অ্যারিস্টটলের উত্তরসূরি: অ্যারিস্টটলের পরেও সরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কিত আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রোমের পলিবিয়াস (Polybius) ও সিসেরো (Cicero)-র নাম করা হয়। তা ছাড়া অ্যারিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গিকে মোটামুটি অনুসরণ করে যারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের শ্রেণী-বিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বোঁদা, মতেঙ্কু, হবস্, লক্, বার্জেস, বুন্টসলি, জেলিনেক্ প্রমুখ। এই সমস্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে অ্যারিস্টটলের প্রভাবকে কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। তাই এ বিষয়ে এঁদের আলোচনাও তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।

বোঁদা মতানুসারে সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ:

বোঁদার Six Books on the Commonwealth ষোড়শ শতাব্দীতে রাজনীতিক চিন্তাজগতে আলোড়নের সৃষ্টি করে। বোঁদার লেখনী অ্যারিস্টটলের শ্রেণীবিভাজনকে অধিকতর অগ্রবর্তী করে। তবে, বলের অভিমত অনুসারে বোঁদারও প্রাথমিক চিন্তা-ভাবনা মূলত একটি বিষয়ের উপর ভিত্তিশীল ছিল। বিষয়টি হল, কোন্ ধরনের সংবিধান সর্বশ্রেষ্ঠ? তবে আইনানুগ সার্বভৌমত্বের উপর বোঁদার এক স্বাভাবিক পক্ষপাতিত্ব ছিল। যাইহোক এই ফরাসী চিন্তাবিদ সমকালীন সংবিধানের ভূমিকা প্রসঙ্গে তথ্যাদি সংগ্রহ করেন এবং তার প্রয়োগের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। বোঁদা এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, আর্থ রাজনীতিক এবং ভৌগোলিক বিভিন্ন উপাদান ও শক্তির উপর সরকারের কাঠামো ও প্রকৃতি নির্ভরশীল তিনি ভূ-কেন্দ্রিক রাজনীতিক আলোচনার সূত্রপাত করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেন। সর্বপ্রথম বোঁদাই সরকারের উপর ভৌগোলিক উপাদানসমূহের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে পর্যালোচনার সূত্রপাত করেন। বল বলেছেন: “…his immenses arsenal of facts on contemporary constitutions and his insistence that the type of government depended on economic and geographical factors as well as political factors allowed him to make significant advances in the study of politics.”

মন্তেস্কু মতানুসারে সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ:

ফরাসী দার্শনিক মন্তেস্কু হলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর এক বিশিষ্ট চিন্তাবিদ্। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম হল The Spirit of the Laws। সরকারের শ্রেণীবিভাজন সম্পর্কে মন্তেস্কুর পরিকল্পনা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তিনি সরকারকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। সরকারের এই তিনটি ভাগ হল: প্রজাতান্ত্রিক, রাজতান্ত্রিক এবং স্বৈরতান্ত্রিক। বল বলেছেন: “Montesquieu produced one of the most famous schemes of classifying governments. There are three species of government: republican, monarchical and despotic.” মন্তেস্কুর অভিমত অনুসারে অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্র হল প্রজাতান্ত্রিক সরকারের অংশ। এবং এক্ষেত্রে অ্যারিস্টটলের শ্রেণীবিভাজনের সঙ্গে মন্তেস্কুর শ্রেণীবিভাজনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে বোঁদা মূলত সাবেকি ধারাকে অনুসরণ করেছেন। তিনিও ক্ষমতাধিকারীর সংখ্যার ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। তাঁর মতানুসারে প্রজাতান্ত্রিক সরকারে বহুজন বা কয়েকজনের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টিত থাকে। রাজতন্ত্রে একজনের হাতেই ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। কিন্তু এই ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় বিভিন্ন মৌলিক আইন এবং সমাজের অন্যান্য গোষ্ঠীর ক্ষমতার দ্বারা। স্বৈরতন্ত্র হল নিকৃষ্ট ধরনের সরকার। কারণ স্বৈরতন্ত্রে যাবতীয় ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে একজনের হাতেই ন্যস্ত থাকে। তাঁর আরও অভিমত হল অভিজাততন্ত্র যত বেশী গণতন্ত্রের কাছাকাছি থাকে সরকার তত বেশী পরিপূর্ণতার নিকটবর্তী হয়। বিপরীতক্রমে অভিজাততন্ত্র যত বেশী রাজতন্ত্রের দিকে এগোয় সরকার তত বেশী অপূর্ণতার দ্বারা আচ্ছন্ন হয়। মন্তেস্কুর মতে: “The more an aristrocracy borders on democracy the nearer it approaches perfection and in proportion as it draws towards monarchy, the more it is imperfect.” মন্তেস্কু সমাজব্যবস্থার প্রকৃতি এবং সরকারের প্রকৃতির মধ্যে ওতপ্রোত সম্পর্কের কথা বলেছেন। তাঁর আরও অভিমত হল যে শিক্ষা, নীতিজ্ঞান, দেশপ্রেম এবং আর্থনীতিক সাম্যের মান সরকারের প্রকৃতি নির্ধারণে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হল রাষ্ট্রের ভৌগোলিক আয়তন। রাষ্ট্রের রাজ্যক্ষেত্রের আয়তনের সঙ্গে সরকারের সাফল্যের সম্পর্কের কথাও তিনি বলেছেন। তাঁর মতানুসারে বৃহদায়তনবিশিষ্ট রাষ্ট্রে স্বৈরতন্ত্র, স্বল্পায়তনবিশিষ্ট রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্র এবং মাঝামাঝি আয়তনবিশিষ্ট রাষ্ট্রে রাজতন্ত্র সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। বল এক্ষেত্রে মন্তেস্কুর অভিমতকে উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেছেন: “A large empire supposes a despotic authority in the person who governs; a monarchical state possesses moderate territory, but it is natural for a republic to have only a small territory otherwise it cannot long subsist.”

