রাষ্ট্র একটি তত্ত্বগত বা বিমূর্ত ধারণা। রাষ্ট্রকে চাক্ষুস করা যায় না। কারণ এর কোন বাস্তব রূপ নেই। সরকারই হল রাষ্ট্রের রূপকার। উইলোবীর মতানুসারে, সরকার হল একটি প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্র যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তাঁর ইচ্ছাকে গঠন ও কার্যকর করে’। তিনি বলেছেন: “The organisation or machinery through which the state formulates and executes its will is termed as government.” এই শাসনযন্ত্রের মাধ্যমেই রাষ্ট্র তার ইচ্ছাকে প্রকাশ করে। এবং উদ্দেশ্যকে কার্যকর করে সরকারই রাষ্ট্রের ইচ্ছাকে আইনে রূপান্তরিত করে এবং আইনের সাহায্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে। যাদের উপর রাষ্ট্র পরিচালনার ভার ন্যস্ত থাকে, তাদেরই সমষ্টিগতভাবে সরকার বলা যায়। সংক্ষেপে সরকার বলতে সাধারণত আইন-বিভাগ, শাসন-বিভাগ ও বিচার-বিভাগকেই বোঝায়। গেটেলের মতানুসারে সরকার হল রাষ্ট্রের একটি সংস্থা বা যন্ত্র’ (“Government is the organisation or machinery of the state.”)। গার্নারের মতানুসারে ‘সরকার হল একটি কার্যনির্বাহী মাধ্যম বা যন্ত্র যার মাধ্যমে সরকারের সাধারণ নীতি নির্ধারিত হয় এবং যার দ্বারা সাধারণ কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয় ও সাধারণ স্বার্থ সাধিত হয়। তিনি বলেছেন: “Government is the agency or machinery through which common policies are determined and by which common affairs are regulated and common interests promoted.” সরকারের সংস্থাগুলির কাঠামো, প্রকৃতি, কার্যপদ্ধতি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক সকল রাষ্ট্রে একরকম নয়। কারণ সকল দেশের সরকার একরকম নয়। এই কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কিত আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের শ্রেণীবিভাগ
রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীবিভাগের আলোচনা প্রাচীন:
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সরকারী কাঠামোর শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কিত বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি বিষয়ক সাবেকি পর্যালোচনায়ও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপ্রদানের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ আবহমানকাল ধরে সরকারী কাঠামোর শ্রেণীবিন্যাসের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়ে আসছে। অ্যালান বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “Attempts to produce a classification of political institutions can be dated back to the beginnings of the study of political science.” অর্থাৎ রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রেণী বিভাজন সম্পর্কিত আলোচনা সুপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে।
সরকারের শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য:
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বা তত্ত্বের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। তারফলে এ ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য বিকশিত হয়েছে। মতাদর্শগত অগ্রাধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সরকারী কাঠামোর শ্রেণীবিভাজন করেছেন। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “Thus it can be seen that the number of typologies is very wide and the choice will depend on the type of variables that are being considered, but more importantly on the nature of the question being asked.” বিভিন্ন ধরনের সরকারী কাঠামো এবং তাদের উপযোগিতা প্রসঙ্গে বহু ও বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়ন বর্তমান। তারফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই কারণে বলা হয় যে, রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রেণীবিভাজন সম্পর্কিত বিচার-বিশ্লেষণের সাফল্যের স্বার্থে যথার্থ ও বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা দরকার। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট শ্রেণীবিভাজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। বল এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “Before any particular scheme is adopted the aim of the classification must be clear….”
