প্রশ্নঃ সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, লোক প্রশাসনে সমন্বয় সাধনের গুরুত্ব কি?
সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা (Necessity for Co-ordination): সমন্বয় সাধন আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রশাসনিক সংগঠনের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে সমন্বয়ের গুরুত্বও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সমন্বয় সাধন স্বয়ং কোন লক্ষ্য নয়, বরং এটা লক্ষ্য সাধনের অন্যতম উপায় মাত্র। যখন কোন বৃহৎ গোষ্ঠী বা সংগঠনের সদস্যদের নিজেদের বিবেচনা অনুসারে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন প্রকার মতামতের উদ্ভব ঘটে। যার ফলে দ্বন্দ্ব বিরোধ অনিবার্যরূপে আবির্ভূত হয়। এ কারণেই দৃঢ় নেতৃত্বের সাহায্যে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ডব্লিউ. এইচ. নিউম্যান (W. H. Newman) -এর মতে, “It is not a separate activity but a condition that should permeate all phases of Administration.” অর্থাৎ সমন্বয় কোন পৃথক কাজ নয়, বরং এমন শর্তবিশেষ যা প্রশাসনের সকল পর্যায়েই পালিত হওয়া উচিত।
যে কোন বৃহদায়তন সংগঠনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এবং রেইলি (Mooney and Railey) এটাকে তাদের সাংগঠনিক বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বলা যায় সংগঠনে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিচে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলোঃ
১। বৈসাদৃশ্যের মধ্যে সংহতিবিধানঃ প্রশাসনিক সংস্থায় কাজ এবং দায়িত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বহু লোক নিযুক্ত থাকে। এ বিভিন্ন ধরনের লোকের কার্যের মধ্যে সংহতি না থাকলে আশানুরূপ ফল লাভ করা যায় না। বিভিন্ন প্রকার কার্যের মধ্যে ঐক্য বিধানের উপর সংগঠনের কর্মদক্ষতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। তা না হলে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই শক্তিশালী সংগঠনের কার্যাবলির মধ্যে সংযোজন অপরিহার্য।
২। বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভারসাম্যঃ একই ধরনের কার্যে নিযুক্ত বিভিন্ন কর্মচারীদের সামর্থ্য একরূপ নয়; কেউ সুশিক্ষিত এবং ব্যক্তিত্বসম্পন, কেউ দুর্বল এবং ভীরু; কেউ কেউ আবার সমুন্নত। কেউ একটি বিষয় সহজে বুঝে উঠতে পারে, কেউ আবার দেরিতে বুঝে। সংযোজন এ অসমতার মধ্যে ভারসাম্য আনয়ন করে কাজের গতি রক্ষা করে।
৩। সামগ্রিক সম্পাদনঃ প্রশাসনিক সংস্থায় ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাকে এমনভাবে গ্রথিত করে যার ফলে সংস্থার মোট সম্পাদন সংযোজনহীন ব্যক্তিগত সম্পাদন অপেক্ষা যথেষ্ট বেশি শক্তিশালী। অর্থাৎ সংযোজন হতে সংস্থা যা লাভ করে তা কেবল সকল কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সাফল্যের যোগফল নয়, বরং যোগফল হতেও আরো কিছু বেশি। সমন্বয় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের খণ্ড অংশের একত্রীকরণের চাইতে সামগ্রিক কার্য সম্পাদন সম্ভব করে।
৪। অপচয় রোধঃ সমন্বয় সংস্থার সময় ও অর্থের অপচয় রোধ করে এবং সংস্থার কাজকে ত্বরান্বিত করে।
৫। অন্যান্য কার্যাবলির চাবিস্বরূপঃ প্রশাসনিক সংস্থার পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ, প্রেষণা, সংগঠন প্রভৃতি কার্যের চাবিকাঠি সংযোজন। এ পরিকল্পনাকে সুষ্ঠু, সংগঠনকে দৃঢ়বদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথ সুগম করে। সংযোজন সংস্থার একটি অপরিহার্য উপাদান।
Leave a comment