণ। সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় জগতের উপাদান অত্যন্ত বিশৃঙ্খলভাবে ছিল। ঈশ্বর তাতে শৃঙ্খলা এনে এ সুন্দর জগতের সৃষ্টি করেন। সুতরাং জগৎহলাে স্বতঃস্থিত উপাদানের ঈশ্বর সৃষ্ট শৃঙ্খলাবিশেষ।
নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদঃ এই মতবাদ অনুসারে, অন্য কিছুর ওপর নির্ভর না করে ঈশ্বর নিজে নিজেই জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিছক শূন্য থেকে জগৎ সৃষ্টি করেন। এমন এক সময় ছিল, যখন জগতের কোন অস্তিত্ব ছিল না। তখন কেবল ঈশ্বরই ছিলেন। আর ঈশ্বর ছিলেন পূর্ণ। তাই তিনি জগতের কোন প্রয়ােজন আছে বলে মনে করেননি। কিন্তু পরে ঈশ্বর একদিন তার অনন্ত করুণা বর্ষণের জন্য জগৎ সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন। যেই ইচ্ছা অমনি কাজ। সৃষ্টি হলাে জগৎ। সেই যে জগৎ সৃষ্টি হলাে তা আর রূপ বদলায়নি। সুতরাং আমরা যে রূপে জগৎকে দেখতে পাচ্ছি ঠিক সে রূপেই ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেছেন। জগতের বর্তমান রূপের পিছনে ক্রমবিকাশ বা বিবর্তনের ইতিহাস নেই।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, জগৎ উৎপত্তির ইতিহাস নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদের অন্ত নেই। প্রত্যেকে নিজের মতবাদকেই একমাত্র সত্য ও নির্ভুল বলে গণ্য করেন। কিন্তু দর্শনে কোন মতবাদই সর্বজনীন গ্রহণযােগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তবে দর্শনের ইতিহাসে জগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত মতবাদ হিসেবে সৃষ্টিবাদের গুরুত্বকে কোনক্রমেই অস্বীকার করা যায় না।
Leave a comment