Question: কিভাবে সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তিকে অপরাধের জন্য দায়ী করা যায়। যদিও সেই ব্যক্তিটি সরাসরি অপরাধটি সংঘটন করে নাই। বিস্তারিত আলোচনা করুন।
Question: সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্য এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় পূর্বক উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
অথবা, দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা ও ১৪৯ ধারা সংজ্ঞাসহ পার্থক্য, উদাহরণসহকারে বিশদভাবে আলোচনা করুন।
সাধারণ অভিপ্রায়(Common Intention)
দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় Common Intention সম্পৰ্কীয় বিধানাবলী আলোচিত হয়েছে। এই মতবাদের মাধ্যমে যৌথ দায়িত্বের নীতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে যে ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক সকলের একই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কোন অপরাধমূলক কার্য সম্পাদিত হয়, সেক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যক্তিগণের প্রত্যেকেই উক্ত কার্যেরজন্য এরূপে দায়ী হবেন যেন উক্ত কার্য ঐ ব্যক্তি কর্তৃক একাকী সম্পাদিত হয়েছে। সাধারণ অভিপ্রায় যৌথ দায় নির্ধারণের জন্য আদালত বিবেচনা করেন। এটা কোন অপরাধ নয় বরং এটা অপরাধীদের দায় নির্ধারণের একটি নীতি।
দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একই অভিপ্রায়ে অপরাধ করলে তাদের অপরাধ করার সাধারণ অভিপ্রায় (common Intention) ছিল বলে মনে করতে হবে। সাধারণ অভিপ্রায় অর্থ হলো পূর্ব পরিকল্পনা, মনের পূর্বের সমাবেশ, অপরাধ সংঘটনে গঠিত দলের সকল সদস্যদের মধ্যে পূর্ব আলোচনা এবং উক্ত পরিকল্পনা বা আলোচনা অনুযায়ী অপরাধ সংঘটন করা। উল্লেখ্য, কতিপয় ব্যক্তি অভিন্ন অভিপ্রায় (common Intention) নিয়ে অপরাধ করলে তাদের প্রত্যেকে একইভাবে দায়ী হবে এবং এমনভাবে শাস্তি পাবে যেমনটি তারা দায়ী হতো বা শাস্তি পেতো যদি তারা পৃথক পৃথকভাবে অপরাধটি করতো। Common Intention এর জন্য কোন ব্যক্তিকে দায়ী করতে হলে অপরাধটি অবশ্যই সংগঠিত হতে হবে এবং সেখানে সর্বনিম্ন ২ জন আসামী থাকতে হবে। কারণ দুইয়ের অধিক না থাকলে Common Intention গঠিত হয় না ।
৩৪ ধারা প্রয়োগের শর্তসমূহ/ উপাদান:
১। অপরাধটি অবশ্যই সংঘটিত হতে হবে(The offense must be committed)।
২। একাধিক ব্যক্তি অর্থাৎ দুই বা ততোধিক অপরাধী মিলে অপরাধটি সংঘটিত করতে হবে থাকতে হবে(Criminal Act Done By Several Persons)। এক্ষেত্রে কমপক্ষে দুইজন অপরাধী থাকতে হবে।
৩। তাদের মধ্যে একই অভিন্ন বা সাধারণ অভিপ্রায় থাকতে হবে।
৪। অপরাধ সংঘটনে আসামিদের মধ্যে একটি পূর্ব পরিকল্পনা, পূর্ব পরামর্শ, পূর্ব আলোচনা, পূর্ব সমাবেশ প্রভৃতি থাকতে হবে এবং মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অপরাধের জন্য দায়
এটা কোন অপরাধ নয় বরং এটা অপরাধীদের দায় নির্ধারণের একটি নীতি। দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় উল্লিখিত Common intention-এর ক্ষেত্রে যদি কতিপয় ব্যক্তি একত্রিত হয়ে একই Intention-এ কোন কার্য সংঘটিত করে এবং যদি কোন ব্যক্তি অপরাধটি সংঘটিত হওয়ার সময় প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত না থাকে, তবে তাকেও দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ৩৪ ধারা অনুসারে অপরাধের দায় নির্ধারণের জন্য অপরাধ সংঘটনের সাথে সরাসরি জড়িত থাকাটা বিবেচ্য বিষয় না।
সাধারণ উদ্দেশ্য
দণ্ডবিধির ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোন বে-আইনি সমাবেশের কোন সদস্য কর্তৃক উক্ত সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোন অপরাধ অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অপরাধ অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ঐ সমাবেশের সদস্যদের জানা থাকে তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনুষ্ঠিত হবার সময় যেসব ব্যক্তি উক্ত সমাবেশের সদস্য থাকে তাদের প্রত্যেক সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হবে।”
১৪৯ ধারা প্রয়োগের শর্তসমূহ/উপাদান:
দণ্ডবিধির ১৪৯ ধারা প্রয়োগ করতে হলে নিম্ন উল্লিখিত উপাদানের উপস্থিতি থাকতে হবে।
যথা:
১। একটি বে-আইনি সমাবেশ হয়েছিল।
২। আসামিগণ তার সদস্য ছিলেন।
৩। আসামিগণ শুরু হতে কিংবা অপরাধ অনুষ্ঠানের পূর্বে ঐ সমাবেশে যোগদান করেছিলেন।
৪। উক্ত সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্যর কথা আসামিদের জানা ছিল ।
৫। উক্ত সমাবেশে কোন সদস্য কোন অপরাধ করেছিলেন।
৬। উক্ত অপরাধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
৭। অপরাধী অবশ্যই অবহিত ছিলেন যে, সাধারণ উদ্দেশ্যে পূরণ কল্পে উক্ত অপরাধটি সংঘটনের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।
৮। সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পাঁচজন বা ততোধিক ব্যক্তির বে-আইনি সমাবেশ ঘটেছিল।
অপরাধের জন্য দায়
১৪৯ ধারার আবশ্যকীয় উপাদান হল, সাধারণ উদ্দেশ্য এবং বেআইনি সমাবেশে অংশগ্রহণ। বেআইনি সমাবেশের প্রতিটি সদস্য অপরাধী হবে বেআইনি সমাবেশ সংঘটনের ২৯৬ জন্য। ১৪৯ ধারা অনুসারে অপরাধের দায় নির্ধারণের জন্য অপরাধ সংঘটনের সাথে সরাসরি জড়িত থাকাটা বিবেচ্য বিষয় না। শুধু সমাবেশে অংশগ্রহণ করলেই দোষী সাব্যস্ত হবেন বে-আইনি সমাবেশের জন্য।
সাধারণ অভিপ্রায় (৩৪) ও সাধারণ উদ্দেশ্য (১৪৯) এর মধ্যে পার্থক্য
[Difference between common intention (34) and common Object (149)]:
দণ্ডবিধির ৩৪ ও ১৪৯ উভয় ধারাই কোন ব্যক্তির অপরাধজনক কার্যের সাথে অপর কোন ব্যক্তির অপরাধজনক দায়-দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করে। তবুও
সাধারণ অভিপ্রায়(Common intention) ও সাধারণ উদ্দেশ্য(Common object) এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে ৩৮ ডিএলআর ১৭; ৪৩ ডিএলআর ৮৭ তে বলা হয় যে, সাধারণ উদ্দেশ্যে যারা অপরাধ করেন, তাদের ক্ষেত্রে ১৪৯ ধারা এবং সাধারণ অভিপ্রায়ে যারা অপরাধ করেন তাদের ক্ষেত্রে ৩৪ ধারা প্রযুক্ত হয়।
Leave a comment