THE LAW OF THE SEA

সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ কনভেনশন, ১৯৮২ 

[United Nations Convention on the Law of the Sea, 1982]

অত্র কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্রসমূহ,

পারস্পারিক সমঝোতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সমুদ্র আইন বিষয়ক সকল প্রশ্ন মীমাংসার অভিপ্রায়ে এবং বিশ্বের সকল জনগোষ্ঠীর জন্য শাস্তি, ন্যায় বিচার এবং অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে এই কনভেনশনের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা উপলব্ধি করে,

১৯৫৮ এবং ১৯৬০ সালে জেনেভায় সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ সম্মেলনের পরবর্তী ঘটনাবলী সমুদ্র আইন সম্পতির্ক একটি নতুন ও সাধারণভাবে গৃহিত কনভেনশনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করেছে তা উদ্দেশ্য করে, সমুদ্র এলাকার সমস্যাবলী একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত ও সেগুলো সমগ্রিকভাবে বিবেচ্য তা অনুভব করে, সকল- দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি যথাযথ সম্মান সহকারে এই কনভেনশনের দ্বারা সকল সমুদ্র এবং মহাসমুদ্রের জন্য প্রযোজ্য একটি আইন ব্যবস্থা অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যে ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আরো সহজ করে তুলবে এবং সমুদ্র ও মহাসমুদ্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, জীব সম্পদের সংরক্ষণ, সমুদ্র সম্পদের কার্যকরী ও সুষম সঠিক ব্যবহার এবং সামুদ্রিক পরিবেশের অধ্যয়ন এবং রক্ষণের অগ্রগতি সাধন করবে, তা স্বীকার করে,

এই উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন একটি ন্যায় এবং সুষম আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে, যে ব্যবস্থা সমগ্র মানব জাতির বিশেষত উন্নয়নমূখী দেশসমূহের চাহিদার ও স্বার্থের কথা বিবেচনা করবে, তা মনে রেখে,

১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে অত্র কনভেনশনের মাধ্যমে গৃহীত ২৭৪৯ (২৫) নম্বর সিদ্ধান্তের অন্তর্ভূক্ত নীতিসমূহের বিকাশ সাধন করা অবশ্য বাঞ্ছনীয়, যে সিদ্ধান্তে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, জাতীয় এখতিয়ারের সীমানা বহির্ভূত সমুদ্রতল, অন্তভূমি (subsoil) ও সমুদ্রের মেঝে এবং সম্পদগুলো মানব জাতির উত্তরাধিকার, যাহা রাষ্ট্রগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল মানব জাতির কল্যাণের লক্ষ্যে ব্যবহার করা হবে,

অত্র কনভেনশনের দ্বারা অর্জিত সমুদ্র আইনের বিধিবদ্ধকরণ এবং ক্রম-উন্নয়ন ন্যায় বিচার ও সম অধিকার নীতির উপর ভিত্তি করে সকল জাতির মধ্যে শান্তি সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার ও সনদে বর্ণিত জাতিসঙ্ঘের উদ্দেশ্য এবং নীতিসমূহ অনুযায়ী বিশ্বের সমগ্র জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করবে তা বিশ্বাস করে,

অত্র কনভেনশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত নয় সেই সব বিষয় সাধারণ আন্তর্জতিক আইনের নিয়ম-নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকবে তা ঘোষণাপূর্বক, নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে একমত হয়েছে—

পার্ট ১ সূচনা (Introduction) 

অনুচ্ছেদ-১ঃ টার্মের ব্যবহার এবং সুযোগ

(১) এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে–

১. “এলাকা” বলতে বুঝায়, জাতীয় এখতিয়ারের সীমানা বহির্ভূত সমুদ্রতল, মহাসমুদ্রের মেঝে ও তার অন্তভূমি;

২. “কর্তৃপক্ষ” বলতে বুঝায়, আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ;

৩. “এলাকার ভিতর কার্যকলাপ” বলতে বুঝায়, এলাকার সম্পদসমূহের সদ্ব্যবহার ও অনুসন্ধান সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম;

৪. “সামুদ্রিক পরিবেশ দূষণ” বলতে বুঝায়, মানুষের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সামুদ্রিক পরিবেশে কোনো বস্তু বা শক্তির প্রবেশ ঘটান, যাহা প্রাণীসম্পদ অথবা সামুদ্রিক জীবন এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, মৎস্য শিকার ও সমুদ্রের অন্যান্য বৈধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধার তৈরী করে, সমুদ্রের পানি ব্যবহারের মান ও সুযোগসুবিধা কমিয়ে ফেলে।

৫. (ক) “আবর্জনা ফেলা” বলতে বুঝায়-

(অ) নৌযান, বিমান, প্লাটফর্ম বা অন্য কোনো মানুষ সৃষ্ট কাঠামো হতে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বর্জ্য পদার্থ অথবা অন্য বস্তু সমুদ্রে ফেলা;

আ) ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো নৌযান, বিমান, প্লাটফর্ম অথবা মানব-সৃষ্ট কোনো কাঠামো সমুদ্রে ফেলা;

খ) “আবর্জনা ফেলা” বলতে নিম্নের কোনো কিছুকেই বুঝায় না;

অ) নৌযান, বিমান, প্লাটফর্ম বা সমুদ্রে মানব-সৃষ্ট অন্য কোনো কাঠামো এবং সরঞ্জাম এর সাভাবিক পরিচালনার আনুষাঙ্গিক বা তা হতে সৃষ্ট আবর্জনা বা অন্য কোনো বস্তু ফেলা।

আ) শুধুমাত্র ফেলে দেওয়ার লক্ষ্যে নয় বরং অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু স্থাপন, যদি উক্তরূপ স্থাপন এইসব কনভেনশনের উদ্দেশ্য সমূহের পরিপন্থী না হয়।

২) ১. পক্ষরাষ্ট্র বলতে বুঝায়, এমন সব রাষ্ট্র যেগুলো এই কনভেনশন মেনে চলতে সম্মতি দিয়েছে ও যেগুলোর জন্য অত্র কনভেনশন কার্যকর থাকবে।

২. অত্র কনভেনশন আনুষাঙ্গিক পরিবর্তন সাপেক্ষে ৩০৫ অনুচ্ছেদের (১) (খ) (গ),(ঘ), (ঙ) এবং (চ) পরিচ্ছেদে উপস্থাপিত সত্ত্বাসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যারা প্রত্যেক প্রাসঙ্গিক শর্ত অনুসারে এই কনভেনশনের পক্ষ হবে।

পার্ট ২

আঞ্চলিক সমুদ্র ও সংলগ্ন এলাকা

[TERRITORIAL SEA AND CONTIGUOUS ZONE]

বিভাগ-১: সাধারণ বিধানসমূহ[SECTION-1: GENERAL PROVISIONS]

অনুচ্ছেদ-২: রাষ্ট্রাধীন সমুদ্র, উহার উপরে আকাশ সীমা এবং ইহার তটরেকা এবং অন্তর্ভুমির আইনগত অবস্থান

১) কোনো উপকূলীয় দেশের সার্বভৌমত্ব তার স্থলভাগ এবং অভ্যন্ত-রীণ জলরাশির বাহিরে ও দ্বীপপুঞ্জ-রাষ্ট্রের-বেলায় দ্বীপপুঞ্জ জলরাশির বাহিরে, আঞ্চলিক সমুদ্র নামে অভিহিত এক সংলগ্ন সমুদ্র বেষ্টনী পর্যন্ত প্রসারিত।

২) এই সার্বভৌমত্ব আঞ্চলিক সমুদ্রের উপরিভাগের বায়ুমন্ডল এবং আঞ্চলিক সমুদ্রের তলদেশ ও অন্তভূমির উপরও বিস্তৃত।

৩) অত্র কনভেনশনে ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য বিধানাদি সাপেক্ষে আঞ্চলিক সমুদ্রের উপর সার্বভৌমত্ব সংযুক্ত হবে।

বিভাগ-২: আঞ্চলিক সমুদ্রের সীমা

[SECTION-2: LIMIT OF THE TERRITORIAL SEA]

অনুচ্ছেদ-৩: বিস্তৃত আঞ্চলিক সমুদ্র [Breadth of the territorial sea]

প্রত্যেক দেশের, অত্র কনভেনশন অনুসারে নির্দিষ্ট ভিত্তিরেখা থেকে অনুর্ধ ১২ নটিকাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত আঞ্চলিক সমুদ্র প্রতিষ্ঠার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৪: আঞ্চলিক সমুদ্রের বহিস্থ সীমা [Outer limit of the territorial sea]

আঞ্চলিক সমুদ্রের বহিস্থ সীমা এমন একটি রেখা যার প্রত্যেকটি বিন্দুর দূরত্ব ভিত্তিরেখা সর্বাপেক্ষা পার্শ্ববর্তী বিন্দু থেকে আঞ্চলিক সমুদ্রের প্রশস্ত-তার সমান হবে।

অনুচ্ছেদ-৫: স্বাভাবিক ভিত্তিরেখা [Normal baseline]

অত্র কনভেনশনের যে-ক্ষেত্রে অন্যরকম বিধান করা হয়েছে সেক্ষেত্র ছাড়া, আঞ্চলিক সমুদ্রের প্রসারতার পরিমাপের স্বাভাবিক ভিত্তিরেখা হবে উপকূক্ত বরাবর নিম্ন জলরেখা যা উপকূলীয় দেশ দ্বারা সরকারীভাবে অনুমোদিত বৃহৎ মানচিত্রে চিহ্নিত থাকবে।

