সমানাধিকারবাদ


সাম্য ও সমানাধিকারের ধারণা যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত এবং প্রভাবিত করেছে। আবার এই ধারণা নিয়ে বিতর্কও প্রথম থেকেই চলে আসছে। বিতর্কের সূত্র হল এই যে একদল রাষ্ট্রদার্শনিক সাম্যের ধারণাকে একটি স্বতন্ত্র ধারণা হিসাবে গ্রহণ করেছেন, যেখানে অন্যদল একে অন্য বিষয়ের উপর নির্ভরশীল বলে বিবেচনা করেছেন। যারা সাম্যকে স্বাধীন বা স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবে মনে করেছেন তাদের মতে সাম্যের ধারণা অন্য কোন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল নয়, ইহা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর যারা সাম্যকে একটি আনুপাতিক বিষয় হিসাবে গণ্য করেছেন তাদের মতে সময়, সামাজিক পরিস্থিতি, ব্যক্তিগত গুণাবলী ও যোগ্যতা প্রভৃতির উপর সাম্য নির্ভরশীল।


সাম্য অর্থাৎ সমতা: রাষ্ট্রদার্শনিক ল্যাস্কির মতে সাম্যের অর্থ হল বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি। সমাজে বিশেষ সুযোগ-সুবিধার উপস্থিতি সাম্যের আদর্শের বিরোধী। আইন ও সাংবিধানিক অর্থে সাম্য বলতে বোঝায় আইনের চোখে সমতা অর্থাৎ মর্যাদা ও অবস্থা নির্বিশেষে সবাই রাষ্ট্রীয় আইনের চোখে সমান ও রাষ্ট্রীয় আইন সকলকে সমানভাবে রক্ষা করবে। সাম্য ও সমানাধিকারের ধারণা যুগে যুগে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করলেও মানব সমাজে কখনই পুরোপুরি সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি বরং একথা দ্বিধাহীনভাবে বলা যায় যে মানবসমাজ সাম্যের পরিবর্তে অসাম্যকেই অধিক প্রাধান্য দিয়েছে এবং এই অসাম্যকে অতিক্রম করার জন্য বিপ্লব হয়েছে (ফরাসী ও বলশেভিক বিপ্লব), নতুন নতুন তত্ত্বের জন্ম হয়েছে (মার্কসবাদী তত্ত্ব, রলসীয় ন্যায়তত্ত্ব প্রভৃতি)।


অসাম্য ও পৃথক আচরণের তত্ত্ব

গ্রীক দার্শনিক প্লেটো মনে করতেন অসাম্য একটি স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক বিষয়। তাঁর মতে প্রকৃতি মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করে না তাই সমাজে অসাম্য একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন সমাজ বা রাষ্ট্র যদি কৃত্রিমভাবে সাম্য সৃষ্টি করতে চায় তাহলে তা প্রকৃতিবিরুদ্ধ বিষয় হবে। তিনি তাঁর ন্যায় তত্ত্বে এক স্তরবিন্যস্ত সমাজব্যবস্থার কথা বলেছিলেন যেখানে সমাজের উচ্চস্তরে অবস্থিত শ্রেণী বা ব্যক্তিবর্গ (দার্শনিক ও যোদ্ধা শ্রেণী) অন্য শ্রেণীর (ক্রীতদাস যারাই সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ) তুলনায় বেশী অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে বা ভোগ করবে। তাঁর ‘আদর্শ’ রাষ্ট্রে প্লেটো এক পার্থক্যমূলক আচরণ বা ব্যবস্থার (differential treatment) সুপারিশ করেন যেখানে উচ্চ শ্রেণীতে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গ জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে, শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি বা অধিক সুযোগসুবিধা লাভ করবে নিম্ন শ্রেণী বা বর্গে অবস্থিত ব্যক্তিদের চেয়ে। তাঁর মতে উচ্চশ্রেণীতে অবস্থিত ব্যক্তিরা যেহেতু অধিক গুণসম্পন্ন এবং সমাজ বা রাষ্ট্রের পক্ষে অধিক প্রয়োজনীয় তাই রাষ্ট্র তাদের জীবনধারণের ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। এই জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপাদান/শিক্ষা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ প্লেটো সমাজে অসাম্যকে স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক বলে মনে করতেন এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য পার্থক্যমূলক আচরণ বা ব্যবস্থার কথা বলেছেন।


গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চাইতে অভিজাততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন। তাঁর মতে সমাজে একটি স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায় তা হল সমাজে প্রতিটি শ্রেণীর মানুষ সামাজিক ব্যবস্থার উচ্চস্তরে আরোহণ করতে চায়। তাঁর Politics গ্রন্থে তিনি মন্তব্য করেছেন প্রতিটি ব্যক্তি তার উপরে অবস্থিত ব্যক্তির সমান হতে চায় কিন্তু কেউই তার নীচে অবস্থিত ব্যক্তির সমান হতে চায় না। অ্যারিস্টটল সাম্যকে আনুপাতিক বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন যখন তিনি বলেছেন সমান অবস্থায় অবস্থিত ব্যক্তিদের সমান হিসাবে বিবেচনা করা ও অসমানদের অসমান হিসাবে বিবেচনা করাই হল ন্যায়। তাঁর আরও মত হল সাম্য যেখানে গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সেখানে অভিজাততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হল অসাম্য। সনাতন উদারনীতিবাদীরা সাধারণভাবে সাম্য ও সমানাধিকারের কথা বললেও (যেমন হবস্, লক) পুঁজিবাদের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে ধনবৈষম্য বাড়তে লাগল ও সাম্য বিনষ্ট হতে শুরু করল। ধনতন্ত্রের এই প্রসারের যুগে অনেক তাত্ত্বিক অসাম্যের জয়গান করতে শুরু করলেন। যেমন জেফারসন-এর মতে আদর্শ সমাজে মানুষের মধ্যে অসাম্য ক্ষতিকারক নয়। তিনি প্রজ্ঞা ও গুণাবলীর দিক থেকে মানুষের মধ্যে অসাম্যকে সমাজের পক্ষে ইতিবাচক বা শুভ বলে মনে করেছিলেন। তাঁর মতে অভিজাত ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের চেয়ে মানবিক গুণাবলী ও প্রজ্ঞার দিক থেকে শ্রেষ্ঠ। আবার বার্ণাড ম্যান্ডেভিল, হিউম, কান্ট অসাম্যকে কাম্য বলে মনে করেছেন এই অর্থে যে অসাম্য প্রতিভার স্ফুরণ ঘটিয়ে, নান্দনিকতার বিকাশ ঘটিয়ে সমাজে প্রগতি নিয়ে আসে। রুশো অসাম্যের তত্ত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি সমাজে দুই প্রকারের অসাম্যকে চিহ্নিত করেছেন— 

  • (ক) স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অসাম্য: যে অসাম্য বর্তমান যুবক ও বৃদ্ধ, সবল-দুর্বল ও জ্ঞানী ও মূর্খের মধ্যে। এই অসাম্যের মূল উৎস প্রকৃতি। 

  • (খ) সামাজিক অসাম্য: রুশোর মতে সামাজিক অসাম্য হল সেই অসাম্য যার উৎপত্তি হয় যখন সম্প্রদায় বা সমষ্টির প্রতি বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে সম্মান বা পুরস্কার দেওয়া হয় তার থেকে। 

তিনি এই দুই প্রকারের অসাম্যকে মানতে রাজি থাকলেও অন্য সামাজিক অসাম্য (যেমন ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অসাম্য)-কে মানতে রাজি ছিলেন না কারণ এই অসাম্যগুলি মনুষ্যনির্মিত এবং এর মূল নিহিত আছে মানুষের লোভ, শঠতা প্রভৃতি প্রবৃত্তির মধ্যে।


