গীতি কবিতার যে শাখা একটি বিশেষ রূপকৃতি বা শিল্পরূপের বন্ধনকে স্বীকার করে নিয়েছে ও সেই রূপ কৃতি হিসাবেই খ্যাতি লাভ করেছে তন্মধ্যে তা হল সনেট। গীতি কবিতার উচ্ছ্বাসিত আবেগকে এখন চৌদ্দ পংক্তির কঠোর সীমিত নিগঢ়ে ও অন্যান্য কিছু নিয়মের শৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হয়। সম্ভবত এই বন্ধনের জন্যই জনৈক সমালোচক মন্তব্য করেছিলেন সনেট গীতি কবিতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তবে একথা নিঃসন্দেহে ও তর্কাতীতভাবে সত্য যে সনেটের খ্যাতিমান কবিগণ এই বন্ধনকে সপ্রসন্নচিত্তে স্বীকার করেই সনেটের রূপকল্পে অসাধারণ কিছু কবিতা রচনা করেছেন।

এখন গীতিকবিতা ও সনেটের পার্থক্যগুলি আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমত নির্মাণ রীতির বৈশিষ্টতার কারণে গীতিকবিতার মতো স্বতঃস্ফূর্ততা বা উচ্ছ্বাস সনেটে অনুপস্থিত থাকে। দ্বিতীয়ত ভাবের সংযম ও গভীরতা সনেটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলেও ভাবের সংযম ও গভীরতা একেবারেই পরিলক্ষিত হয় না গীতিকবিতায়। তৃতীয়ত গীতিকবিতার আয়তন তথা আকার স্বল্প হলেও নির্দিষ্ট কোনো আকারে থাকে না, কিন্তু সনেটে নির্দিষ্ট আকার থাকে। সনেটে থাকে চৌদ্দটি পঙক্তি ও প্রতি পঙক্তিতে চৌদ্দ মাত্রা।

এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কিন্তু সনেটের এই কঠিন বন্ধন গীতিকাব্যের ভাব প্রকাশের পরিপন্থী হয়ে ওঠেনি। খ্যাতিমান কবিগণ তাদের ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতির প্রকাশের জন্য সনেটের রূকল্প সার্থক বহুক্ষেত্রেই গ্রহণ করেছেন ও সফলও হয়েছেন একথা বলাই বাহুল্য।