অথবা, সমাজকাঠামাে কী?
ভূমিকাঃ মানবসমাজের প্রতিটি পর্যায়েই সামাজিক স্তরবিন্যাস বিদ্যমান। এ স্তরবিন্যাস প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টি, মানুষের সৃষ্টি নয়। “Who gets what and why’-এই প্রশ্ন সামনে রেখেই সামাজিক স্তরবিন্যাস সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের ব্যক্তি, গােষ্ঠী বা শ্রেণির মর্যাদা নিরূপণ হয় এ স্তরবিন্যাসের মাধ্যমে। তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস একটি সর্বজনীন ব্যাপার।
সমাজকাঠামাের সংজ্ঞাঃ সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেন্সার জীবতত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম ‘কাঠামাে’ শব্দটি ব্যবহার করেন। সমাজকাঠামাের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতানৈক্যের শেষ নেই। কার্ল ম্যানহেইম সমাজকাঠামােকে ‘কার্মিক গঠন’ বলে অভিহিত করেন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ সমাজবিজ্ঞানী নিডিল সমাজকাঠামাের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, সমাজকাঠামাে হলাে একটি নির্দিষ্ট জনগােষ্ঠীর বিভিন্ন সদস্যের পারস্পরিক সম্পর্কের একটি রূপ, যা তাদের ভূমিকার মধ্যে দিয়ে প্রতিভাত হয়।
সমাজবিজ্ঞানী জিনসবার্গ বলেন, সামাজিক কাঠামাে হচ্ছে কতকগুলাে প্রধান দল বা প্রতিষ্ঠানের জটিল সম্পর্ক যার দ্বারা সমাজ গঠিত হয়।
ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, সমাজকাঠামাে একটি সামগ্রিক রূপ। সমাজকাঠামাে বলতে আমরা বুঝি কতকগুলাে সংগঠনের পারস্পরিক সূত্রের সমন্বয়। যােগসূত্রগুলাে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্ম ও পরিবার দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে।
সমাজবিজ্ঞানী টি বি বটোমাের-এর মতে, “সমাজ কাঠামাে হলাে প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠান ও গােষ্ঠীগুলাের একটি জটিল ব্যবস্থা।”
মার্কস ও এঙ্গেলস-এর মতে, “সমাজকাঠামাে সর্বদাই সমাজস্থ মানুষের জীবন প্রক্রিয়া থেকে উৎসারিত হচ্ছে।”
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক কাঠামাের মধ্যে উপযুক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একটির সাথে অন্যটি ওতপ্রােতভাবে জড়িত। সামাজিক স্তরবিন্যাসের মাধ্যমেই সামাজিক কাঠামাে বােঝা যায়। আবার সমাজ কাঠামাের পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক স্তরবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে।
Leave a comment