সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা রূপায়ণে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বয়স্ক শিক্ষার জাতীয় পর্ষদ (National Board of Adult Education) গঠিত হয়। 1975 খ্রিস্টাব্দে সারা ভারত 24তম বয়স্ক শিক্ষা সম্মেলনে বিধি মুক্ত বয়স্ক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ২ অক্টোবর জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির (National Adult Education Programme, NAEP) উদ্বোধন করা হয়। অনগ্রসর শ্রেণি এবং মহিলাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –

(১) শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিকরণ: এই কর্মসূচির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ১৫-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ছেলে মেয়ে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা।

(২) নারী শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ : এই কর্মসূচিতে নারী শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যাতে তারা সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। তাই মহিলা সমিতি গঠন করা হয়। সেখানে দর্জির কাজ, সেলাই, বুনন, শিশু পরিচর্যা, গার্হস্থ্য শিক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

(৩) পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা : পিছিয়ে পড়া শ্রেণি অর্থাৎ তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের বয়স্ক মানুষদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

(৪) বৃত্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিকরণ : বয়স্ক ব্যক্তিরা যাতে সাক্ষরতার পাশাপাশি যে-কোনাে বৃত্তিতে নিযুক্ত হতে পারে সেজন্য বৃত্তিশিক্ষার এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

(৫) সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে নিযুক্ত করা : এই কর্মসূচির আর একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সংযুক্ত করা যাতে এই কর্মসূচি আরও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলতে পারে।

(৬) পঠনপাঠনের সময় : বয়স্ক শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ন্যূনতম পর্যায়ে (Minimum level of learning) উন্নত করার জন্য বছরে ৩০০-৩৫০ ঘণ্টা পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

(৭) সামাজিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করা : এই কর্মসূচির আর-একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিটি বয়স্ক ব্যক্তিকে শিক্ষার মাধ্যমে যেমন তার ব্যক্তিগত বিকাশ সাধন করা তেমনি সামাজিক বিকাশকেও ত্বরান্বিত করা।

বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি সফল করে তোলার বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বনের কথা বলা হয়। যেমন—

(১) সমাজের বিভিন্ন সংগঠনকে সংগঠিত করা : সমাজে বিভিন্ন ধরনের যে সংগঠন রয়েছে যেমন— মহিলা সমিতি, যুব সমিতি, জনতা কলেজ, জাতীয় সামাজিক সেবা প্রকল্প এবং সাক্ষরতা কেন্দ্র সেগুলিকে সংগঠিত করে বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

(২) জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষা পর্ষদ (NCERT) : এই পদটি সারা ভারতে বয়স্কশিক্ষার জন্য নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করবে এবং তা বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি করবে।

(৩) সাক্ষরতা কেন্দ্র : সাক্ষরতা কেন্দ্রগুলো বয়স্কদের লেখাপড়া ও গণিতের শিক্ষা দিতে হবে, যার মাধ্যমে তারা দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপযোগী কাজগুলো করতে পারে।

(৪) নব্য সাক্ষর এর উপযোগী পুস্তক রচনা : নব্য সাক্ষর এর উপযােগী পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে।

(৫) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন : বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির শিক্ষণ পদ্ধতি ও মূল্যায়নের উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবে সফল করে তোলার জন্য কেন্দ্র, রাজ্য, জেলা সকলকে একযোগে সমন্বিত হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে করবে।