অথবা, সমাজে ব্যক্তির পদমর্যাদা নিরূপণের কৌশলসমূহ বর্ণনা কর।
ভূমিকাঃ মানবজীবনের সাথে জড়িত যেসকল মৌল প্রত্যয় রয়েছে তার মধ্যে পদমর্যাদা অন্যতম। কোনাে সমাজের সদস্যের আয় মর্যাদা, শিক্ষা, প্রতিপত্তি বা ক্ষমতার ভিত্তিতে কতকগুলাে ক্রমোচ্চপদ বা স্তরে ভাগ করা সম্ভব। এসবের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান বা পদের স্তরকে আর্থ-সামাজিক বা Status বলা হয়। মূলত পদমর্যাদা বা Status বলতে সাধারণত আর্থ-সামাজিক পদমর্যাদাকেই বুঝায়।
সমাজে ব্যক্তির পদমর্যাদা নির্ধারণের কৌশলঃ নিম্নে সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা নির্ধারণের কৌশলসমূহ তুলে ধরা হলাে-
(১) শ্রেণিবিন্যাসঃ শ্রেণি বিন্যস্ত সমাজেই মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়। যেখানে সামাজিক অবস্থান অনুসারে সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা নিরূপিত হয়ে থাকে। সুতরাং মানুষের সামাজিক মর্যাদা হলাে তার সামাজিক অবস্থানের স্বীকৃতি। যেখানে ব্যক্তি সমাজ প্রদত্ত একটি পদ গ্রহণ করে এবং তার অবস্থানকে দৃঢ় করে।
(২) বিভিন্ন ভূমিকার প্রেক্ষিতঃ ব্যক্তি মাত্রই কোনাে না কোনাে কাজের সাথে জড়িত। একই ব্যক্তি পিতা, তিনি আকার পুত্র, তিনি আইনজীবী, তিনি ব্যবসায়ী আবার হতে পারে কোনাে প্রতিষ্ঠানের প্রধান। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির মর্যাদা সংশ্লিষ্ট কর্মের সাথে যুক্ত থাকে। তবে সমাজ কোনাে ব্যক্তির পদমর্যাদা দিয়ে থাকে তার গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে।
(৩) সামাজিক মর্যাদার স্বরূপঃ সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা নিধারণে তার যােগ্যতা বা গুণাবলিকে অনেক সময় বিবেচনায় আনা হয় না। বরং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত গুণ, সম্পত্তি, ধর্মের ভিত্তিতে মর্যাদা নির্ধারিত হয়। বর্তমানে সমাজে সেসকল শ্রেণির পদমর্যাদা অনেক বেশি যাদের প্রতিপত্তি, মান মর্যাদা সবার ওপরে।
(৪) পেশাগত অবস্থা ও মর্যাদাঃ কোনাে বিশেষ পদের অধিকারী ব্যক্তি সমাজে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। পদের গুরুত্ব এবং পদের সঙ্গে যুক্ত ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও কার্যাবলির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীর মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। পেশাগত মর্যাদার কারণে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির জীবনযাপন কর্মের পার্থক্য দৃষ্ট হয়।
(৫) সামাজিক মর্যাদার ধারণাঃ সমাজে সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণে গােষ্ঠী বা ব্যক্তির ভূমিকা কাজ করে। দেখা যায় যেকোনাে গােষ্ঠীর বিপক্ষে ব্যক্তির পদ বা ভূমিকা যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক পদমর্যাদা অনেক বেশি। যেমনঃ বাংলাদেশি সমাজে দেখা যায় যে, ঈমাম সমাজের মানুষের কাছে বিশেষ সৃষ্মিত ব্যক্তি।
(৬) আরােপিত পদমর্যাদাঃ আরােপিত মর্যাদা বা Ascribed Status তাকেই বলা হয় যা সামাজিক প্রথা, বিধিনিষেধ, রীতিনীতি, তথা সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি লাভ করে থাকে। এই সকল মর্যাদার ওপর মানুষের কোনােরূপ হাত থাকে না। ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রাচীনকালে এই সকল পদমর্যাদার ব্যাপক মূল্যায়ণ ছিল।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পদমর্যাদা প্রত্যেক মানুষের জন্য সামাজিক স্বীকৃতিস্বরূপ। এই পদমর্যাদার বলেই মানুষ তার স্বীয় সমাজ থেকে সম্মান পেয়ে থাকে। মানুষ দুটি দিক দিয়ে পদমর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে। তবে সমাজ সাধারণত অর্জিত মর্যাদা অর্থাৎ মানবিক গুণাবলি দ্বারা অর্জিত মর্যাদাকেই বেশি মূল্যায়ন করে থাকে। প্রগতিশীল সমাজব্যবস্থা ও আধুনিক মননশীলতার জন্য অর্জিত মর্যাদা প্রত্যেক মানুষের পদমর্যাদার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।
Leave a comment