অনুচ্ছেদ-৬: প্রবাল প্রাচীর [Reefs]

উপহ্রদকে পরিবেষ্টন করে রাখা বয়াকর প্রবাল দ্বীপ বা প্রবাল প্রাচীর বিশিষ্ট দ্বীপের বেলায় আঞ্চলিক সমুদ্র পরিমাপের ভিত্তিরেখা হবে সমুদ্র প্রান্ত-স্থ নিম্ন জলরেখা, যা উপকূলীয় দেশ দ্বারা অনুমোদিত মানচিত্র যথাযথভাবে চিহ্নিত।

অনুচ্ছেদ-৭: সোজা ভিত্তিরেখাসমূহ [Straight baselines]

১) যে-সকল স্থানে উপকূল রেখা গভীর খাতযুক্ত ও কাটা কাটা বা যেখানে উপকূল বরাবর অতিব নিকটবী স্থানে দ্বীপমালা রয়েছে, সেখানে আঞ্চলিক সমুদ্রের সীমা পরিমাপের জন্য ভিত্তিরেখা হিসেবে, (উপকুলের) উপযুক্ত বিন্দুসমূহকে সংযোগ করে একাধিক সরল ভিত্তিরেখা অঙ্কনের পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

২) যেখানে দ্বীপ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক অবস্থার বিদ্যমানতার জন্য উপকূল রেখা অতিব অস্থীতিশীল, সেখানে ভিত্তি রেখা অঙ্কন করার জন্য সর্বাধিক দূরবর্তী সমুদ্র প্রান্তস্থ নিম্ন জলরেখা বরাবর উপযুক্ত বিন্দুসমূহ নির্বাচন করা যেতে পারে ও পরবর্তী সময়ে নিম্ন জলরেখার পশ্চাদগমন সত্ত্বেও [অনুরূপ] ভিত্তি রেখাসমূহ কার্যকর থাকবে যতদিন না উপকূলীয় দেশ অত্র কনভেনশন মোতাবেক সেগুলো পরিবর্তন করে।

৩) উপকূলের সাধারণ গতিপথ থেকে অনুরূপ সরল ভিত্তিরেখাসমূহ অবশ্যই অবধারণীয় পরিমাণে ভিন্ন হবে না; এবং এই রেখাগুলোর অভ্যন্ত-রীন সমুদ্র এলাকা দেশের অধীন স্থলভাগের সাথে যথেষ্ট নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হবে, যাতে এই সমুদ্র এলাকা অভ্যন্তরীণ জলরাশি বিষয়ক শাসনবিধানাদি প্রয়োগের উপযোগী হয়।

৪) শুধুমাত্র ভাটার সময় যেসব স্থান পানির উপরের দিকে জেগে উঠে সেসব স্থান থেকে বা পর্যন্ত ভিত্তিরেখা টানা যাবে না, যদি না সেই সব জায়গায় সমুদ্র উচ্চতা অপেক্ষা স্থায়ীভাবে অধিক উচ্চ আলোকগৃহ বা স্থাপনা নির্মিত হয়ে থাকে অথবা অনুরূপ স্থান হতে বা পর্যন্ত ভিত্তিরেখা অঙ্কন সাধারণ আন্তর্জাতিক অনুমোদন লাভ করে থাকে।

৫) যেখানে (১) পরিচ্ছেদের অধীনে ‘সরল ভিত্তিরেখা পদ্ধতি’ প্রযোজ্য সেখানে ভিত্তিরেখাগুলো নির্ধারণের বেলায় ঐসকল এলাকার বিশেষ অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে, যে স্বার্থের বাস্তবতা এবং গুরুত্ব বহু দিনের আচারের মাধ্যমে সুষ্ঠভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

৬) কোনো দেশ ‘সরল ভিত্তিরেখা পদ্ধতি’ এমনভাবে প্রয়োজ করবে না যার ফলে অন্য দেশে আঞ্চলিক সমুদ্র উন্মুক্ত সমুদ্র থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে।

অনুচ্ছেদ-৮: অভ্যন্তরীণ জলরাশি [Internal waters]

(১) পার্ট-৪-এ যেসব নিয়ম-রয়েছে সেসব বিধান সাপেক্ষে, আঞ্চলিক সমুদ্রের ভিত্তিরেখা থেকে স্থলভাগ পর্যন্ত যে জলরাশি তা উপকূলীয় দেশে অভ্যন্তরীণ জলরাশির আওতাভূক্ত হবে।

