প্রশ্নঃ ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী ‘সম্পত্তি’ বলতে কি বুঝায়? সম্পত্তি কত প্রকার ও কি কি? সকল প্রকার সম্পত্তি কি হস্তান্তরযোগ্য? সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের পরিসর থেকে মুসলিম আইন কতটুকু বাদ হয়েছে?
[What is meant by the word ‘Property’ under the Provisions of the Transfer of Property Act. 1882? How many kinds of property are there? Can all kinds of property be transfered? How far has Muslim Law been saved from the application of the Transfer of Property Act?]
উত্তরঃ
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ‘সম্পত্তি’:
আইনে সম্পত্তি খুব ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। আইন বিশারদ হ্যালসবেরীর মতে, সম্পত্তি হচ্ছে কোন ব্যক্তির নিরঙ্কুশ অধিকার যা দরকষাকষি এবং বিক্রি করা যায়। ব্যবসায়ের সুনাম (Good will), ট্রেড মার্ক, পেটেন্ট স্বত্ব, গ্রন্থস্বত্ব ও চুক্তিগত অধিকার সবই সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। [Halsbury’s Laws of England, 3rd Ed. Vol.33]
Wharton’s Law Lexicon, 14th Ed. এ সম্পত্তির যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে নিম্নরূপঃ
The word ‘property’ means the highest right a man can have to anything, being used for that right which one has to lands for tenements, goods or chattels which does not depend on another’s courtesy. অর্থাৎ সম্পত্তি বলতে কোন কিছুর উপর সর্বোচ্চ অধিকার বুঝায়, যে অধিকার বলে এক ব্যক্তি ভূমিতে বসবাস করে ও বস্তু ব্যবহার করে যা অন্যের সৌজন্যে নয়।
ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের অভিমতঃ
“Property as a legal concept is the sum of a bundle of rights and in the case of tangible property would include the right of possession, the right to enjoy, the right to destroy, the right to retain, the right to alienate and so on.” [Guru Datta Sharma v. State of Bihar, A. I. R. 1961, S. C. 1684, at 1697]
অর্থাৎ আইনগত ধারণা হিসেবে সম্পত্তি হচ্ছে এক গুচ্ছ অধিকার এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সম্পত্তির ক্ষেত্রে দখলের অধিকার ভোগের অধিকার, বিনষ্ট করার অধিকার, রেখে দেয়ার অধিকার, হস্তান্তর করার অধিকার ইত্যাদি বুঝায়।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের মতে, সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র বস্তুগত পদার্থসমূহকেই বুঝায় না, বরং বস্তুগত পদার্থের উপর হতে লব্ধ সকল প্রকার অধিকার ও স্বত্বকে বুঝায় (Sankar Lal V. Ganesh Prasad 29. All. 85]। এই মতানুযায়ী সম্পত্তি শব্দটির দ্বারা বন্ধকী দায় মোচনের ন্যায়সঙ্গত অধিকার (Right of equity of redemption), কায়েমী স্বার্থ প্রভৃতি মামলাযোগ্য অধিকারসমূহকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
বিষয়ের ব্যাপকতার কারণে সম্ভবতঃ ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে সম্পত্তির সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি৷ তবে এটা স্পষ্ট যে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা অ-ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য (Intangible) সকল বস্তু যার উপর কোন ব্যক্তি তার নিজের সুবিধার্থে পূর্ণ অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে তা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির সম্পত্তি।
সম্পত্তির প্রকারভেদঃ
(১) বস্তুনির্ভরতার দৃষ্টিতে সম্পত্তি দুই প্রকারের। যথা— ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য (Corporeal) ও ইন্দ্রিয়াতীত (Incorporeal)
(২) স্থানান্তরের সম্ভাব্যতা করে স্থাবর (Immovable) ও অস্থাবর (Movable) এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়৷