অসাম্যের তত্ত্বের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হল প্রবর তত্ত্ব (Elite Theory)। মস্কা, মিচেল, প্যারোটো ও সি. রাইট্ মিলস্ এই তত্ত্বের প্রবক্তা। এই তত্ত্বের মূলকথা হল সমাজে সব মানুষ সমান নয়। বুদ্ধিবৃত্তি, উদ্যম, মানসিকতা, নেতৃত্বগুণ প্রভৃতির দিক থেকে মানুষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। ফলে অসাম্য সমাজের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এদের মতে সমাজে একদল ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মানুষ (প্রবর) অধিক গুণসম্পন্ন, তাই এরা সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেবে এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ গুণগতভাবে তাদের থেকে নিকৃষ্ট হবার জন্য এই এলিট বা প্রবরদের নেতৃত্ব মেনে নেবে, এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। এরা গণতন্ত্রকে একটা অর্থহীন ধারণা বলে মনে করেন কারণ সব গণতন্ত্রেই আসলে একটা প্রবর গোষ্ঠীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটাকেই গণতন্ত্র বলে চালানো হয়।


সাম্প্রতিককালে জন রলসের ন্যায়তত্ত্বের বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় নয়া উদারনীতিবাদের (neo-liberalism) জন্ম হয়েছে। এই নয়া উদারনীতিবাদী তত্ত্ব অসাম্যের তত্ত্বের সর্বাপেক্ষা আধুনিক সংস্করণ। রবার্ট নজিক, হায়েক প্রমুখ এই তত্ত্বের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা। নজিক রলসের এই যুক্তিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন যেখানে রলস্ বলেছেন সমাজে ধনী ব্যক্তিরা গরিব ও প্রান্তিক মানুষের প্রগতির স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করবে। নজিকের বক্তব্য হল যারা গরীব বা প্রান্তিক তারা তাদের অবস্থার জন্য নিজেরাই দায়ী। এই মানুষরা তাদের বর্তমান নিম্নস্তরের অবস্থান স্বাভাবিক বলেই মনে করে ও মেনে নেয় এবং তারা স্বেচ্ছায় উচ্চপদস্থ মানুষদের আদেশ-নির্দেশ মেনে নেয় কারণ তারা জানে উচ্চপদস্থ বা স্তরের মানুষরা তাদের চেয়ে অধিক গুণসম্পন্ন। নজিকের আরও বক্তব্য হল স্বেচ্ছাকৃত সহযোগিতার নামে সম্পন্নদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে যারা অধিক সুবিধাপ্রাপ্ত (গরিবরা) তারা আরও সুবিধা পাবে যা সমাজে অলসতা ও অকর্মণ্যতাকে আরও বৃদ্ধি করবে। হায়েকও এই প্রশ্নে একই মতামত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে মুক্ত সমাজে অসাম্য কাম্য কারণ এই অসাম্যের ফলে যে ব্যক্তিগত সম্পত্তির সৃষ্টি হয় তার দ্বারা বিজ্ঞান, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবন হয় যার সুফল সমাজে সকলেই (গরিবরা সমেত) ভোগ করে। তাই তিনি অসাম্যকে স্বাধীনতার ধারণার বিরোধী বলে মনে করেন নি।


