➽ সাধারণ কর্মসূচি : সর্বশিক্ষা অভিযানে যেসকল সাধারণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, তা হল –

(১) পরিকাঠামোগত উন্নয়ন : প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত মান উন্নয়ন করতে হবে।

(২) পরিপূরক শিক্ষাব্যবস্থা : প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিকল্প বিদ্যালয় বা পরিপূরক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

(৩) জনসাধারণের অংশগ্রহণ : সমাজের সাধারণ মানুষকে এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(৪) মেয়েদের শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব : মেয়েদের শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জেলার জন্য বরাদ্দ করা অর্থের একটি বিশাল অঙ্ক এই কর্মসূচির উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হবে। মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় ও হোস্টেলের মধ্যে নারী শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

(৫) সকলকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ : সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি একযোগে নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

(৬) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ : নতুন নতুন শিক্ষণ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে শিক্ষণ পদ্ধতির মান বাড়বে।

(৭) তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা : গ্রাম সংসদ ও ওয়ার্ড স্তরে শিশুদের শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে।

(৮) ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ : ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে ‘গ্রাম্য শিক্ষা কমিটি’ (Village Education Committee) গঠন ও পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

(৯) বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ : প্রাথমিক শিক্ষার শেষে শিক্ষার্থীরা যাতে পুনরায় নিরক্ষরতার অন্ধকারে ডুবে না যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

(১০) পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা : তপশিলি জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(১১) চক্র সম্পদ গঠন : পরিকাঠামো ও পরিষেবা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য চক্র সম্পদ গঠন করতে হবে।

(১২) গুচ্ছ সম্পদ কেন্দ্র গঠন : বিদ্যালয়, গ্রাম ও ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ‘গুচ্ছ সম্পদ কেন্দ্র গঠন করতে হবে।

➽ বিশেষ কর্মসূচি : সর্বশিক্ষা অভিযানে বিশেষ কর্মসূচি গুলো হল –

(১) ৬-১৪ বছরের সকল ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসার কর্মসূচি।

(২) বিদ্যালয়ে ধরে রাখার কর্মসূচি।

(৩) শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির কর্মসূচি।

➤৬-১৪ বছরের সকল ছেলেমেয়েকে শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসার কর্মসূচি : শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসার জন্য যেসকল ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা হয়, তা হল –

(১) পর্ষদ স্বীকৃত বিদ্যালয় স্থাপন : ৬-১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের সকলকে শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসার জন্য পর্ষদ স্বীকৃত বিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন।

(২) মুক্ত বিদ্যালয়, বেসরকারি বিদ্যালয় স্থাপন : পর্ষদ স্বীকৃত বিদ্যালয় ছাড়াও মুক্ত বিদ্যালয়, বেসরকারি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন।

(৩) সেতু পাঠক্রম : মাঝপথে বিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়া বা যারা কোনােদিনই বিদ্যালয়ে যায়নি, তার জন্য সেতু পাঠক্রম (Bridge Course) চালু করা প্রয়োজন।

➤বিদ্যালয়ে ধরে রাখার কর্মসূচি :

(১) বসার ব্যবস্থা করা : প্রতিটি শিশুর জন্য বসার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(২) শিক্ষক-অভিভাবক সভা : নিয়মিতভাবে শিক্ষক-অভিভাবক সভার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য অভিভাবকদের সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

(৩) মধ্যাহ্নকালীন আহার : শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর মিড-ডে-মিলের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৪) পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা : প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনমতো পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৫) পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ : বিদ্যালয়ে পঠন পাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করতে হবে।

(৬) আকর্ষণীয় শিক্ষণ পদ্ধতি : পঠনপাঠন আকর্ষণীয় করার জন্য উন্নতমানের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

(৭) বিভিন্ন রকম সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করা : পড়াশোনার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য ও বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি যেমন – খেলাধুলা, নাচ-গান, অঙ্কন প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(৮) অনুদানের ব্যবস্থা : অর্থনৈতিকভাবে দুঃস্থ অভিভাবকদের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৯) শিক্ষার গুণগত মান সুনিশ্চিত করা : প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে।

(১০) ভ্রমণের ব্যবস্থা : গতানুগতিক জীবন থেকে বেরিয়ে মাঝে মাঝে ভ্রমণের ব্যবস্থা করলে তারা আনন্দে থাকে। বিদ্যালয়ের প্রতি তারা আকর্ষণ বােধ করবে।

➤শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির কর্মসূচি : শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য যেসকল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তা হল –

(১) শিক্ষার ভূমিকা : শিক্ষক বন্ধু-দার্শনিক ও পথ-প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে।

(২) বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন : উন্নতমানের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন।

(৩) শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা :  শিক্ষকদের নতুন নতুন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন।

(৪) বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় : বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকা এবং সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলে আসা নিশ্চিত করতে হবে।

(৫) অভিভাবকের সঙ্গা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলা : শিক্ষার্থীর আচরণ ও পারদর্শিতা নিয়ে মাঝে মাঝে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে।

(৬) পিছিয় পড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব : পিছিয়ে পড়া  শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অগ্রগতির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

(৭) শিক্ষাসহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা : প্রয়ােজনমতাে শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৮) গুচ্ছ সম্পদ কেন্দ্র যথাযথ ব্যবহার : এলাকায় অবস্থিত গুচ্ছ সম্পদ কেন্দ্রগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে।