অথবা, সমাজ ও রাষ্ট্রের পার্থক্য নির্দেশ কর।
ভূমিকাঃ সমাজবদ্ধতা মানুষের সহজাত স্বভাব। মানুষের জন্ম, বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ এবং অবশেষে মৃত্যুও হয় সমাজের মধ্যে। আদিম অবস্থা থেকেই মানুষ কোনাে এক ধরনের সামাজিক কাঠামাের মধ্যে বসবাস করে আসছে। সমাজের বাইরে মানুষের অস্তিত্ব অসম্ভব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল বলেন, “সমাজ ব্যতীত মানুষ নিঃসঙ্গভাবে বাঁচতে পারে না”। তাই সমাজ ব্যতীত ব্যক্তির কথা কল্পনা করা যায় না।
সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্যঃ নিম্নে সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা করা হলাে-
(১) রাষ্ট্রের পূর্বে সমাজ সৃষ্টি হয়েছেঃ পরিবর্তনশীল পৃথিবীর আবর্তনের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, সভ্যতার সূচনালগ্ন তথা আদিমকাল হতেই মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে। অর্থাৎ রাষ্ট্র সৃষ্টির অনেক পূর্বেই সমাজের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। আর সমাজ বিবর্তনের ধারায় একটি বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে।
(২) সমাজের ব্যাপকতাঃ রাষ্ট্র একটি ভৌগােলিক প্রতিষ্ঠান এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তার ব্যাপকতা সীমাবদ্ধ। কিন্তু সমাজের সীমা বিশ্ববিস্তৃত। বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্র হলাে এই সংগঠনসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই কারণে সমাজ রাষ্ট্র অপেক্ষা অনেক ব্যাপক।
(৩) আইন প্রণয়নের দিক থেকেঃ রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে ও আইনের মাধ্যমে বল প্রয়ােগের পন্থা অবলম্বন করে। কিন্তু সমাজ স্বতঃপ্রবৃত্ত সহযােগিতা ও শুভেচ্ছার পথে তার উদ্দেশ্যসাধনে চেষ্টা করে।
(৪) সার্বভৌমত্বের পার্থক্যঃ সার্বভৌম ক্ষমতা একটি চরম ক্ষমতা, যা একটি রাষ্ট্র ভােগ করে থাকে। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়ােজনীয়তা অনুভূত হয় না।
(৫) ভূ-খণ্ডগত পার্থক্যঃ রাষ্ট্রের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড ও একটি সুসংগঠিত সরকার আবশ্যক। পক্ষান্তরে, সমাজ গঠনের জন্য এই উভয় উপাদানের কোনােটিই আবশ্যক হিসেবে বিবেচিত হয় না।
সমাপনীঃ উল্লেখিত পার্থক্যসমূহের প্রেক্ষিতে বলা যায়, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে কিছু মিল থাকলেও ভিন্নতার দিকও সুস্পষ্ট।
Leave a comment