আইনগত বা আনুষ্ঠানিক সাম্য

আইনগত বা আনুষ্ঠানিক সাম্যের ধারণা সাম্য সম্পর্কে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এই সাম্যের ধারণা এই মৌলিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যে সম অবস্থায় অবস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমান আচরণ করা হবে। আমরা এ প্রসঙ্গে অ্যারিস্টটলের মন্তব্য স্মরণ করতে পারি- সমানদের সমানভাবে দেখতে হবে আর অসমানদের অসমানভাবে। তার মতে সমানদের যদি অসমানভাবে আর অসমানদের সমানভাবে দেখা বা বিবেচনা করা হয় তাহলে অবিচারের সৃষ্টি হয়। আইনগত সাম্য একটি মূলত উদারনৈতিক ধারণা যার মূল কথা হল ‘আইনের চোখে সমতা’। লুকাস (J. R. Lucas)-এর মতে আইনগত সাম্যের ধারণা এই সর্বজনীন নীতিতে বিশ্বাসী যে দুটি সমপর্যায়ের মানুষকে একইরকমভাবে দেখতে হবে বা বিচার করতে হবে যদি না তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে (J. R. Lucus Against Equality, 1965) — এই সর্বজনীনতার নীতি কার্যকর হয় রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে যা সমস্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের উপর সমানভাবে কার্যকরী হয়। তিনি সর্বজনীন আইনের স্বপক্ষে তিনটি যুক্তি দিয়েছেন— 


(ক) রাষ্ট্রে বহু মানুষ বসবাস করে এবং প্রতিটি মানুষ আলাদা। রাষ্ট্র প্রতিটি আলাদা মানুষের জন্য আলাদা আইন তৈরী করতে পারে না তাই রাষ্ট্র এমন আইন তৈরী করে যা সকলের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য হবে (সর্বজনীন)।


(খ) আইন ন্যায় বা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। রাষ্ট্রীয় আইনের মূলকথা হওয়া উচিৎ সকলের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। 


(গ) আইন শাসকের স্বৈরাচার থেকে ব্যক্তি নাগরিককে রক্ষা করে। এর ফলে শাসক অত্যাচারী বা স্বৈরাচারী হতে পারে না। লুইস পোজমান (Louis Pojman, Theories of Equality A critical Analysis, 1995) আইনগত সাম্যের পাঁচটি ছাঁচ বা ধরনের উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল:

  • (i) অ্যারিস্টটলের আইনগত সাম্যের ধারণা,

  • (ii) সমস্বার্থমূলক সাম্যের ধারণা (রলস্),

  • (iii) অনুমানমূলক সাম্যের ধারণা (যেখানে ধরে নেওয়া হয় অসাম্যের সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলে সবাইকে সমানভাবে দেখা হবে।),

  • (iv) আইনগত সাম্যের ধারণা এবং 

  • (v) নীতিমূলক সাম্যের ধারণা।


আইনগত সাম্যের ছাঁচ বা ধরনগুলি আলোচনা করার পর পোজমান সাম্যের ধারণার মূল্যায়ন করেছেন। যেখানে তিনি এই সাম্যের ধারণাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। তার বক্তব্য হল অ্যারিস্টটল যিনি দাসপ্রথাতে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি এই সাম্যের ধারণার একজন প্রধান প্রবক্তা। এর থেকেই বোঝা যায় এই সাম্যের ধারণা কতটা অসার। তিনি এই সাম্যের ধারণাকে ছদ্ম-সাম্যের ধারণা বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এই সাম্য কেবলমাত্র আইন ও কাগজে-কলমে বজায় থাকে, বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। ব্যাখ্যা করে বলা যায় এই সাম্যের ধারণা বৈষম্যবিহীনতার (non-discrimination) কথা বলে কিন্তু শুধু বৈষম্যের অবসান সাম্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। যেমন, একজন মালিক কোনরকম বৈষম্য ছাড়াই সব শ্রমিককে একইভাবে শোষণ করতে পারেন, পুরুষতন্ত্র নারীদের দমিয়ে রাখতে পারেন—এগুলি বৈষম্যবিহীনতার মাপকাঠিতে পাশ করলেও এর দ্বারা কখনই সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না বা হতে পারে না। পোজমানের মতে আইনগত সাম্যের এই অসারতার ফলেই বাস্তব বা প্রকৃত (substantive) সাম্যের ধারণা বর্তমানে প্রাধান্য লাভ করেছে। এই তত্ত্ব সকলের সম অধিকারের নীতিতে বিশ্বাসী। এখানে সাম্য প্রধানত ন্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সকলের প্রতি সম আচরণ ও সকলের সম অধিকার – এই দুটি নীতির উপর প্রকৃত সাম্যের ধারণা প্রতিষ্ঠিত। সকলকে সমান বলে ভাবতে না পারলে কখনই পরিপূর্ণ সাম্য বা ন্যায় প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। তাই আমরা মূল্যায়নে বলতে পারি আইনগত বা আনুষ্ঠানিক সাম্যের ধারণা বড়জোর সাম্যের কাছে আমাদের পৌঁছে দিতে পারে, কিন্তু কখনই প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না।