২) যদি ৭ অনুচ্ছেদ সাপেক্ষে সরল ভিত্তিরেখা প্রতিষ্ঠার ফলে, পূর্বে অভ্যন্তরীণ জলরাশি ছিলনা এমন অঞ্চল অভ্যন্তরীণ জলরাশির আওতাভূক্ত হয়ে পড়ে, তবে সেই জলরাশিতে অত্র কনভেনশনের বিধানাদি সাপেক্ষে নির্দোষভাবে পার হবার অধিকার থাকবে।

অনুচ্ছেদ-৯: নদীর মোহনা [Mouths of rivers]

যেখানে কোনো নদী সমুদ্রে সরাসরি পতিত হয় সেখানে নদীটির উভয় তীরের নিম্ন জলরেখায় অবস্থিত বিন্দুগুলোর মাঝে সংযোগকারী মোহনা বরাবর সরল রেখাকে ভিত্তিরেখা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

অনুচ্ছেদ-১০: উপসাগরসমূহ [Bays]

১) অত্র অনুচ্ছেদ শুধু এমন উপসাগরের বেলায় প্রযোজ্য হবে যার উপকূল ভাগ একটি মাত্র দেশের অর্ন্তভূক্ত।

২) অত্র অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য, উপসাগর বলতে এমন এক্স চিহ্নিত জলখাতকে বুঝায়, যাহা উহার মোহনার প্রসারতার তুলনায় এত বেশী ভিতরে প্রবেশ করেছে যে, স্থলবেষ্টিত জলরাশি ধরে রাখতে পারে ও যা উপকূলের বাঁকমাত্র নয়। অবশ্য কোনো জলখাত উপসাগর বলে বিবেচনা করা হবে না, যদি না উহার ক্ষেত্রফল অর্ধবৃত্তের সমান বা অধিক হয়, যার ব্যাসটি সেই জলখাতের মোহনা বরাবর আঁকা একটি রেখা।

৩) পরিমাপের লক্ষ্যে, জলখাতের তীর বরাবর নিম্নজল রেখা ও জলখাতের স্বাভাবিক প্রবেশ বিন্দুসমূহের নিম্নজল রেখাকে সংযুক্তকারী রেখার মধ্যে অবস্থিত এলাকাকে জলখাতের ক্ষেত্র বলে বিবেচনা করা হবে। যেখানে দ্বীপের অবস্থানের জন্য কোনো খাতের একাধিক মোহনা খাতে সেখানে অর্ধবৃত্তটি এমন এক রেখার উপর আঁকা হবে যার দৈর্ঘ্য বিভিন্ন মোহনা বরাবর অঙ্গিত রেখাসমূহের সর্বমোট দৈর্ঘ্যের সমান হবে। কোনো জলখাতের অভ্যন্তরীন দ্বীপপুঞ্জ সেই জলখাতের জল এলাকার আওতাভূক্ত বলে বিবেচিত হবে।

৪) যদি কোন উপসাগরের স্বাভাবিক প্রবেশবিন্দুদ্বয়ে নিম্নজল চিহ্নগুলোর মাঝে দূরত্ব চব্বিশ নটিক্যাল মাইলের বেশী না হয়, তাহলে এই দুই নিম্ন জলচিহ্নের মাঝে একটি সংযোগকারী রেখা আঁকা যেতে পারে ও এই রেখার মধ্যবর্তী স্থানের জলরাশি দেশের অভ্যন্তরীণ জলরাশি বলে গন্য হবে।

৫) যেখানে কোনো উপসাগরের সাধারন প্রবেশবিন্দুদ্বয়ের নিম্নজল চিহ্নগুলোর মাঝে

দূরত্ব চব্বিশ নটিক্যাল মাইলের বেশী, সেখানে উপসাগরের মধ্যে চব্বিশ নটিক্যাল মাইল দীর্ঘ একটি সরল ভিত্তিরেখা এমনভাবে আঁকতে হবে যাতে সেই রেখার মাধ্যমে যতদূর সম্ভব অধিক পরিমাণ জল-এলাকা বেষ্টিত হতে পারে।

৬) উপযুক্ত বিধানাবদি তথাকথিত “ঐতিহাসিক” উপসাগরগুলোর ক্ষেত্রে বা যেখানে ৭ অনুচ্ছেদের আওতাধীনে ‘সরল ভিত্তিবেখা পদ্ধতি’ প্রয়োগ করা হয় সেরূপ কোনো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

অনুচ্ছেদ-১১: বন্দর বা পোতাশ্রয় [Ports]

আঞ্চলিক সমুদ্রের সীমানা নির্ধারণের লক্ষ্যে, পোতাশ্রয় ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ব্যবহৃত পোতাশ্রয়ের সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী স্থায়ী নির্মাণসমূহ উপকূলের অংশ হিসেবে গন্য হবে। সমুদ্রতীর থেকে দূরবর্তী অন্যান্য স্থাপন বা কৃত্রিম দ্বীপ পোতাশ্রয়ের স্থায়ী নির্মাণসমূহের আওতাভূক্ত বলে গন্য হবে না।