ম্যারিয়ট মতানুসারে সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ:

সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যারিয়টের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ম্যারিয়টের শ্রেণীবিভাগ আধুনিক ও বিস্তৃত। মূলত তিনটি ভিত্তিতে তিনি সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। 

  • (১) ক্ষমতার আঞ্চলিক বণ্টনের বিচারে ম্যারিয়ট সরকারকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। এই দু’টি ভাগ হল। এককেন্দ্রিক (Unitary) ও যুক্তরাষ্ট্র (Federal)। 

  • (২) সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির বিচারে তিনি সরকারকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। এই দু’টি ভাগ হল সুপরিবর্তনীয় (Flexible) এবং দুষ্পরিবর্তনীয় (Rigid)।

  • (৩) আবার আইন-বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে তিনি তিন ধরনের সরকারের কথা বলেছেন: স্বৈরতন্ত্র (Despotic), সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত (Parliamentary or Cabinet) এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত (Presidential)। শাসন-বিভাগের প্রাধান্য থাকলে তাকে স্বৈরতন্ত্র বলে। আইন-বিভাগের প্রাধান্য থাকলে পার্লামেন্টারী বা সংসদীয় বলে। আইন-বিভাগ ও শাসন-বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক সম্পূরক হলে তাকে রাষ্ট্রপতি-শাসিত বলে।

তবে ম্যারিয়টের শ্রেণীবিভাগও পুরোপুরি মেনে নেওয়া যায় না। এই শ্রেণীবিভাজনও সম্পূর্ণ নয়। তিনি গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র প্রভৃতির কথা বলেননি।

লীকক্ মতানুসারে সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ:

ম্যারিয়েটকে অনুসরণ করে লীকক সরকারের যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন তা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনটি মূল নীতির ভিত্তিতে এই শ্রেণীবিভাগ করা হয়। এই তিনটি নীতি হল: 

  • (১) সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহারকারীর সংখ্যা নির্ধারণ, 

  • (২) আইন-বিভাগ ও শাসন-বিভাগের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি এবং 

  • (৩) শাসন ক্ষমতার আঞ্চলিক বণ্টন নীতি। 

লীকক্ সরকারকে প্রধানত দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন : গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র। গণতন্ত্রকে তিনি আবার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ—এই দু’শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। পরোক্ষ গণতন্ত্রকে আবার তিনি দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। সসীম বা নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র (Constitutional Monarchy) এবং সাধারণতন্ত্র (Republic)। ক্ষমতা বণ্টনের বিচারে এদের উভয়কে তিনি দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। এককেন্দ্রিক (Unitary) এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় (Federal) । আবার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার উভয়ের দু’টি রূপের কথা বলেছেন: পার্লামেন্ট বা মন্ত্রিপরিষদ-পরিচালিত (Parliamentary or Cabinet) এবং রাষ্ট্রপতি-শাসিত (Presidential)।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকে লীককের শ্রেণীবিভাগকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন না। তাঁরা সরকারকে (১) স্বৈরতন্ত্র, (২) একনায়কতন্ত্র ও (৩) গণতন্ত্র—এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করার পক্ষপাতী। স্বৈরতন্ত্র আবার তিন ধরনের হতে পারে: (ক) রাজতন্ত্র, (খ) সামরিকতন্ত্র ও (গ) অভিজাততন্ত্র। একনায়কতন্ত্র (ক) ব্যক্তিগত, (খ) দলগত ও (গ) শ্রেণীগত—এই তিন ধরনের হতে পারে। গণতন্ত্রকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়—

  • (১) সসীম বা নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ও 

  • (২) প্রজাতন্ত্র।

সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাজন:

লীককের শ্রেণীবিভাজন সাম্প্রতিককালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না। এই শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সরকারকে মূলত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করার পক্ষপাতী। এই শ্রেণীবিভাগ হল: 

  • (১) গণতন্ত্র (Democracy), 

  • (২) স্বৈরতন্ত্র (Authoritarianism) এবং 

  • (৩) একনায়কতন্ত্র (Dictatorship)। 

গণতন্ত্রের দু’টি রূপ আছে : 

