অথবা, সমাজ উন্নয়নে সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব বা প্রয়ােজনীতা আলােচনা কর।
অথবা, সমাজ উন্নয়নে সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব বা প্রয়ােজনীতা কী?
ভূমিকাঃ গবেষণা হল বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে তথ্যানুসন্ধানের একটি কলা বা আর্ট। আর সামাজিক গবেষণা হলাে বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি সামাজিক সংস্করণ মাত্র। সামাজিক গবেষণা নামক বুদ্ধিদীপ্ত প্রক্রিয়াটি শত শত বছরে বিকাশ লাভ করেছে। সামাজিক গবেষণা, তত্ত্ব, বাস্তব সমস্যার সমাধান, উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ণ। ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। এটা একটি সমস্যা নিয়ে শুরু হয়। উপাত্ত বা তথ্য সংগ্রহ করে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে। সামাজিক সমস্যা সমাধানের পন্থা উদ্ভাবন এবং সহজাত অনুসন্ধান প্রবণতাই সামাজিক গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।
সমাজ উন্নয়নে সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব বিশ্লেষণঃ সামাজিক গবেষণা সামাজিক উন্নয়ন ও প্রগতির এক অপরিহার্য বাহন। সভ্যতা ও আধুনিকায়নের বিকাশে সামাজিক গবেষণা প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে অবদান রেখে এসেছে। বাংলাদেশের মতাে একটি উন্নয়নশীল দেশের যে সমস্ত ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা সরাসরি অবদান রেখে জাতিকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারে তা নিম্নে তুলে ধরা হলাে-
(১) অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিতকরণঃ দেশের ব্যবহৃত অথবা অব্যবহৃত বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদ খুঁজে বের করে তা দেশের মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যেতে পারে সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে।
(২) সমাজের বিভিন্ন অংশের ধারণা লাভঃ সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সংঘ, মূল্যবােধ, দল-উপদল ও সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দিক অনুধাবন করার জন্য সামাজিক গবেষণার কোনাে বিকল্প নেই।
(৩) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাঃ প্রয়ােজনীয় তথ্য ও জ্ঞান সরবরাহের মাধ্যমে অধিকতর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সামাজিক গবেষণা সাহায্য করে থাকে।
(8) সঠিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠাঃ ভ্রান্ত এবং অনাবশ্যকীয় ধারণা, তথ্য, জ্ঞান, প্রক্রিয়া পদ্ধতি ও তত্ত্ব দূরীভূত করে কার্যকরি ও সঠিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
(৫) পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণঃ সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণ যেকোনাে দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। তাই সামাজিক গবেষণা আঞ্চলিক ও জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে।
(৬) ভবিষ্যৎ নির্ধারণঃ সামাজিক পরিবর্তন ও বিবর্তনের ধারা বিবেচনায় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যথার্থ উক্তি করা সামাজিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
(৭) বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রবর্তনঃ গবেষণা প্রচলিত সনাতন ধ্যান-ধারণা ও কৌশলের পরিবর্তে আধুনিক তথা বৈজ্ঞানিক কলা-কৌশল প্রবর্তন করে থাকে।
(৮) সমতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রতিষ্ঠাঃ উপেক্ষিত ও অবহেলিত ক্ষেত্রের অসমতা দূর করে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থ-সামাজিক বিকাশে সহায়তা প্রদান করে বৈজ্ঞানিক তথা সামাজিক গবেষণা পদ্ধতি।
(৯) সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণঃ সামাজিক অসুবিধাগ্রস্ত শ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় যথাবিহীত ব্যবস্থা গ্রহণে সচেতন ও উদ্যোগী করে তােলে সামাজিক গবেষণা কার্যক্রম।
(১০) সেবাদান ব্যবস্থার উন্নয়নঃ প্রচলিত জাতীয় সেবাদান ব্যবস্থা এবং কলা-কৌশলগুলাে অধিকতর অর্থবহ ও উপযােগী করে তােলে। যার ফলে মানুষের সেবা নিশ্চিত হয়ে থাকে।
(১১) পরিবর্তিত অবস্থা মােকাবেলায় সহযােগিতা প্রদান করাঃ সামাজিক গবেষণা সামাজিক পরিবর্তনের ধারা ও প্রভাব পরিমাপ করে এবং পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সময়োপযোগী কৌশল উদ্ভাবন করে থাকে।
(১২) সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধান প্রদানঃ সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং অপরাধগত সমস্যাবলি খুঁজে বের করে তার সমাধান প্রক্রিয়া উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে সামাজিক গবেষণা।
(১৩) জনমত গঠনঃ সামাজিক গবেষণা অনুকূল জাতীয় জনমত গঠনের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গণ অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।
(১৪) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেঃ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় অবস্থান, নির্ভরশীলতা ও সহযােগিতার মাত্রা নির্ধারণ করায় সামাজিক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(১৫) সামগ্রিক কল্যাণসাধনঃ জনগণের সামগ্রিক কল্যাণসাধন করাই সামাজিক গবেষণার অন্যতম লক্ষ্য। সমাজের সামগ্রিক দিক পর্যালােচনা করে মানুষের সামগ্রিক কল্যাণসাধনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। কেননা সমাজের মানুষকে নিয়েই সামাজিক বিজ্ঞানের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণা সামাজিক উন্নয়ন ও প্রগতির এক অপরিহার্য বাহন। যেহেতু বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, সেহেতু এর সামগ্রিক উন্নয়নে সামাজিক গবেষণার বিকল্প নেই বললেই চলে। তবে সেই গবেষণা হতে হবে অবশ্যই ত্রুটিমুক্ত। আমাদের দেশে সামাজিক গবেষণায় অনেক সমস্যা থাকলেও এর ব্যাপক সম্ভাবনাও আছে বৈকি। তাই সামাজিক গবেষণার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এ দেশের সমাজের সামগ্রিক কল্যাণসাধন সম্ভব।
Leave a comment