অনুচ্ছেদ-১২: বন্দর বা পোতাশ্রয় [Roadsteads]

যে-সকল স্থান সাধারণত জাহাজে মাল খালাস করা ও বোঝাই এবং জাহাজ নোঙ্গর করার কার্যে ব্যবহৃত হয় এবং অন্যথায় যেগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে আঞ্চলিক সমুদ্রের বহিঃসীমার বাহিরে অবস্থিত সেইসকল স্থান আঞ্চলিক সমুদ্রের আওতাভূক্ত।

অনুচ্ছেদ-১৩: ভাটাকালীন উচ্চভূমি [Low-tide elevations]

১) ‘ভাটাকালীন উচ্চভূমি’ বলতে প্রাকৃতিক নিয়মে গঠিক এমন সব স্থলভাগসমূহকে বুঝায় যা ভাটার সময় চারদিকে জলবেষ্টিত ও জলের উচ্চতার উপরিভাগে থাকে কিন্তু জোয়ারে সময় জলমগ্ন হয়ে যায়। যেখানে কোনো’ভাটাকালীন উচ্চভূমি’ সম্পূর্ণ বা আংশিক মূল ভূমি অথবা দ্বীপ থেকে আঞ্চলিক সমুদ্রের প্রশস্ততা অপেক্ষা বেশী দূরে অবস্থিত নয়, সেখানে আঞ্চলিক সমুদ্রের বিস্তৃতি পরিমাপের জন্য সেই উচ্চভূমির উপরিভাগের নিম্নজল রেখা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

২) যদি কোনো ‘ভাটাকালীন উচ্চভূমি’ সম্পূর্ণরূপে মূল ভূমি অথবা দ্বীপ থেকে আঞ্চলিক সমুদ্রের বিস্তৃতি অপেক্ষা অধিক দূরে অবস্থিত হয়, তাহলে তার নিজের কোনো আঞ্চলিক সমুদ্র থাকবে না।

অনুচ্ছেদ-১৪: ভিত্তি রেখাসমূহ নির্ধারণের জন্য পদ্ধতিসমূহের সমন্বয় [Combination of methods for determining baselines]

উপকূলবর্তী দেশগুলো বিভিন্ন অবস্থার সাথে মিল তৈরী করার লক্ষ্যে একেরপর এক আগে উপস্থাপিত যে কোনো পদ্ধতির দ্বারা ভিত্তিরেখা নির্ধারণ করতে পারবে।

অনুচ্ছেদ-১৫: বিপরীত বা সংলগ্ন উপকূলসমূহের মধ্যে রাষ্ট্রাধীন সমুদ্রের সীমা নির্ধারণ [Delimitation of the territorial sea between States with opposite or adjacent coasts]

যেখানে দুইটি দেশের উপকূল একে অন্যের বিপরীত বা সংলগ্ন সেখানে, দুয়ের মাঝে কোনো বিপরীতধর্মী সমঝোতা না থাকলে, কোনো দেশেরই আঞ্চলিক সমুদ্রসীমা ‘মধ্য রেখা’ অতিক্রম করবে না, যে মধ্যরেখার প্রতিটি বিন্দু দুটি দেশের আঞ্চলিক সমুদ্রের বিস্তৃতি পরিমাপের ভিত্তিরেখার পার্শ্ববর্তী বিন্দু থেকে সমান দূরত্বে অবস্থিত। অবশ্য এই পরিচ্ছেদের বিধানাদি ঐসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না যেসব ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক স্বত্ব বা অন্য কোনো বিশেষ অবস্থার জন্য ভিন্নতর পদ্ধতিতে দুটি দেশের আঞ্চলিক সমুদ্রের সীমা চিহ্নিত করা দরকার।

অনুচ্ছেদ-১৬: ভৌগোলিক সমন্বয়ের নকশা বা তালিকাদি [Charts and lists of geographical coordinates]

১) অনুচ্ছেদ ৭, ৯ এবং ১০ অনুযায়ী নির্দিষ্টকৃত আঞ্চলিক সমুদ্রের বিস্তৃতি পরিমাপের ভিত্তিরেখা বা ঐ বিধানাদি থেকে নির্গত সীমারেখাগুলো এবং অনুচ্ছেদ ১২ ও ১৫ সাপেক্ষে অঙ্কিত সীমা-নির্ধারক রেখাগুলো এমন পরিমাপে মানচিত্রে চিহ্নিত করতে হবে যাতে সেগুলোর আসল অবস্থান সম্বন্ধে সুনিশ্চিত হওয়া যায়।