(৩) ব্রিটিশ আইন অনুসারে, প্রকৃত (Real) এবং ব্যক্তিগত (Private) এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।
(৪) মালিকানা স্বত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—সরকারী (Public) ও বেসরকারী (Private)
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সম্পত্তি (Corporeal Property): ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সম্পত্তি বলতে অর্থাৎ যে সকল সম্পত্তি চোখে দেখা ও স্পর্শ করা যায় তাকে বুঝায়। ঘর-বাড়ি, জমা-জমি ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সম্পত্তি। এই ধরনের সম্পত্তিকে বস্তুনির্ভর সম্পত্তিও বলা হয় এবং বস্তুগত আকারেই হস্তান্তর করা হয়।
ইন্দ্ৰিয়াতীত সম্পত্তি (Incorporeal Property): যে সকল সম্পত্তি বাহ্যত দেখা যায় না বা স্পর্শ করা যায় না, কিন্তু এদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায় সেগুলিকে ইন্দ্রিয়াতীত সম্পত্তি বলে। যেমন— ইজারা, বন্ধক, সারভিচিউড, পেটেন্টস্বত্ব, গ্রন্থস্বত্ব ইত্যাদি। এগুলিকে বস্তুনিরপেক্ষ সম্পত্তিও বলা হয়। কোন বস্তু হতে যে অধিকার সৃষ্টি হয় অথবা বস্তুর সহিত যা যুক্ত থাকে এবং ঐ বস্তু হতে উৎপন্ন দ্রব্যের সুবিধা ভোগের অধিকার প্রয়োগ করা হয়। যেমন, হাট-বাজার ও পথের অধিকার অথবা এগুলি হতে কোন সুযোগ সুবিধা ভোগের অধিকারকে ইন্দ্রয়াতীত সম্পত্তিরূপে গণ্য করা হয়। এই সকল সম্পত্তির বস্তুগত অবয়ব নেই এবং শুধুমাত্র এর স্বত্ব মালিকের সহিত সম্পর্কযুক্ত।
স্থাবর সম্পত্তি (Movable Property): যে সকল সম্পত্তি স্থানান্তরযোগ্য বা পরিবহনযোগ্য নয় সেগুলি স্থাবর সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। স্থানান্তরযোগ্যতা বলতে বস্তুর এরূপ যোগ্যতাকে বুঝায় যা হতে এর অবস্থানগত সম্পর্কের পরিবর্তন করা যায়। যেমন— একটা বাড়ি স্থাবর সম্পত্তি। কেননা, একস্থান হতে অন্যস্থানে বাড়ি স্থানান্তর করা যায় না। একে ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে বাড়ি নির্মাণের উপাদানগুলিই শুধু স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করতে হয়। অর্থাৎ কোন বস্তুর গুণগত পরিবর্তন না করে যদি এর স্থান পরিবর্তন করা না যায় তাহলে তাকে স্থাবর সম্পত্তি বলা যাবে। তাই ভূমি সংলগ্ন গাছ স্থাবর সম্পত্তি, কিন্তু উহা কেটে মাটি হতে বিচ্ছিন্ন করার পর আর ৮ তা স্থাবর সম্পত্তি থাকে না। কেননা, তখন তা সহজেই স্থানান্তরযোগ্য হয়ে পড়ে। এই ভাবে ভূমি হতে উদ্ভূত কল্যাণসমূহ, বংশানুক্রমিক ভাতা, পথের অধিকার, হাটবাজারের শুল্ক আদায়ের স্বত্ব, ফেরী ঘাটের ইজারা ইত্যাদিকে স্থাবর সম্পত্তি বলা হয় ৷
অস্থাবর সম্পত্তি (Immovable Property): যে সকল সম্পত্তি স্থানান্তরযোগ্য বা পরিবহনযোগ্য তাকেই অস্থাবর সম্পত্তি বলে। আসবাবপত্র, গাড়ি, গয়না, গবাদিপশু ও অন্যান্য জিনিসপত্রকে অস্থাবর সম্পত্তি বলে।
প্রকৃত সম্পত্তি (Real Property): ব্রিটিশ আইন অনুসারে সম্পত্তির এরূপ শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। যে সকল বস্তু স্থায়ী,অনড় অর্থাৎ স্থবির সেগুলিকে real estate বা প্রকৃত সম্পত্তি বলা হয়। জমি-জমা, প্রজাস্বত্ব বা উত্তরাধিকার স্বত্ব ইত্যাদি হচ্ছে প্রকৃত সম্পত্তি। ভূমির উপরিভাগ বা এর সাথে স্থায়ীভাবে যুক্ত বস্তু, প্রাকৃতিক উৎপন্ন দ্রব্যকে প্রকৃত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। খনিজ পদার্থ উত্তোলনের পূর্বে ভূগর্ভস্থ পেট্রোলিয়াম, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি প্রকৃত সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। ভূমি ও ভূমি সংলগ্ন যাবতীয় পদার্থ- যেমন, দালান কোঠা, ঘর-বাড়ি, কল-কারখানা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদিকে প্রকৃত সম্পত্তি বলা হয়।