সুযোগের সাম্য

সুযোগের সাম্য বা সমতা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনেক আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হয়েছে বা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সমাজে সুযোগের সমতা নিয়ে রাষ্ট্রদার্শনিকদের মধ্যে তেমন কোন মতপার্থক্য নেই, সবাই এ বিষয়ে মোটামুটি একমত হয়েছেন যে, প্রতিটি সমাজে সুযোগের সমতা থাকা দরকার এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক লক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সুযোগের সমতা বলতে কি বোঝায়? এর সামাজিক ও নৈতিক তাৎপর্য কি? এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্য বর্তমান। জন সাচার তার ‘Equality of Opportunity’ নামক প্রবন্ধে সুযোগের সমতার দুটি দিকের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

  • (ক) সুযোগের সমতার মূলকথা হল প্রতিটি ব্যক্তির সমান সুযোগ ও অধিকার থাকবে নিজস্ব প্রতিভা ও গুণাবলী বিকশিত করার। রাষ্ট্র এমন এক পরিবেশ নিশ্চিত করবে যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি সমান ও পক্ষপাতহীন সুযোগ পাবে তার অন্তর্নিহিত গুণাবলী বিকশিত করার।

  • (খ) সমান কাজের সমান সমান পারিশ্রমিক / পুরস্কার প্রদান করা হবে।


সাচার সুযোগের সমতার প্রথম নীতিটিকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করেছেন যেখানে বলা হয়েছে সুযোগ (সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক) সকল ব্যক্তির কাছে সমানভাবে উন্মুক্ত থাকা দরকার – অর্থাৎ কেউ বেশী বা কম পারে না। কিন্তু দ্বিতীয় নীতিটিকে তিনি সমর্থন করেন নি। কারণ তাঁর মতে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় যেহেতু ব্যাপক অসাম্য বর্তমান তাই এখানে সমকাজের জন্য সম-পুরস্কারের নীতি কখনই সঠিকভাবে কার্যকরী হয় না। আবার ক্যাম্পবেল (T. D. Campbell) সুযোগের সমতাকে একটি কাম্য সামাজিক লক্ষ্য মনে করলেও বিশ্বাস করেন না যে সুযোগের সমতা থাকলেই তা সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহৃত হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির যোগ্যতা, তার মানসিকতা, সামাজিক অবস্থান প্রভৃতি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ব্যাখ্যা করে বলা যায় লেখাপড়া বা উচ্চশিক্ষার সুযোগ তত্ত্বগতভাবে ভারতের প্রতিটি ব্যক্তির কাছে সমানভাবে উন্মুক্ত কিন্তু সবাই কি সে সুযোগও সমান ব্যবহার করতে পারে? এখানে ব্যক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা, তার সামাজিক অবস্থান এগুলি বড় বা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। লয়েড টমাস সুযোগের সমতার তিনটি ছাঁচ বা প্রতিরূপের কথা বলেছেন— এগুলি হল 