২) উপকূলবর্তী দেশ এই জাতীয় ভৌগোলিক সমন্বয়ের নকশা বা তালিকাদির প্রচার করবে এবং এই জাতীয় প্রতিটি নকশা বা তালিকার একটি অনুলিপি জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের নিকট জমা রাখবে।

বিভাগ-৩: আঞ্চলিক সমুদ্রে নির্দোশ অতিক্রমণ

SECTION 3: INNOCENT PASSAGE IN THE TERRITORIAL SEA

উপ-বিভাগ-ক: সকল জাহাজের জন্য প্রযোজ্য নিয়মাবলী

[SUB-SECTION-A: RULES APPLICABLE TO ALL SHIPS]

অনুচ্ছেদ-১৭৪ নির্দোষ অতিক্রমের অধিকার [Right of innocent passage]

অত্র কনভেনশনের বিধানাদি সাপেক্ষে, উপকূলীয় দেশ হোক আর না হোক, সকল দেশের জাহাজ আঞ্চলিক সমুদ্রের মাঝে দিয়ে নির্দোষ অতিক্রমের অধিকার গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-১৮: অতিক্রমের অর্থ [Meaning of passage]

১) অতিক্রম বলতে নিম্নে উপস্থাপিত উদ্দেশ্য আঞ্চলিক সমুদ্রের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে নৌযান চলাচলকে বুঝানো হয়।

ক) অভ্যন্তরীণ জলরাশিতে প্রবেশ না করে বা অন্তর্বর্তী জলরাশির বাহিরে নঙ্গরস্থান বা বন্দরের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ না করে কেবলমাত্র আঞ্চলিক সমুদ্র পাড়ি দেওয়া; অথবা

খ) অভ্যন্তরীণ জলরাশি অথবা নঙ্গরস্থান বা বন্দর থেকে বা অভিমুখে যাত্রা।

২) অতিক্রমণ অবশ্যই ধারাবাহিক এবং দ্রুত হতে হবে। জাহাজ থামানো এবং নোঙ্গর করা অতিক্রমণের আওতাভূক্ত; কিন্তু সাধারণ নৌ-চালন সম্বন্ধে অথবা গুরুতর বিপর্যয় বা দু দৈবের জন্য অথবা বিপন্ন বা দুর্দশাগ্রস্ত কোন ব্যক্তি, জাহাজ বা বিমানকে সাহায্য করার জন্য যতটুকু দরকার শুধু ততটুকুই থামানো বা নোঙ্গর করা যেতে পারে।

অনুচ্ছেদ-১৯: নির্দোষ অতিক্রমের অর্থ [Meaning of innocent passage]

১) যতক্ষণ অতিক্রমণ উপকূলীয় দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা বা নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত উহা নির্দোষ বলে গন্য হবে। এইরূপ অতিক্রমণ অত্র কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য বিধানাদি সাপেক্ষে করতে হবে।

২) যদি কোনো বিদেশী জাহাজ আঞ্চলিক সমুদ্রে নিম্নে উপস্থাপিত কোন কার্যাদির সাথে মিলিত হয়, তাহলে সেই অতিক্রমণ উপকূলীয় দেশের শাস্তি, শৃঙ্খলা বা নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে গন্য হবে–

ক) উপকূলীয় দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখন্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে জোর প্রয়োগ অথবা বলপ্রয়োগের হুমকি বা অন্য কোনোভাবে জাতিসংঘ সনদে উপস্থাপিত আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা গুলোর ভঙ্গকরণ;

খ ) যে কোনো ধরণের সশস্ত্র মহড়া অথবা অনুশীলন;

গ) উপকূলীয় দেশের প্রতিরক্ষা অথবা নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো তথ্য সরবরাহ করার জন্য পরিচালিত কোনো কাজ;

ঘ) উপকূলীয় দেশের প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তার লক্ষ্যে ক্ষতিকর কোনো প্রচারণামূলক কাজ; ড) জাহাজ থেকে কোনো বিমান উড়ে যাওয়া বা তাতে কোনো বিমান অবতরণ বা বহন;

চ) জাহাজ থেকে কোনো সামরিক যন্ত্র উৎপেক্ষণ বা তাতে কোনো সামরিক যন্ত্র অবতরণ কিংবা বহন;

ছ) উপকূলীয় দেশের শুল্ক, বহিরাগমন কিংবা স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়ম-কানুনের পরিপন্থী কোড়াকম বস্তু, মুদ্রা অথবা ব্যক্তি বোঝাই বা খালাস করা;

জ) অত্র কনভেনশনের পরিপন্থী ইচ্ছাকৃত ও মারাত্মক ধরণের যে কোনে দূষণের কাজ;

ঝ) যে কোনো ধরণের মৎস্য শিকার করার কাজ;

ঞ) গবেষণা বা জরিপ কার্য পরিচালন;