ব্যক্তিগত সম্পত্তি (Private Property): ব্রিটিশ আইনে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে সাধারণতঃ আমাদের দেশের অস্থাবর সম্পত্তি বুঝানো হয়। ইহা ব্যক্তির সহিত প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত বলে একে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে। ব্লাকস্টোন বলেন যে, “টাকা-পয়সা, দ্রব্য-সামগ্রী বা কোন অস্থায়ী সম্পত্তির মালিক তার সাথে খুশীমত বহন করতে পারে বলে এগুলিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলা হয়।”
সরকারী সম্পত্তি (Public Property): দেশের সরকার জনগণের স্বার্থে যে সব সম্পত্তির মালিকানা ধারণ করেন, তাকে সরকারী সম্পত্তি বলা হয়। অর্থাৎ সরকার যে সকল সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন সেগুলোকে সরকারী সম্পত্তি বলা হয়। ব্যাংক, বীমা, জাতীয়করণকৃত শিল্পকারখানা প্রভৃতি সরকারী সম্পত্তি। সরকারী সম্পত্তি কারো মতে জনস্বার্থের প্রতীক।
বেসরকারী সম্পত্তি (Private Property): যে সম্পত্তি বেসরকারীভাবে ধারণ বা দখল করা হয় বা ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে যে সম্পত্তির উপর মালিকানা স্বত্ব প্রয়োগ করা হয় সে সম্পত্তিকে বেসরকারী সম্পত্তি বলা হয়। সকল ধরনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেসরকারী সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ বলে বেসরকারী সম্পত্তি ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতীক।
(৫) উপরি-উক্ত শ্রেণীবিভাগ ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিমূলক সম্পত্তি (Intellectual Property) নামে এক প্রকার সম্পত্তি আছে যার মধ্যে গ্রন্থস্বত্ব, পেটেন্ট স্বত্ব, ব্যবসায় সুনাম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্যঃ
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ নম্বর ধারার বিধান সাপেক্ষে যে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, এই আইনে বা বর্তমান বলবৎ অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ বিধান না থাকলে যে কোন প্রকার সম্পত্তি হস্তান্তর করা যেতে পারে তবে কতিপয় সম্পত্তির কথা এই ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলি কোন অবস্থায় হস্তান্তরযোগ্য নয়।
কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় নাঃ
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারার বিধান মতে নিম্নোক্ত সম্পত্তিগুলি হস্তান্তর করা যায় নাঃ
(ক) ভবিষ্য উত্তরাধিকারের সম্ভাবনা (Spes Successions): সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর সম্পত্তি পাবার সম্ভাবনা, আত্মীয়ের মৃত্যুর পর তার অছিয়ত অনুসারে সম্পত্তি পাবার সম্ভাবনা অর্থাৎ সম্পত্তি লাভের কোন সম্ভাবনাকে হস্তান্তর করা যায় না৷
(খ) পুনঃপ্রবেশের অধিকার (Right of re-entry): পরবর্তীকালীন শর্তভঙ্গের জন্য দখল পাবার অধিকার সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিক ব্যতীত অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করা যায় না যেমন, ইজারা শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারা শর্ত অনুসারে ইজারাদাতা ইজারা সম্পত্তিতে পুনঃপ্রবেশ করতে পারে। এই পুনঃপ্রবেশের অধিকার ইজারাদাতা অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করতে পারে না।
(গ) ব্যবহার স্বত্ব (Right to Easement): এটা হচ্ছে একজনের সম্পত্তির উপর আর এক ব্যক্তির অধিকার। যেমন—Easement বা ব্যবহার স্বত্বের অধিকারকে বিচ্ছিন্ন করে হস্তান্তর করা যায় না৷
(ঘ) ব্যক্তিগত স্বার্থ (Interest Property to the owner): কোন সম্পত্তির ভোগ দখলের অধিকার এর মালিকের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে সীমাবদ্ধ থাকলে, তিনি তা হস্তান্তর করতে পারেন না। তাই চুক্তিস্থলে অর্জিত বিধবার ভবিষ্যৎ ভরণ-পোষণের ব্যক্তিগত অধিকার হস্তান্তরযোগ্য নয়৷ অনুরূপভাবে পুরোহিতের সুযোগ সুবিধাসহ পুরোহিতের পদ হস্তান্তর করা যায় না৷
