প্রশ্নঃ সমন্বয় সাধন নীতি কি?

অথবা, লোক প্রশাসনে সমন্বয় সাধন নীতি কাকে বলে? 

সমন্বয় সাধন নীতি (Principle of Co-ordination): যে কোন বৃহৎ যন্ত্রের কার্য পদ্ধতি লক্ষ্য করলে প্রতীয়মান হবে যে, যন্ত্রের প্রতিটি অংশ অপর অংশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক ঠিক কাজ করে যাচ্ছে। যন্ত্রের এক অংশের সাথে অন্য আর একটি অংশের এই যে নির্ভরশীলতা এবং যোগাযোগ তা সমগ্র যন্ত্রটিকে সচল রেখেছে এবং তার ফলে কোন কিছু উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ যন্ত্রের কোন অংশে গোলযোগ দেখা দিলে অথবা যন্ত্রের অংশ বিশেষ বিকল হয়ে পড়লে সমগ্র যন্ত্রে গোলমাল দেখা দেয় কিংবা সমগ্র যন্ত্রটিই বিকল হয়ে পড়ে। আর সাথে সাথে উৎপাদনও থমকে পড়ে। যন্ত্রের এ অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা পরিষ্কার যে, কোন কিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে সমবেত চেষ্টা অপরিহার্য। তাই বলা যায়, সমন্বয় বা সংযোজন হচ্ছে যৌথ প্রচেষ্টার বিশেষ রূপ। প্রশাসনিক সংস্থায় সংযোজনের অর্থ হচ্ছে সংস্থার মধ্যে বিদ্যমান সংঘর্ষের বিপরীত উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করার এবং প্রশাসন থেকে নির্দিষ্ট প্রান্তদেশের উপর চেপে থাকার মনোবৃত্তির বিলুপ্তি। এটি সংস্থায় কার্যরত বহু লোকের মধ্যে সহযোগিতার এবং টিম ওয়ার্ক-এর বিশেষ পদ্ধতি।

সমন্বয় ছাড়া সংগঠনের কথা চিন্তা করা যায় না। সমন্বয়ের অভাব দেখা দিলে যে কোন উদ্দেশ্য পণ্ড হয়ে যেতে বাধ্য। এ কারণে অধ্যাপক মুনী (Mooney) সমন্বয়কে সংস্থার ‘প্রথম মূলনীতি” হিসেবে গণ্য করেছেন এবং অন্যান্য নীতিকে এ নীতির অধীনস্থ রূপে পরিগণিত করেছেন। সংযোজনের মাধ্যমে একটি সংস্থার অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যের প্রকাশ ঘটে। এ অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্য হচ্ছে সমন্বয়ের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়া। সমন্বয় কর্মচারীদের কাজের মধ্যে একতা, সহযোগিতা এবং যোগসূত্র আনয়নের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ লক্ষ্য হাসিল করতে সহায়তা করে।

যখন দুই ব্যক্তি কোন উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত তাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে একত্র করে তখনই সমন্বয় নীতির উদ্ভব ঘটে। যদি প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তি হতে স্বাধীনভাবে কর্ম সম্পন্ন করে তাহলে সে ক্ষেত্রে কোনরূপ সমন্বয় ঘটবে না এবং কর্মের ঐক্য (Unity of Action) প্রতিষ্ঠিত হবে না । কর্মের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই সমন্বয়ের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য। 

জেমস ডি. মুনী (James D. Mooney) তাই যথার্থই বলেছেন যে, “Co-ordination is the orderly arrangement of group effort to provide unity of action in the pursuit of a common purpose.” অর্থাৎ সমন্বয় হচ্ছে কোন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনে কর্মের ঐক্য প্রতিষ্ঠাকল্পে গোষ্ঠী কর্মপ্রচেষ্টার নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা। 

সেকলার হাডসন (Seckler Hudson) সমন্বয় বলতে “কর্মের বিভিন্ন অংশগুলোকে পরস্পর সংযুক্ত করবার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যকেই” মনে করেছেন।

আবার স্প্রাইজেল এবং ডেভিস (Spriegel and Davis) সমন্বয়কে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, “The unifying activity of management that enables the members of the organization team to move resolutely and with confidences toward its objective.” অর্থাৎ সমন্বয় হচ্ছে একপ্রকার ব্যবস্থাপনার ঐক্য সাধন কার্য যা সংগঠনের সদস্যদেরকে সুদৃঢ় মনোবৃত্তি নিয়ে বিশ্বস্ততার সাথে এর উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ করে তোলে।

র‍্যালফ ডেভিস (Ralf Davis)-এর কথায়, “The function of relating activities with respect to time and order of performance is called co-ordination.” অর্থাৎ সময় এবং কর্ম সম্পন্ন করার সাথে সংগঠনের কার্যাবলির সম্পর্কযুক্ত করাকে সমন্বয় সাধন বলে।” 

আবার ব্যবস্থাপনার সুপ্রসিদ্ধ লেখক হেরী ফেয়ল (Henry Fayol) লিখেছেন যে, “To co-ordinate means to unite and co-ordinate all activities.” অর্থাৎ সংগঠনের সমুদয় কার্য একত্রিত এবং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত করার অর্থই সমন্বয় সাধন।