ট) উপকূলীয় দেশের যোগযোগ অথবা অন্যান্য সুবিধাগুলো বা স্থাপনা ব্যবস্থার বেলায় প্রতিবন্ধকতা তৈরী করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত কোনো কর্ম;

ঠ) অতিক্রমণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন যে কোন কাজ।

অনুচ্ছেদ-২০: ডুবোজাহাজ ও অন্যান্য ডুবোযান [Submarines and other underwater vehicles]

সাবমেরিন এবং অন্যান্য ডুবোযান অবশ্যই জলের উপরিভাগে চলাচল করবে এবং তাদের পতাকা দেখাতে হবে।

অনুচ্ছেদ-২১: নির্দোষ অতিক্রমের সহিত সম্পর্কিত উপকূলীয় রাষ্ট্রের আইন ও বিধি-বিধান [Laws and regulations of the coastal State relating to innocent passage]

(১) উপকূলীয় দেশ, অত্র কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, তার আঞ্চলিক সমুদ্রে নির্দোষ অতিক্রমণ সম্পর্কে, নিম্নে উপস্থাপিত যে কোন বিষয়ে আইন, নিয়ম এবং বিধান প্রণয়ন করতে পারবে।

ক) নৌযান চলাচলের নিরাপত্তা এবং সমুদ্রে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ;

খ) নৌযান চলাচলের সহায়তাকারী বিষয়াদি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বা স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষন;

গ) যোগাযোগ তার এবং পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষন;

ঘ) সমুদ্রের প্রাণিজসম্পদ সংরক্ষণ;

ঙ) উপকূলীয় দেশের মৎস্য শিকার বিষয়ক আইনকানুন লঙ্ঘন রোধ;

চ) উপকূলীয় দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা;

ছ) সমুদ্র বিষয়ক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জলভাগ বিষয়ক জরিপ;

জ) উপকূলীয় দেশের শুল্ক, রাজস্ব বহিরাগমন বা স্বাস্থ্য বিষয়ক আইনকানুন ভঙ্গ করাকে স্থগিত করা।

২) উপকূলীয় দেশ দ্বারা প্রণীত উক্তরূপ আইন এবং নিয়ম-কানুন, সাধারণভাবে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নিয়ম ও মান কার্যকর করার ক্ষেত্র ছাড়া, বিদেশী জাহাজের নকশা, নির্মাণ, লোকনিয়োগ বা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে গৃহীত হবে না;

৩) উপকূলীয় দেশ উক্তরূপ আইন ও নিয়ম-কানুন উপযুক্তভাবে প্রচার করবে;

৪) আঞ্চলিক সমুদ্রের মধ্য দিয়া নির্দোষ অতিক্রমণের অধিকার প্রয়োগকারী বিদেশী জাহাজগুলো উক্তরূপ আইন-কানুন ও সমুদ্র পথ সংঘর্ষ রোধ সম্পর্কিত স্বাভাবিকভাবে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নিয়মাদি মেনে চলবে।

অনুচ্ছেদ-২২: আঞ্চলিক সমুদ্রে সমুদ্রপথ ও ট্রাফিক পৃথকীকরণ পরিকল্পনা [Sea lanes and traffic separation schemes in the territorial sea]

১) উপকূলীয় দেশ, নৌচালনের নিরাপত্তার দরকারে, তার আঞ্চলিক সমুদ্রের মধ্য দিয়া নির্দোষ অতিক্রমণের অধিকার প্রয়োগকারী বিদেশী জাহাজকে, জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সমুদ্রপথ বা ট্রাফিক পৃথকীকরণ পরিকল্পনা অনুসরণের জন্য হুকুম দিতে পারবে।

২) বিশেষ করে, তৈলবাহী জাহাজ, পরমানু শক্তিচালিত জাহাজ ও পরমাণু বা সহজাতভাবে বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর কোনো বস্তু বা পদার্থ বহনকারী জাহাজকে উক্তরূপ নির্ধারিত সমুদ্রপথের চৌহদ্দিতে থাকার হুকুম দেওয়া যাবে।

৩) অত্র অনুচ্ছেদের অধীনে সমুদ্র পথ নির্ধারণ ও ট্রাফিক পৃথকীকরণ পরিকল্পনা গ্রহন করার ক্ষেত্রে, উপকূলীয় দেশ নিম্নে উপস্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনা করবে–

ক) কর্তৃত্বসম্পন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সুপারিশমালা।

খ) প্রথাগতভাবে আন্তর্জাতিক নৌচলাচলের বেলায় ব্যবহৃত হয় এমন জলপথ;

গ) সংশ্লিষ্ট জাহাজ এবং জলপথের বিশেষ বৈশিষ্ট্যাবলী;