সরকারের শ্রেণীবিভাগের উপযোগিতা:
বল সরকারী কাঠামোর শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পর্যালোচনা করেছেন। শ্রেণীবিভাগের সাহায্যে রাজনীতিক ব্যবস্থার অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলিকে স্বাতন্ত্র্য করা সম্ভব হয়। শ্রেণীবিভাজনের মাধ্যমে তুলনামূলক পর্যালোচনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়। বল বলেছেন: “Classification is essentially an attempt to isolate the most important characteristics of the political system from the less important classification presupposes a comparative approach….” শ্রেণীবিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সরকারী কাঠামো এবং রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হওয়া যায় এবং প্রতিটি সরকারী কাঠামোর ভূমিকার মূল্যায়ন সহজে সম্ভব হয়। তা ছাড়া শ্রেণীবিভাজনের ভিত্তিতে কোন একটি সরকারী কাঠামোর অভিন্ন প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলিকে সমপর্যায়ভুক্ত করা সম্ভব হয়। তারফলে তুলনামূলক আলোচনা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে এবং আলোচ্য বিষয় সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “…it is to simplify to ensure the grouping of like with like, to allow for significant comparison and thereby extend our understanding.” বস্তুত শ্রেণীবিভাজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সরকারী কাঠামো ও রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পন্থা-পদ্ধতির মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের বিচার-বিশ্লেষণ করা যায় এবং তারফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের সমালোচনামূলক মূল্যায়ন করা যায়। এইভাবে কোন একটি সরকারী কাঠামো বা রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক চেহারা-চরিত্র চিত্রিত করা যায়।
সরকারের শ্রেণীবিভাজনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া বর্তমান:
শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে আর একটি বিষয় বিশেষভাবে বিচার-বিবেচনা করা দরকার। শ্রেণীবিভাজন প্রসঙ্গে বিবিধ পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়া বর্তমান। কারণ শ্রেণীবিভাজনের বিষয়টি হল উদ্দেশ্যমূলক। এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয়। কোন বিশেষ একটি প্রক্রিয়া পদ্ধতির মাধ্যমে শ্রেণীবিভাজনের সকল উদ্দেশ্য সার্থক হতে পারে না। শ্রেণীবিভাজন সম্পর্কিত সকল উদ্যোগের সাফল্যের স্বার্থে সফল রকম সরকারী কাঠামো ও রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা আবশ্যক। শ্রেণীবিভাজনের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি কী ধরনের হবে তা একটি বিষয়ের দ্বারা বিশেষভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিষয়টি হল সরকারী কাঠামো বা রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোন্ বিষয়টির উপর বিশেষভাবে জোর দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। বলের অভিমত অনুসারে শ্রেণীবিভাজন সম্পর্কিত সকল পরিকল্পনাই হল পরীক্ষামূলক। বল বলেছেন: “It is important to remember, how ever, that all classification in the social sciences is somewhat arbitrary; the classification scheme depends on what aspects of the political system one wishes to isolate and emphasise, therefore there can be no one scheme of classification that is suitable for all purpose.” শ্রেণীবিভাজনের ভাল প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বলের অভিমত হল: “the mark of good categorisation is simplicity.”
সরকারের শ্রেণীবিভাজনের পরিকল্পনার নির্ণায়কসমূহ:
বলের অভিমত অনুসারে কোন বিশেষ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্যের উপর জোর দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের পক্ষপাতী। তদনুসারে শ্রেণীবিভাজনের প্রক্রিয়া-পদ্ধতির পরিকল্পনা স্থিরীকৃত হয়। এ প্রসঙ্গে বল একাধিক উদাহরণের অবতারণা করেছেন। তাঁর আলোচনাকে অনুসরণ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা যায়।
(১) নাগরিক স্বাধীনতা: নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা যদি উদ্দেশ্য হয়, তা হলে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত নাগরিক অধিকারসমূহের সঙ্গে অ-উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রাপ্ত নাগরিক অধিকারগুলির তুলনামূলক আলোচনা করা আবশ্যক। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশেষ ধরনের কিছু নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা স্বীকার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বিপরীত প্রকৃতির অন্য কোন রাজনীতিক ব্যবস্থায় এই সমস্ত নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা স্বীকার করা হয় না। বল বলেছেন: “If one were concerned to emphasize civil liberties, one might distinguish liberal democracies from non-liberal democracies and discuss the emphasis that certain civil freedoms appear to receive in political systems of the former type.”
(২) স্বাধীন শাসন-বিভাগ: আবার আইনসভার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত শাসন-বিভাগের স্বাতন্ত্র্যের মাত্রা সম্পর্কিত বিষয়টি যদি বিচার্য হয়, তা হলে, রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করা আবশ্যক। এবং এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থার সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশে বর্তমান পার্লামেন্টীয় শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করতে হবে। বল বলেছেন: “…If one wanted to examine the degree of executive independence of the legislature, it would be-rewarding at some stage to compare presidential systems of the type found in the United States and the parliamentary systems prevalent in most of Western Europe.”
(৩) জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাত্রা: সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাত্রা যদি বিচার-বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য হয়, তা হলে রাষ্ট্রপতি-শাসিত ও মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা অর্থহীন প্রতিপন্ন হবে। এমনকি এ প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং অ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মধ্যেও তুলনামূলক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেও সমস্যার সৃষ্টি হবে। এ প্রসঙ্গে বল জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন-ব্যবস্থার কথা বলেছেন এবং এর বিপরীত প্রকৃতির শাসনব্যবস্থা হিসাবে সৌদি আরবের উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: “There is a distinction between participatory systems which may include the Soviet Union and the United States and non-participatory systems such as Saudi Arabia.”
(৪) মতাদর্শগত পার্থক্য: আবার মতাদর্শগত পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী কাঠামোসমূহের মধ্যে পার্থক্যমূলক আলোচনার উপর অনেকে গুরুত্ব আরোপের পক্ষপাতী। এক্ষেত্রে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্যমূলক আলোচনার কথা বলা হয়। কারণ প্রথমোক্ত দেশটি ছিল মার্কসবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রটি হল পুঁজিবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী। বল বলেছেন: “…to emphasise the role of ideology in the political system, some political scientists…find it important to distinguish between the United States and the Soviet Union.”
