প্রশ্নঃ সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।
অথবা, সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্যগুলাে আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ সম্প্রদায় প্রত্যয়টি সমাজবিজ্ঞানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রদায় মানবজীবনে স্থিতিশীলতা, বিচিত্র অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক যােগাযােগ এবং সুযােগ-সুবিধাসহ অত্যাবশ্যকীয় মানসিক তৃপ্তি নিয়ে আসে। তাই সম্প্রদায় সমাজবিজ্ঞানের একটি মৌলিক প্রত্যয়। 

সমাজ ও সম্প্রদায়ের পার্থক্যঃ অনেক সমাজবিজ্ঞানী সমাজ ও সম্প্রদায়কে একই অর্থে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন যে, ব্যাপক অর্থে সমাজকে ব্যবহার করলে তার অর্থ দাঁড়াবে ইচ্ছাকৃত যেকোনাে পারস্পরিক সম্পর্ক। আর সম্প্রদায় বলতে তিনি বুঝিয়েছেন বসবাসের জন্য যেকোনাে স্থান বা অঞ্চলকে। তবুও অনেক সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে এ দু’টো প্রত্যয়ের মধ্যে সাদৃশ্য অপেক্ষা বৈসাদৃশ্যই বেশি পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে এ দু’টো প্রত্যয়কে বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে ধরা হলাে-

সমাজ

সম্প্রদায়

(১) সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে জনসমষ্টির একান্ত প্রয়ােজন। কারণ জনসমষ্টি ব্যতিত সমাজকে কল্পনা করা যায় না।

(১) সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও জনসমষ্টির প্রয়ােজনীয়তা অত্যধিক। সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জনসমষ্টি একটি অন্যতম উপাদান। 

(২) সমাজ হচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্কের জটিল জাল। সমাজের কোনাে নির্দিষ্ট সীমানা নেই। 

(২) অন্যদিকে সম্প্রদায় এমন একটি জনসমষ্টি যার নির্দিষ্ট সীমানা থাকে।

(৩) একটি সমাজে সব ধরনের সদস্য বসবাস করার অধিকার রাখে। 

(৩) কিন্তু একটি সম্প্রদায়ে সবধরনের মানুষ বাস করতে পারে না। কারণ এর প্রথাগত নিয়ম-কানুন থাকে।

(৪) সমাজের পরিধি এবং বিষয়বস্তু ব্যাপক। সমাজে উন্নয়নের প্রচেষ্টা বিদ্যমান । 

(৪) অন্যদিকে সম্প্রদায়ের পরিধি ও বিষয়বস্তু সীমিত। সম্প্রদায়ের নানা নিয়ম-কানুন বিদ্যমান থাকায় উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বিঘ্ন ঘটে।

(৫) একটি সমাজে দুই বা ততােধিক সম্প্রদায় থাকতে পারে। 

(৫) কিন্তু একটি সম্প্রদায়ের মাঝে কোনাে সমাজ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।

 

পরিশেষঃ উপযুক্ত আলােচনার মাধ্যমে আমরা বলতে পারি যে, সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সব দিক দিয়েই ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। কারণ উভয়ের ধ্যান-ধারণা, কর্মপদ্ধতি ও গঠনপ্রণালি ভিন্ন প্রকৃতির। বহুবিধ সংঘ ও গােষ্ঠীর সমন্বয়ে সমাজ এবং সমাজের অভ্যন্তরে একটি সংগঠন হলো সম্প্রদায়।