ঘ) জাহাজ গমনাগমনের ঘনত্ব।

৪) উপকূলীয় দেশ উক্তরূপ সমুদ্রপথ ও ট্রাফিক পৃথকীকরণ পরিকল্পনা মানচিত্রের দ্বারা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করবে ও সেগুলো যথপোযুক্তভাবে প্রচার করবে।

অনুচ্ছেদ-২৩: বিদেশী পরমাণু চালিত জাহাজ এবং পরমাণু বা সহজাতভাবে বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর বস্তু বহনকারী জাহাজসমূহ [Foreign nuclear-powered ships and ships carrying nuclear or other inherently dangerous or noxious substances]

বিদেশী কোনো পরমাণুবিক জাহাজ এবং পরমাণু বা সহজাতভাবে বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর বস্তু বহনকারী জাহাজ, আঞ্চলিক সমুদ্রের মধ্য দিয়া নির্দোষ অতিক্রমণের সময়, সংশ্লিষ্ট দলিলপত্রাদি সাথে রাখবে এবং উক্তরূপ জাহাজের জন্য আন্তর্জাতিক সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত বিশেষ সতর্কতাসম্পন্ন বিবিধ-ব্যবস্থা পালন করবে।

অনুচ্ছেদ-২৪: উপকূলীয় দেশসমূহের দায়িত্বসমূহ [Duties of the coastal State]

১) উপকূলীয় দেশে, অত্র কনভেনশনের অনুসরণ ছাড়া, আঞ্চলিক সমুদ্রে বিদেশী জাহাজের নির্দোষ অতিক্রমণে বাধা দান করবে না। বিশেষ করে, উপকূলীয় দেশ অত্র কনভেনশন বা অত্র কনভেনশনের অধীনে প্রণীত কোনো আইন-কানুন প্রয়োগ করতে গিয়ে নিম্নলিখিত কোনো কিছুই করবে না-

ক) নির্দোষ অতিক্রমণের অধিকার কার্যত অস্বীকার বা নষ্ট করে এমন কোনো হুকুম আরোপ; অথবা

খ) কোনো দেশের জাহাজ বা কোনো দেশের পক্ষ থেকে মালামাল বহনকারী জাহাজের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অথবা বাস্তব ভেদাভেদ আরোপ।

২) উপকূলীয় দেশ তার আঞ্চলিক সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের পক্ষে কোনো বিপদ সম্পর্কে জেনে থাকলে সে সম্পর্কে উপযুক্ত প্রচার কাজ চালাবে।

অনুচ্ছেদ-২৫: উপকূলীয় দেশসমূহের নিরাপত্তার অধিকার [Rights of protection of the coastal State]

১) উপকূলীয় দেশ তার আঞ্চলিক সমুদ্রে, নির্দোষ নয় এমন অতিক্রমণ বন্ধ করার জন্য দরকারী পদক্ষেপ হাতে নিতে পারবে।

২) অভ্যন্তরীণ জলরাশির দিকে বা অভ্যন্তরীণ জলরাশির বাহিরে অবস্থিত বন্দরের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের জন্য অগ্রসরমান কোনো জাহাজের মাধ্যমে উক্ত জলরাশি বা বন্দরে প্রবেশের শর্তাদি ভঙ্গ করা রোধ করার জন্য দরকারী ব্যবস্থা হাতে নেয়ার অধিকারও উপকূলীয় দেশের থাকবে।

৩) উপকূলীয় দেশ বিদেশী জাহাজসমূহের মধ্যে আনুষ্ঠানিক অথবা বাস্তব কোনো ভেদাভেদ না করে, তার আঞ্চলিক সমুদ্রের কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বিদেশী জাহাজের নির্দোষ অতিক্রমণ সল্প সময়ের জন্য বন্ধ করতে পারবে, যদি সেই দেশের নিরাপত্তা রক্ষা বা অস্ত্র মহড়ার লক্ষ্যে তা আবশ্যক হয়। উক্তরূপ বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে যথার্থ প্রচারণার পরই শুধু তা বলবৎ হবে।

অনুচ্ছেদ-২৬: বিদেশী জাহাজের উপরে যে মাসুল আরোপ করা যাবে না [Charges which may be levied upon foreign ships]

১) শুধুমাত্র আঞ্চলিক সমুদ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রমণের জন্য কোনো বিদেশী জাহাজের উপরে কোন মাসুল আরোপ করা যাবে না।

২) আঞ্চলিক সমদ্রের মধ্য দিয়া অতিক্রমণকারী কোনো জাহাজকে নির্দিষ্ট কোনো সেবা দান করা হলে তার মূলস্বরূপ সেই জাহাজের উপর মাসুল আরোপ করা যেতে পারে। তবে কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই উক্তরূপ মাসুল আরোপ করতে হবে।