  • (ক) আদর্শ সুযোগের সমতা 

  • (খ) প্রতিযোগিতামূলক সুযোগের সমতা এবং 

  • (গ) প্রতিযোগিতাবিহীন সুযোগের সমতা।


(ক) আদর্শ সুযোগের সমতা একটি কাল্পনিক বা Utopian ধারণা। এই রকম সুযোগের সমতা একমাত্র সেখানেই বা সেই সমাজেই থাকা সম্ভব যেখানে সম্পদের প্রাচুর্য আছে, যেখানে কোন অভাববোধ নেই। এই রকম সমাজে প্রতিটি ব্যক্তি তার কাঙ্খিত বস্তুগত বা মানসিক উন্নতি ঘটাতে পারে। এই ধরনের সমাজে ব্যক্তির সামনে অসংখ্য সুযোগ বা সম্ভাবনা থাকে এবং ব্যক্তি সহজেই এগুলি ব্যবহার বা অর্জন করতে পারে। তবে বাস্তবে পৃথিবীতে এমন এক আদর্শ সমাজ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।


(খ) প্রতিযোগিতামূলক সুযোগের সমতা রাষ্ট্রদর্শনে একটি অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। এর সমর্থকরা যেমন তীব্রভাবে এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন, ঠিক একইভাবে এর বিরোধীরা একে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। যারা প্রতিযোগিতামূলক সাম্যের ধারণায় বিশ্বাস করেন তারা মনে করেন এই ব্যবস্থা মুক্ত সমাজের প্রতীক। আর যারা এই ধারণার বিরোধী তাদের মতে প্রতিযোগিতামূলক সাম্যের ধারণা সমাজে অসাম্যকে ডেকে আনে, কারণ প্রতিযোগিতামূলক সাম্যের ধারণা সুযোগের সমতার কথা বললেও এর ফলে ফলাফলের সমতা (equality of outcome) নিশ্চিত হয় না। সামাজিক বা পারিবারিক অবস্থান, ব্যক্তির দক্ষতা, প্রতিভা প্রভৃতির নিরিখে ফলাফল গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়।


প্রতিযোগিতামূলক সাম্যের ধারণা যোগ্যতা ও প্রাপ্যতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। এখানে মনে করা হয় একজন ব্যক্তি কোন্ পদ (position) অধিকার করবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে তার নিজ যোগ্যতার উপর। এখানে অন্য কোন বিষয় বিচার্য হবে না। একজন ব্যক্তি তাই পারে যা তার প্রাপ্য— এটাই হল এই মতবাদের মূলকথা। কিন্তু এর সমালোচকরা বলেন সমতা শুধুমাত্র একটি আইনগত বিষয় নয়। এটি আইনের দিক থেকে সমরেখা থেকে দৌড় শুরু করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আইনের বাইরে বৃহত্তর সামাজিক জীবনেও সমতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন হল একটি সমান রেখায়/সমতলে সকলকে স্থাপন করা। তা না হলে সমরেখায় দৌড় শুরু করা সত্ত্বেও যারা উঁচুতে অবস্থিত (সামাজিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে) তারা বেশী সুযোগ পাবে ফলে সমপ্রতিযোগিতা হবে না। অধ্যাপক ল্যাস্কি সমতাকে একটি সমতলীকরণ প্রক্রিয়া (a certain levelling process) বলে বর্ণনা করেছেন। তার মতে সমাজে কোন ব্যক্তিকেই এমনভাবে রাখা যাবে না যাতে সে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে, এরকম করা হলে সম প্রতিযোগিতা সুনিশ্চিত হবে না। ব্যক্তির সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান, তার জন্ম প্রভৃতি কোনকিছুই তার হাতে নয়, সুতরাং জন্ম-বর্ণ লিঙ্গের কারণে যারা পিছিয়ে পড়ে তারা কখনই তাদের যোগ্যতা বা প্রতিভার পরিপূর্ণ মূল্য পাবে না।