(ঙ) ভবিষ্যৎ খোরপোষের অধিকার (Right to Future Maintenance): ভবিষ্যৎ খোরপোষের অধিকার জনস্বার্থে হস্তান্তরের অযোগ্য করা হয়েছে। এমন কি এ অধিকারটি কোন সম্পত্তির উপর চার্জ সৃষ্টি দ্বারা বা কোন আদালতের ডিক্রি দ্বারা নিশ্চিত করা থাকলেও তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। কিন্তু অতীতের ভরণপোষণের অধিকার হস্তান্তর করা যায়।
(চ) কেবল মামলা করার অধিকার (Mere right to Sue): শুধুমাত্র মামলা করার অধিকার হস্তান্তরযোগ্য নয়। তাই চুক্তিভঙ্গের কারণ ক্ষতিপূরণের মামলা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকেই দায়ের করতে হবে এটা হস্তান্তর করা যায় না। অনুরূপভাবে প্রতিনিধির বিরুদ্ধে হিসাবের জন্য মামলা দায়ের করার অধিকার, হারানো মালের জন্য মামলা করার অধিকার ইত্যাদি হস্তান্তরযোগ্য নয়। কিন্তু একটি সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের জন্য শুধু মামলা করার অধিকার হস্তান্তর না করে সম্পত্তিসহ ঐ অধিকার হস্তান্তর করা হয় তবে তা বৈধ হবে। (১৯৪৩ কলিকাতা ৩২১)
(ছ) সরকারী পদ বা বেতন (Public Office or the Salary of a Public Officer): কোন সরকারী পদ বা সরকারী কর্মচারীর বেতন পাওনা হবার আগে বা পরে হস্তান্তর করা যায় না। অর্থাৎ কোন সরকারী পদের স্বত্ব কিংবা কোন সরকারী কর্মচারীর বেতন কোন অবস্থায় হস্তান্তরযোগ্য নয়।
(জ) বৃত্তি ও পেনশন (Stipends and Pensions): সামরিক, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদেরকে প্রদত্ত বৃত্তি এবং বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে প্রদত্ত পেনশনসমূহ অর্থাৎ এগুলির স্বত্ব হস্তান্তর করা যায় না।
(ঝ) সংশ্লিষ্ট স্বার্থের প্রকৃতি বিরোধী কোন স্বত্ব:
১. সংশ্লিষ্ট স্বার্থের প্রকৃতি বিরোধী কোন স্বার্থ হস্তান্তর করা যায় না। মালিক না হয়ে কেউ কোন জিনিস হস্তান্তর করতে পারে না। তাই সূর্য কিরণ, চন্দ্র কিরণ, নদীর পানি এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত যেমন— মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি হস্তান্তরের অযোগ্য।
২. এছাড়া চুক্তি আইনের বিধান অনুযায়ী যে সকল হস্তান্তরের প্রতিদান অবৈধ সেগুলির হস্তান্তর আইনতঃ বাতিল। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২৩ ধারার বিধান অনুসারে নিম্নোক্ত প্রতিদানগুলি অবৈধঃ-
(ক) যে সকল কাজ আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে,
(খ) প্রচলিত আইনের কোন বিধানের পরিপন্থী,
(গ) প্রতারণামূলক কাজ,
(ঘ) অন্যের শরীরে বা সম্পত্তিতে ক্ষতিকারক কোন কাজ, ও
(ঙ) নৈতিকতা বিরোধী বা জননীতির বিরোধী কাজ।
৩. যে ব্যক্তি হস্তান্তরগ্রহীতা হবার জন্য আইনতঃ অযোগ্য তার নিকট সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না।
এইভাবে ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারায় কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য এবং কোনগুলি নয় তার বিধান সন্নিবেশিত রয়েছে।
মুসলিম আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হস্তান্তরের ক্ষেত্রেঃ
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে যে, এই আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যা বর্ণিত রয়েছে তার কোন কিছুই মুসলিম আইনের বিধানকে প্রভাবিত করবে না। ৫২ ধারার দ্বিতীয় অধ্যায়ে এই লিসপেনডেন্স নীতিটি রয়েছে। কাজেই মুসলিম আইনের সাথে বিরোধ দেখা দিলে মুসলিম আইনই প্রাধান্য পাবে। তাই একজন দাতা মুসলিম আইনের অধীনে একটি সম্পত্তির দখল গ্রহীতার নিকট অর্পণ করে থাকলে এবং পরে সেই দান প্রত্যাহার করে সম্পত্তিটি ফিরিয়ে নিতে চাইলে লাহোর হাই কোর্ট তা অগ্রাহ্য করেন [১৯৬৫, পি. এল. ডি. লাহোর-২০০] কেননা এক্ষেত্রে লিসপেনডেন্স নীতি প্রয়োগ করে দানগ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তি বিক্রি করা বন্ধ করা যায় না।
Leave a comment