প্রশ্নঃ সংজ্ঞা দাও ও পার্থক্য নির্ণয় করঃ সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্য (গ) অবৈধ বাধাদান ও বেআইনী আটক।

সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্যঃ অভিপ্রায় (Intention) ও উদ্দেশ্য (Object) প্রায় সমার্থক মান হলেও এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। কিছু অভূক্ত লোকদের খাওয়ানোর জন্য যদি কেউ একটি হোটেলের খাবার চুরি করে সেক্ষেত্রে অভূক্ত লোকদের খাওয়ানো তার উদ্দেশ্য কিন্তু খাবার চুরি করা তার অভিপ্রায়। উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক- না কেন কাজটা আইনে নিষিদ্ধ। তাই অন্যায় কাজ অর্থাৎ অন্যায় অভিপ্রায়ের জন্য তাকে দায়ী হতে হবে। কতিপয় ব্যক্তি একই অভিপ্রায়ে যদি কোন অপরাধ করে তবে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা অনুযায়ী সাধারণ অভিপ্রায়ের জন্য সকলে দোষী হবে। অনুরূপভাবে সকলের একই উদ্দেশ্যে যদি কোন অপরাধ করে যা ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, তবে সাধারণ উদ্দেশ্যের জন্য সকলেই দোষী হবে।

সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্যের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ

১. দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় বর্ণিত সাধারণ অভিপ্রায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হয়। কিন্তু ১৪৯ ধারায় বর্ণিত সাধারণ উদ্দেশ্য পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।

২. সাধারণ অভিপ্রায় প্রয়োগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কতিপয় ব্যক্তি তাদের সাধারণ অভিপ্রায় সাধনকল্পে কোন অপরাধমূলক কার্য করে এবং সকলেই প্রত্যক্ষভাবে সেই অপরাধমূলক কার্য সংঘটিত না করলেও সকলেই সমভাবে দায়ী হবে।

অপরদিকে, দণ্ডবিধির ১৪৯ ধারার বিধান অনুসারে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সংঘটিত অপরাধের জন্য বে-আইনী সমাবেশের প্রত্যেক সদস্যই দায়ী। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে যে অপরাধ করে নি কিংবা প্রত্যক্ষভাবে অপরাধের সহায়তা করে নি, সে ব্যক্তি সাধারণত দোষী হয় না।

৩. সাধারণ অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের পূর্বে তাদের অভিপ্রায়ে ঐক্য ছিল এমন প্রয়োজন নেই, অপরাধ সংঘটনের সময় এরূপ ঐক্য থাকলেই যথেষ্ট।

অপরদিকে, সাধারণ উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের পূর্বে তাদের উদ্দেশ্যের ঐক্য থাকা বিশেষভাবে প্রয়োজন।

৪. সাধারণ অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে কোন এক সদস্য মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত করলে সেই অপরাধের জন্য সকল সদস্য যৌথভাবে দায়ী হবে, কারণ সকলের অভিপ্রায় ছিল এরূপ সংঘটন।

পক্ষান্তরে, বে-আইনী সমাবেশের কোন সদস্য যদি সাধারণ উদ্দেশ্যের বাইরে কোন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করে তবে সকলে সে অপরাধের জন্য দায়ী হবে না যদিও বেআইনী সমাবেশের জন্য সকলে দায়ী থাকবে।

৫. বে-আইনী সমাবেশের ক্ষেত্রে সকলের উদ্দেশ্য এক হলেও বিভিন্ন সদস্যের অভিপ্রায় বিভিন্ন হতে পারে।

পক্ষান্তরে, সকলের অভিপ্রায় অভিন্ন হলেই বে-আইনী সমাবেশের জন্য সকলের উদ্দেশ্য এক তা বলা যায়৷

৬. ৩৪ ধারার বর্ণিত সাধারণ অভিপ্রায়ের জন্য অপরিহার্য উপাদানগুলি নিম্নরূপ-

(ক) দুই বা ততোধিক ব্যক্তির অংশগ্রহণে অপরাধমূলক কার্য সংঘটন; (খ) ঐরূপ কার্য সংঘটন ব্যাপারে সকলের

অভিপ্রায় অভিন্ন; (গ) এই অভিপ্রায় চরিতার্থ করার নিমিত্তে এরূপ কার্য সংঘটন।

১৪৯ ধারায় বর্ণিত সাধারণ উদ্দেশ্যের জন্য নিম্নোক্ত উপাদানগুলো আবশ্যক-

(ক) পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি কর্তৃক একটি বে-আইনী সমাবেশ সংঘটন, (খ) এরূপ সমাবেশ সম্পর্কে সদস্যরা পূর্ব হতেই অবহিত, (গ) সাধারণ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বে-আইনী সমাবেশ, (ঘ) সদস্যদের অভিপ্রায় ভিন্ন ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য অভিন্ন।