এইসব সমালোচনার উত্তরে প্রতিযোগিতামূলক সুযোগের সমতার নীতির প্রবক্তারা বলেন যে যোগ্যরা -বেশী সুযোগ পাবে এটাই ন্যায়ের দিক থেকে সঠিক। তাঁরা বলেন যে সব সমাজেই মূল্যবান বস্তুসমূহ অপ্রতুল এবং তা লাভ করতে চাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা অসংখ্য সুতরাং মূল্যবান বস্তু বা সেবাসমূহ লাভ করার জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এই প্রতিযোগিতায় যারা জয়লাভ করবে তারা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণেই জয়লাভ করবে। সুতরাং প্রতিযোগিতায় যারা জয়ী হবে তারা বেশী সুযোগ/আকাঙ্খিত পদ লাভ করবে, এটাই সঠিক ও ন্যায়মূলক। তাঁরা আরও বলেন শুধুমাত্র প্রকৃতিগত দক্ষতাই (natural talents) জয়লাভ সুনিশ্চিত করে না। এর সঙ্গে প্রয়োজন হয় কঠিন শ্রম, ধৈর্য ও অধ্যবসায় ও দৃঢ় মানসিকতার। এইসব একত্রিত হলেই সাফল্য আসে। ফলে এইরূপ সফল ব্যক্তিরা যে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হবেন সেটাই সঠিক এবং এর মধ্যে কোন অন্যায় নেই।


সুযোগের সমতা নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা:

সুযোগের সমতার নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে সমালোচনাগুলি উঠে এসেছে সেগুলিকে আমরা এখন বিবেচনা করতে পারি।


প্রথমত, সামাজিক সাম্যনীতির প্রবক্তাদের মতে সুযোগের সমতার নীতি সামাজিক ন্যায়ের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ব্যাখ্যা করে বলা যায় ভারতীয় সংবিধানে তফসিলি জাতি/উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য যে বিশেষ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে তা সুযোগের সমতার ধারণার বিরোধী। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই নীতির সামাজিক প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। দুর্বলতর শ্রেণীর মানুষদের অবস্থার উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে এই সংরক্ষণের নীতি যে বহুলাংশে কার্যকরী হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। লয়েড টমাস মতপ্রকাশ করেছেন, ইতিবাচক পক্ষপাতিত্ব বা ক্ষতিপূরণের নীতি সুযোগের সমতা নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।


দ্বিতীয়ত, আবার বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন সাচার তার Equality of Opportunity and Beyond নামক গ্রন্থে সুযোগের সমতার নীতিকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে সুযোগের সমতার নীতি একটি চূড়ান্তভাবে রক্ষণশীল নীতি যা প্রতিযোগিতার নামে ধনতান্ত্রিক সমাজের মূল্যবোধগুলি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি মনে করেন সুযোগের সমতা নীতি একটি নিষ্ঠুর নীতি যা গণতন্ত্রের নামে ধনতান্ত্রিক সমাজের মূল্যবোধগুলি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি মনে করেন সুযোগের সমতা নীতি এমন একটি নিষ্ঠুর নীতি যা গণতন্ত্রের নামে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনুসৃত মরণপণ প্রতিযোগিতাকে সমাজে চাপিয়ে দিতে চায়। মুক্ত প্রতিযোগিতা, যোগ্যের জয় প্রভৃতি গালভরা শব্দের আড়ালে একটি অসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত শোষণমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়াই এর মুখ্য উদ্দেশ্য।


তৃতীয়ত, সমালোচকরা আরও মনে করেন সুযোগের সমতার নীতি সমাজে অসাম্য ও বৈষম্যকেই বাড়িয়ে তুলবে। এর ফলে সাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। মসকা, মিচেল, প্যারেটোর দ্বারা প্রচারিত প্রবরবাদ (elitism) হল এই নীতির ফলাফল। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষকে অযোগ্য ও অজ্ঞ বলে মনে করা হয়, তাদের অবদানকে অযৌক্তিকভাবে অস্বীকার করে যোগ্যতার নামে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির শাসন সমষ্টির উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষে বলা যায় সুযোগের সমতার নীতি সামাজিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করে একটি অবাস্তব তত্ত্ব প্রচার করে যার দ্বারা শুধু কতিপয় মানুষেরই কল্যাণ হতে পারে, সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নয়।


