আচরণ পরিবর্তনকারী চিকিৎসার মূল ভিত্তি হল প্যাভলভ ওয়াটসন, থর্নডাইক, স্কিনার প্রমুখ আচরণবাদী মনোবিদ এর গবেষণা। শিখনের চারটি বিষয়ের উপর এই চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভরশীল। সেগুলো হল তাড়না (Drive), ইঙ্গিত (clue), প্রতিক্রিয়া (Response) এবং শক্তিদায়ক উদ্দীপক (Reinforcement)।
এই পদ্ধতিতে রোগীর বর্তমান আচরণকে কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হয় যথাক্রমে –
- প্রথমে অবাঞ্ছিত আচরণ নির্দিষ্ট করা হয়।
- এই অবাঞ্ছিত বা অপসঙ্গতি মূলক আচরণ কে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়।
- পরিশেষে সক্রিয় অনুবর্তনের মাধ্যমে সেই আচরণ দূর করা হয়।
➤ মূল বৈশিষ্ট্য :
(১) রােগীর বর্তমানে যা লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে তার উপর গুরুত্ব দেওয়া।
(২) লক্ষণগুলিকে দেখে তার কারণ অনুসন্ধান।
(৩) রােগীর অতীতের উপর গুরুত্ব না দেওয়া।
➤ কৌশলসমূহ :
(A) নিয়মানুযায়ী সংবদনশীলতার বিলুপ্তিকরণ : যেসকল ক্ষেত্রে রােগীর উৎকণ্ঠার কারণ জানা যায় সেক্ষেত্রে সহজে চিকিৎসা সম্ভব। যেমন— ফোবিয়া, অবশেসন ইত্যাদি।। এই চিকিৎসার তিনটি ধাপ রয়েছে সেগুলি হল—
- প্রথম ধাপ: লক্ষণসমূহ কারণগুলোকে বা কারণ উদ্দীপকগুলো কম থেকে বেশি এই ক্রমে সাজানো।
- দ্বিতীয় ধাপ: এই পর্যায়ে রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে উৎকণ্ঠা হীন করা হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর উৎকণ্ঠা কমিয়ে ফেলার জন্য রোগীর মনে প্রেরণা সৃষ্টি, টেপরেকর্ডার পদ্ধতি, সম্মোহন পদ্ধতি ও ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োগ করেন।
- তৃতীয় ধাপ: এই পর্যায়ে উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী উদ্দীপকগুলোর প্রয়োগ ঘটিয়ে তাদের প্রভাব থেকে রোগীকে উৎকণ্ঠা হীন করা হয়।
আইজ্যাক এবং রিচম্যান (Eysenck and Rachman) এই দুই মনস্তত্ত্ববিদ উল্লিখিত পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন যে—
- এটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি।
- কম সময় সাপেক্ষ।
- সাধারণ উৎকণ্ঠা থেকে দুরূহ ব্যাধি সবই সারাতে সক্ষম।
- পরিকল্পিত উপায়ে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা যায়। তবে এই পদ্ধতির কিছু অসুবিধা রয়েছে।
- কিছুক্ষণ এই পদ্ধতি চলতে থাকলে অস্থির হয়ে পড়ে রােগী।
- বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ অনেক সময় সাফল্য নাও আনতে পারে।
- এই পদ্ধতিতে রােগীর নিজেকে উৎকণ্ঠাহীন রাখতে অনুশীলন দরকার।
- এই পদ্ধতিতে সময় কম লাগে।
- পরিকল্পিত রীতিসিদ্ধ ভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
(B) তীব্রভাবে উদ্দীপক প্রয়োগ: আগের পদ্ধতিতে কম উদ্বেগ সৃষ্টিকারী উদ্দীপক থেকে বেশি উদ্বেগ সৃষ্টিকারী উদ্দীপক প্রয়ােগ করা হয়েছিল। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থাৎ বেশি উদ্বেগ সৃষ্টিকারী উদ্দীপকটি কে প্রথম প্রয়োগ করা হয়। বাকি পদ্ধতি আগের মতোই।
(C) বিরক্তি সৃষ্টি করে রোগ নিরাময়: এই পদ্ধতিতে অপসঙ্গতিমূলক আচরণের সময় ওই ব্যক্তির অপছন্দের বস্তু বা বিরক্তি সৃষ্টি করে এমন অবস্থা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে ওই আচরণ করার প্রবণতা কমে। যেমন— ব্যক্তিকে অ্যালকোহল থেকে মুক্ত করতে গেলে অ্যালকোহল সেবনের সময় কর্কশ শব্দ সৃষ্টি করা বা এমন অবস্থার সৃষ্টি করা, যা ব্যক্তির কাছে বিরক্তিকর। এরকম অবস্থা বার বার করা হলে রোগ নিরাময় সম্ভব হয়।
(D) অন্যের দেখে শেখার মাধ্যাম: এখানে ব্যক্তি দেখে যে, সে যে অবস্থায় ভয় পায় অন্যরা ওই একই অবস্থায় ভয় পায় না। এরকম দেখার ফলে ব্যক্তির মধ্যে উৎকণ্ঠা বা ভয় হ্রাস পেতে থাকে।
(E) বিপরীত প্রতিক্রিয়া: এই পদ্ধতিতে উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী উদ্দীপকের পাশাপাশি উৎকণ্ঠা হ্রাস করে এরকম উদ্দীপক প্রয়োগ করা হয়। ফলে উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী উদ্দীপক দুর্বল হয়ে পড়ে।
(F) আকাঙ্ক্ষিত কাজের জন্য পুরস্কার: শিশুদের চিকিৎসায় এই পদ্ধতিটি খুবই কার্যকর। প্রথমে শিশুর কোন কোন জিনিস ভালো লাগে তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়। শিশু অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করলে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু তাকে উপহার দেওয়া হয়। এইভাবে তার প্রিয় বস্তু উপহার দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হয়। আচরণ দূর হয়ে যাওয়ার পর আকাঙ্ক্ষিত বস্তু ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হয়। উল্লেখিত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর সমস্যামূলক আচরণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
Leave a comment