এদের উভয়কে এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে বিভক্ত করা হয়। এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উভয়কে আবার মন্ত্রিসভা-শাসিত এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে বিভক্ত করা যায়। স্বৈরতন্ত্রকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। রাজতান্ত্রিক, সামরিক ও অভিজাততান্ত্রিক। একনায়কতন্ত্র ব্যক্তিগত, দলগত এবং শ্রেণীগত এই তিন ধরনের হতে পারে।

সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগে অত্যাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি:

বর্তমান শতাব্দীর বাস্তববাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কিত গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেন। এঁদের মতানুসারে চিরাচরিত শ্রেণীবিভাজন অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক। কারণ কেবলমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক বা কাঠামোগত আনুষ্ঠানিক রূপটির মধ্যে সরকারের মূল প্রকৃতির পরিচয় পাওয়া যাবে না। আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের কথা বাদ দিলেও দেশের ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, আর্থনীতিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি বিষয়ও সরকারের রূপ ও মূল প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের মধ্যে ডেভিড ইস্টন, অ্যালান বল অ্যালমন্ড ও পাওয়েল প্রমুখ অত্যাধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সরকারের অতি সাম্প্রতিক শ্রেণীবিভাগ:

ইস্টন প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিযোগ হল সরকারের উপরিউক্ত শ্রেণীবিভাগ বাস্তবধর্মী নয়। রাষ্ট্রচরিত্রের কোন ইঙ্গিত এই শ্রেণীবিভাগের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ সরকার ও তার শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কিত আলোচনার পরিবর্তে রাজনীতিক ব্যবস্থা (Political system)-র শ্রেণীবিভাগের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। বল বলেছেন: “A more rewarding approach to the problems of classification would be to classify types of political systems rather than to concentrate on types of Government.”ইস্টনের মতানুসারে সমাজের সবরকম রাষ্ট্রনীতিক কার্যকলাপ ও রাষ্ট্রনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গঠন, প্রকৃতি ও ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতিকে নিয়ে একটি রাজনীতিক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। এই কারণে রাজনীতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে রাজনীতিক ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে মৌলিক পার্থক্য দেখা যায়। অ্যালান বল রাজনীতিক ব্যবস্থাকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন: 

  • (১) উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা (Liberal Democratic system), 

  • (২) সর্বাত্মক ব্যবস্থা (Totalitarian system) এবং 

  • (৩) স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা (Autocratic system)। 

বলের মতানুসারে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক বা যুক্তরাষ্ট্রীয় হতে পারে এবং মন্ত্রিসভা-শাসিত বা রাষ্ট্রপতি-শাসিত হতে পারে। তাঁর মতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা সাম্যবাদী বা ফ্যাসিবাদী হতে পারে। তা ছাড়া স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বল দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। সনাতনপন্থী ও আধুনিক। তা ছাড়া আধুনিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আবার সামরিক বা অসামরিক হতে পারে।

মার্কসীয় মতানুসারে সরকারের আধুনিক শ্রেণীবিভাগ:

মার্কসবাদীরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করে থাকেন। মার্কসবাদীদের মতানুসারে রাষ্ট্রের যন্ত্র হিসাবে সরকার কাজ করে। সুতরাং সরকারের প্রকৃতি রাষ্ট্রের চরিত্রের উপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় আর্থনীতিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্বকারী শ্রেণীর উপর সরকারের প্রকৃতি নির্ভরশীল। সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক সরকার আছে। অথচ এই সমস্ত দেশগুলির সরকার একই রকমের তা বলা যায় না। গণ-প্রজাতন্ত্রী চিনের সরকার গণতান্ত্রিক। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সরকারও গণতান্ত্রিক। এতদসত্ত্বেও এদের শাসনব্যবস্থার মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য আছে তা অস্বীকার করা যায় না। মার্কসীয় দর্শন অনুসারে মানবসমাজের ক্রমবিকাশের ধারা এবং আর্থনীতিক শক্তির বিন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের সরকারের কথা বলা হয়। মার্কসবাদে সরকারের শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে সমাজব্যবস্থার ঐতিহাসিক প্রকৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কারণ মার্কসীয় দর্শন অনুসারে সরকার হল আসলে সমাজব্যবস্থারই প্রতিফলনস্বরূপ। এই সূত্রে চার প্রকারের সরকারের কথা বলা হয়ে থাকে। এগুলি হল: দাসভিত্তিক সরকার, সামন্ততান্ত্রিক সরকার, বুর্জোয়া সরকার, এবং সমাজতান্ত্রিক সরকার। দাসভিত্তিক সরকার সাধারণত রাজতান্ত্রিক হয়। বুর্জোয়া সরকার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এই সরকার একনায়কতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক, এককেন্দ্রিক বা যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং রাষ্ট্রপতি-শাসিত বা সংসদীয় হতে পারে।