(৫) আর্থ-সামাজিক উপাদান: টকভিলের পরীক্ষা: অন্যান্য পরিবর্তনীয়ের (variables) সঙ্গেও শ্রেণীবিভাজনের পরিকল্পনার সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। বল বলেছেন: “The classification scheme may point to interrelations between different variables.” আর্থ-সামাজিক উপাদানের সঙ্গে রাজনীতিক বা সরকারী কাঠামো গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। একটি বিশেষ আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে প্রতিটি রাজনীতিক ব্যবস্থা কার্যকর হয় এবং তদনুসারে তার চেহারা-চরিত্র স্থিরীকৃত হয়। এই কারণে যে-কোন সরকার নির্দিষ্ট ধরনের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে বিশেষ ধরনের আকৃতি-প্রকৃতিযুক্ত হয়ে থাকে। এই কারণে বলা হয় যে আর্থ-সামাজিক উপাদান সরকারী কাঠামো ও রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের আকৃতি-প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বল বলেছেন: “The connection between the type of political system and the socio-economic structure is an important one in this respect. The French writer, Alexis De Tocqueville, emphasised this relationship when examining the basis of American democracy in the early nineteenth century.” ফরাসী দার্শনিক টক্ভিল তাঁর Democracy in America শীর্ষক গ্রন্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে অর্থবহ আলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনাকে সুনিশ্চিত করেছে কতকগুলি অনুকূল উপাদানের সহায়ক ভূমিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৌভাগ্যসূচক এই উপাদানগুলি হল ভৌগোলিক সীমানার বিশাল ব্যাপ্তি এবং সম্পদ-সামগ্রীর প্রাচুর্য। তারফলে সাম্য ও স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সকল সরকারের এবং বিশেষত গণতান্ত্রিক সরকারের স্থায়িত্বের পক্ষে একটি সহায়ক উপাদান হল প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি। টক্ভিলকে অনুসরণ করে বল বলেছেন: “Their fathers gave them a love of equality and liberty, but it was God who, by handing a limitless continent over to them gave to them the means of long remaining equal and free. General prosperity favours stability in all governments, but particularly in a democratic one.”
সরকারের শ্রেণীবিভাগ প্রসঙ্গে লিপসেটের অভিমত:
লিপসেট তাঁর The First New Nation শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনিও আর্থ-সামাজিক উন্নতি এবং রাজনীতিক ব্যবস্থার আকৃতি-প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি এই যুক্তি দেখিয়েছেন যে, যেখানে শিল্প ও অর্থনীতির উন্নতি উচ্চ পর্যায়ের বৈষয়িক প্রাচুর্য সৃষ্টি করে এবং যেখানে আপেক্ষিক আর্থ-সামাজিক সাম্য রাজনীতিক স্থায়িত্বের সৃষ্টি করে, সেখানেই উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সফল হতে পারে। তাঁর অভিমত অনুসারে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা এবং উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে একটি মৌল সম্পর্ক বর্তমান। আরও অনুমান করা হয় যে শিল্পে অনগ্রসর এবং কৃষি-নির্ভর অর্থনীতি উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুকূল নয়। এবং উদারনীতিক গণতন্ত্রের বিপরীত রাজনীতিক ব্যবস্থা অনুন্নত আর্থনীতিক অবস্থাতেই গড়ে উঠে। বল লিপসেটের অভিমত প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন: “Basically, there is a relationship in his view, between the capitalist mode of production and liberal democracy, and there is the presumption that liberal democracy is not consistent with a peasant non-industrial base. Non-liberal democracies may therefore be a product of economic underdevelopment.”
সরকারের শ্রেণীবিভাগ প্রসঙ্গে ম্যুরের অভিমত:
ব্যারিংটন ম্যুর (Barrington Moore) ও তাঁর Social Origins of Dictatorship and Democracy শীর্ষক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনিও রাজনীতিক ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক উপাদানের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলেছেন। এই সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যুর তিন ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করেছেন। এই তিন ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থা হল: (১) গণতান্ত্রিক বা সংসদীয় যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; (২) ফ্যাসিবাদী যেমন ১৯৪৫-এর পূর্ববর্তী জার্মানী ও জাপান; (৩) মার্কসবাদী বা কমিউনিস্ট, যেমন পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন। এই তিন শ্রেণীর রাজনীতিক ব্যবস্থার বাইরেও ম্যুর মিশ্র প্রকৃতির রাজনীতিক ব্যবস্থার কথা বলেছেন এবং উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসাবে ভারতের কথা বলেছেন। ম্যুরের অভিমত অনুসারে বিত্তবান জমিদার, কৃষক, মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং সরকারী আমলাদের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে বিশেষ এক অবস্থায় এক বিশেষ ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। বল বলেছেন: “Moore argued that the interaction of lords, peasants, the middle class and government bureaucracies will tend to produce in certain circumstances a particular type of political system.”
Leave a comment