প্রশ্নঃ সমুদ্র পথে মাল পরিবহনের চুক্তির অব্যক্ত শর্ত কি? এই শর্তের কোন একটি ভঙ্গ হলে তার আইনগত ফলাফল কি?
ভূমিকাঃ নৌপথে পণ্যসামগ্রী এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে যেমন নেয়া হয়। তেমনি এক দেশ থেকে অন্য দেশেও আনা নেয়া করা হয়। সমুদ্র পথে আমাদের দেশের কোন পণ্য এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে অথবা অন্য কোন দেশের বন্দরে স্থানান্তর করা হয় ১৯২৫ সালের সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহন আইন দ্বারা।
ভাড়ার চুক্তি (Contract of affreightment) কাকে বলে বা জাহাজ ভাড়ার (Freight) সংজ্ঞাঃ কোন ব্যক্তি সমুদ্র পথে পরিবহণের জন্য জাহাজ সরবরাহ করতে প্রতিদানের বিনিময়ে কোন জাহাজের মালিক বা তার প্রতিনিধির সাথে চুক্তি করলে তাকে ভাড়ার চুক্তি জাহাজ ভাড়ার চুক্তি বলে।
এই ধরনের পণ্য পরিবহনের বিনিময়ে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে মাশুল (Freight) বলে। পণ্য পরিবহন চুক্তিতে দু’টি পক্ষ থাকে। যে পক্ষ পণ্য প্রেরণ করে তাকে পণ্য প্রেরক বলে। আর যে পক্ষ বহন করে তাকে পণ্য বহনকারী বলে।
নৌপরিবহন চুক্তি দুই ধরনের। (১) চার্টার পার্টি বা নৌ-ভাটক পত্র, (২) চালান রশিদ।
কার নিকট জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়ঃ মূলতঃ জাহাজের মালিক বা যার সাথে জাহাজ ভাড়ার চুক্তি হয় তাকে ভাড়া বা মাশুল পরিশোধ করতে হয়। জাহাজ ভাড়ার চুক্তি করার পর জাহাজটি বিক্রি করা হলে উক্ত জাহাজের নতুন ক্রেতাকে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। যদি জাহাজ বন্ধক রাখা হয় তাহলে যিনি বন্ধক গ্রহীতা তাকে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া মাশুলের স্বত্ব অন্য ব্যক্তিকে প্রদান করা হলে তার বরাবর জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
অর্থাৎ নিম্নোক্ত ব্যক্তির নিকট জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়-
(১) জাহাজের মালিক বা যার সাথে জাহাজ ভাড়ার চুক্তি হয়।
(২) জাহাজটি বিক্রি করা হলে উক্ত জাহাজের নতুন ক্রেতাকে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
(৩) যদি জাহাজ বন্ধক রাখা হয় তাহলে যিনি বন্ধক গ্রহীতা তাকে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
(৪) মাশুলের স্বত্ব অন্য ব্যক্তিকে প্রদান করা হলে তার বরাবর জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
সমুদ্র পথে মাল পরিবহনের চুক্তির অব্যক্ত (অনুক্ত) শর্তঃ নিম্নে সমুদ্র পথে মাল পরিবহনের চুক্তির অব্যক্ত (অনুক্ত) শর্ত উল্লেখ করা হলো-
(১) সমুদ্র যাত্রায় জাহাজের উপযুক্ততা : পণ্য পরিবহনের চুক্তি করা হলে ধরে নেয়া হয় যে সংশ্লিষ্ট জাহাজটি সমুদ্র যাত্রার জন্য উপযুক্ত। এই উপযুক্ততা বলতে জাহাজের বিপদ মোকাবেলা করার ক্ষমতা, পণ্য পরিবহন করার ক্ষমতা ইত্যাদি বোঝায়।
(২) যথা সময়ে যাত্রা শুরু : যথা সময়ে যাত্রা করা সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহণের একটি বা অব্যক্ত শর্ত।
(৩) যথা সময়ে সমাপ্তি : যথা সময়ে পণ্য নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো পণ্য পরিবহণের একটি অনুক্ত বা অব্যক্ত শর্ত।
(৪) স্বাভাবিক পথে পণ্য বহন করা : চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পথে বা স্বাভাবিক পথে পণ্য পরিবহন করতে হয়।
(৫) ক্ষতিকর পণ্য প্রেরণ না করা : পণ্য প্রেরণকারী কোন ক্ষতিকর পণ্য জাহাজে প্রেরণ করবেন না এটিও একটি অব্যক্ত শর্ত।
এই শর্তের কোন একটি ভঙ্গ হলে তার আইনগত ফলাফলঃ উপরোক্ত শর্ত ভঙ্গ হলে এবং মালামালের কোন ক্ষতি হলে পণ্য বাহক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। যদি বাহক এরূপ দায় থেকে অব্যহতি প্রদানের শর্তও থাকে তবুও উক্ত দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
কিন্তু বাহক যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছেন অর্থাৎ তার কোন অবহেলার কারণে ক্ষতি হয় নি তাহলে তিনি দায় মুক্তি পেতে পারেন।
উপসংহারঃ যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হলো নৌপথ। পণ্য পরিবহনে এই পথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সাশ্রয়ী মূল্যে নৌপথে অধিক পণ্য বংশ করা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যতীত এই পথে পণ্যের ক্ষতির আশংকা খুবই কম থাকে।
Leave a comment