প্রশ্নঃ সমষ্টিবাদ বলতে কি বুঝ?

অথবা, সমষ্টিবাদ কি?

অথবা, সমষ্টিবাদ কাকে বলে?

ভূমিকঃ নীতিবিদ্যা মানব আচরণের ভালত্ব-মন্দত্ব, ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু এই আচরণ সমাজবিহীন মানুষের আচরণ নয়। নৈতিকতার ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে। সমাজবিহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্ব বা বাধ্যবাধকতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কেননা নৈতিকতা সম্পৰ্কীয় সমস্যা সমাজবদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্তির সাথে সমাজের যে সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয় বিভিন্ন মতবাদ পরিলক্ষিত হয়। এই মতবাদগুলো নীতিবিদ্যার আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সমষ্টিবাদ বা সমাজতান্ত্রিক মতবাদঃ স্যার লেজলি স্টিফেনকে এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন যে, ব্যক্তির সাথে সমাজের এক যান্ত্রিক বা ইন্দ্রিয়সম্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। জীবদেহ যেমন কতকগুলো অঙ্গ-প্রতঙ্গের সমষ্টি সমাজও তেমনি ব্যক্তি মানুষের সমষ্টিমাত্র। জীবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে যেমন এক নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায় তেমনি, সমাজের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যেও এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জীবদেহের অঙ্গপ্রতঙ্গগুলো নিজ নিজ কর্ম সম্পাদন করেও যেমন সমগ্রদেহের সঠিক মঙ্গল সাধন করে, তেমনি সমাজে ব্যক্তি সদস্য নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার তাগিদে বিভিন্ন কাজকর্ম সম্পাদন করেও সমাজের সার্বিক মঙ্গল সাধন করতে পারে, মানুষ সমাজের সদস্য হিসেবে জীবন যাপন করে বলেই নিজ স্বার্থ রক্ষার সাথে সাথে জনকল্যাণ সাধনে সক্ষম। সমাজ নির্ভরতা মানুষের এক স্বাভাবিক প্রবণতা মাত্র। বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদী দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কার্ল মার্কসকেও এ মতবাদের সমর্থক বলা যেতে পারে। তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রেণিহীন সমাজ কায়েমের কথা বলেন। তার মতে শ্রেণিহীন সমাজ ব্যবস্থাই হচ্ছে মানুষের পরম নৈতিক আদর্শ।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে সমষ্টিবাদ বা সমাজতান্ত্রিক মতবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যা মনে করে জীবদেহের ন্যায় পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজ সচল থাকে। নীতিবিদ্যার আলোচনার এই মতবাদের গুরুত্ব অপরিসীম।