প্রশ্নঃ “সাক্ষীদের দলিলসমূহ দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায়, দলিলসমূহকে সাক্ষীদের দ্বারা নয়”– সাক্ষ্য আইনের প্রাসঙ্গিক বিধানসমূহের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর। দলিলভুক্ত সাক্ষ্য দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য বর্জন সংক্রান্ত বিধানসমূহের কোন ব্যতিক্রম আছে কি?

[“Witnesses are overruled by, documents, not documents by witnesses”. Evaluate the statement with reference to the relevant provisions of the Evidence Act. Is there any exception to the rules of exclusion of oral evidence by documentary evidence?]

উত্তরঃ একটি দলিলের বিষয়বস্তু দু’ভাবে প্রমাণ করা যায়৷ প্রথমতঃ প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা এবং দ্বিতীয়ত: গৌণ বা মাধ্যমিক সাক্ষ্য দ্বারা। যে দলিলটি প্রমাণ করতে হবে তা আদালতের পরিদর্শনের জন্য দাখিল করা হলে সাক্ষ্য আইনের ৬২ ধারামতে তা প্রাথমিক সাক্ষ্য। আদালতে উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য যা উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য মতবাদের মূলকথা। দলিলের বক্তব্য সম্পর্কে দলিলই হচ্ছে উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য। সাক্ষ্য আইনের ৯১ ও ৯২ ধারার বক্তব্য তাই। ৯১ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোন চুক্তি, মঞ্জুরী বা অন্য প্রকার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী একটি দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা হয় তখন এবং অন্যান্য যে সকল ক্ষেত্রে দলিলের আকারে কোন কারবার লিপিবদ্ধ করা আইনত আবশ্যক সে সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চুক্তি মঞ্জুরী বা অন্য প্রকার সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী বা সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে প্রমাণের জন্য যে সকল দলিল ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষ্য দেয়া যাবে না। তবে যে সকল ক্ষেত্রে এ আইনে ইতিপূর্বে বর্ণিত বিধান অনুসারে সেকেন্ডারী বা গৌণ সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য সে সব ক্ষেত্রে গৌণ সাক্ষ্য দেয়া যাবে।

৯২ ধারায় বলা হয়েছে যে, দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা আইনত প্রয়োজন এরূপ কোন চুক্তি, মঞ্জুরী, সম্পত্তির বিলি-ব্যবস্থা বা অন্য কোন বিষয় যখন পূর্ববর্তী ধারা অনুসারে প্রমাণিত হয়েছে তখন সেই দলিলের কোন শর্তের পরিবর্তন, সংযোজন বা বর্জনের উদ্দেশ্যে উক্ত দলিলের পক্ষগণের মধ্যে বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণের মধ্যে কোন মৌখিক চুক্তি বা বিবৃতি সম্পর্কে কোন সাক্ষ্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে না।

এই ধারা দুটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, চুক্তি, মঞ্জুরী বা অন্য কোন ধরনের সম্পত্তি বিলি বণ্টনের ব্যাপারে যেখানে কোন লিখিত দলিল থাকে সেখানে এসব লিখিত দলিল ছাড়া অন্য কোন সাক্ষ্য দেয়া যাবে না। এছাড়া যে সকল ক্ষেত্রে দলিল প্রণীত হয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে দলিলের শর্তের পরিবর্তন, সংযোজন বা বর্জনমূলক সাক্ষ্যও আদালতে অগ্রাহ্য। দলিলের বক্তব্য সম্পর্কে দলিলই উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য হলেও অস্পষ্ট বক্তব্য ব্যাখ্যা করার জন্য মৌখিক সাক্ষ্য দেয়া যেতে পারে। দলিলের বক্তব্য স্পষ্ট হলে মৌখিক সাক্ষের প্রয়োজন হয় না। সেই দলিলই হবে যথার্থ ও উপযুক্ত সাক্ষ্য। তাই বলা হয় যে, লিখিত বস্তু কেবলমাত্র লিখিত বস্তু দ্বারাই প্রমাণ করতে হবে এবং লিখিত দলিল থাকলে বিরুদ্ধ সাক্ষীর বক্তব্যকে তা খণ্ডন করে। কিন্তু কোন সাক্ষীর বক্তব্য দ্বারা লিখিত দলিলের বক্তব্যকে খণ্ডন করা যায় না৷

দলিলভুক্ত সাক্ষ্য দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য বর্জন সংক্রান্ত বিধানসমূহের ব্যতিক্রমঃ সাক্ষ্য আইনের ৯১ ধারায় নিম্নোক্ত দুটি ব্যতিক্রম রয়েছে-

(১) যখন কোন সরকারী কর্মচারীর নিয়োগ লিখিতভাবে হওয়া আইনত আবশ্যক এবং যখন দেখানো হয় যে, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পদে কাজ করেছেন তখন তার লিখিত নিয়োগপত্র প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় না।

(২) বাংলাদেশে যে সকল উইলের ‘প্রবেট’ স্বীকৃত হয়েছে সে সকল উইল উক্ত ‘প্রবেট’ দ্বারা প্রমাণ করা যেতে পারে। উইলকারীর মৃত্যুর পর উইলটি কার্যকরী করার জন্য জেলা জজ আদালতে আবেদন করতে হয়। যথোপযুক্ত অনুসন্ধানের পর উইলটি কার্যকরী করার জন্য আদালত যে নির্দেশ দেন তাকে প্রবেট বলে।

৯২ ধারার বিধান অনুযায়ী কোন দলিলের শর্তের বিরোধিতা, পরিবর্তন, সংযোজন ও বিয়োজনের জন্য মৌখিক সাক্ষ্য দেয়া যাবে না। এগুলির ব্যতিক্রম নিম্নরূপ- 

(১) যে ঘটনা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট দলিল অকার্যকর হয়ে যায় সে ঘটনা মৌখিকভাবে প্রমাণ করা যায়। প্রতারণাপূর্বক, ভীতি প্রদর্শন বা অন্য কোন প্রকার অবৈধ পন্থায় কোন দলিল করা হয়ে থাকলে সে সম্পর্কে মৌখিকভাবে প্রমাণ দেয়া যায়।

(২) দলিলের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বতন্ত্র মৌখিক চুক্তিও প্রমাণ করা যায়।

(৩) দলিলের পূর্ববর্তী মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায়।

(৪) যে চুক্তি লিখিত হবার প্রয়োজন নাই কিংবা রেজিস্টিকৃত হওয়ার দরকার নাই সে সকল চুক্তি রদ করার ব্যাপারে পরবর্তীকালে মৌখিক চুক্তি মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায়৷

(৫) চুক্তির সহিত সংযুক্ত প্রথাও মৌখিকভাবে প্রমাণ করা যায়।

(৬) দলিলে ব্যবহৃত শব্দের অর্থ সম্পর্কে মৌখিক ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য৷