প্রতিযোগিতাহীন সুযোগের সমতা : প্রতিযোগিতাবিহীন সুযোগের সমতার ধারণা ন্যায়ের ধারণার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এটি এমন এক আদর্শ সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায় যেখানে কোনরকম প্রতিযোগিতা ছাড়াই মানুষ নিজের জীবনের বিকাশের জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা পাবে। ১৯৭১ সালে জন রলসের ন্যায়তত্ত্ব বইটি প্রকাশের পরবর্তীকালে এই ধারণাটি রাষ্ট্রদর্শনের ক্ষেত্রে প্রাধান্যকারী আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। সাম্প্রতিক ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, জ্যাঁ দ্রেজ প্রমুখ এই ধারণাটিকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছেন। এই মতবাদে মনে করা হয় কিছু দ্রব্য বা সেবা সমস্ত মানুষেরই প্রাপ্য এবং সেটা তাদের পাওয়া উচিত রাষ্ট্রের সদস্য হিসাবে। এঁরা মনে করেন, সামাজিক অবস্থানজনিত পার্থক্য যার শিকার দূর্বলতর শ্রেণীর মানুষরা (যার জন্য তারা দায়ী নন) তা তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বা সেবা পাওয়ার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। এর জন্য কোনরকম প্রতিযোগিতা, বিশেষ যোগ্যতা -ও দক্ষতার কোন প্রয়োজন নেই বলে এঁরা মনে করেন। রলসের Primary Goods বা প্রাথমিক দ্রব্যসমূহের ধারণা এ ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। অমর্ত্য সেন মনে করেন, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পুষ্টিকর খাদ্যলাভের অধিকার হল সেই সমস্ত দ্রব্য বা সেবা যা সকল মানুষের প্রতিযোগিতাহীনভাবে পাওয়া উচিৎ। তার মতে রাষ্ট্র এই সমস্ত দ্রব্য বা সেবা স্বল্পমূল্যে (ভর্তুকি দিয়ে) বা বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এটা রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য বলে তিনি মনে করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় (২০০৪ ও ২০০৯) UPA র শাসনকালে দুর্বলতর শ্রেণীগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যে সমস্ত প্রগতিশীল কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল তার অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক ছিলেন জ্যাঁ দ্রেজ। এই কর্মসূচীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রভৃতি। এই সমস্ত কর্মসূচী প্রতিযোগিতাহীন সুযোগের সমতার বড় উদাহরণ। লয়েড টমাস কাজের সুযোগকে এই ধারণাটির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার মতে রাষ্ট্র যদি সবার কাজের সুযোগ সুনিশ্চিত করতে পারে তাহলে পিছিয়ে পড়া মানুষরা তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। সকল কর্মক্ষম মানুষ কাজের সুযোগ পাবে, এর জন্য কোন প্রতিযোগিতা হবে না। আবার অন্য অনেকের মতে সম্পদের ক্ষেত্রে সকলের সম অধিকার থাকা প্রয়োজন, তা না হলে আর্থিক বৈষম্যের অবসান ঘটবে না। সবশেষে বলা যায় প্রতিযোগিতাবিহীন সুযোগের সমতা সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। এই ধারণা অনুযায়ী সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায় বা সমতা প্রতিষ্ঠা হলেই একটি ন্যায়মূলক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। আমাদের মতে এই বক্তব্য বহুলাংশে সঠিক। ভারতে স্বাধীনতার পর অভূতপূর্ব আর্থিক উন্নতি হয়েছে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু উন্নয়নের ফল (fruits of development) সমাজের সকল অংশের মানুষের কাছে (বিশেষত সমাজের দুর্বলতর অংশে) সমানভাবে বণ্টিত হয় নি। এই কারণে ভারতে -দরিদ্রের মধ্যে পার্থক্য ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে।